Alapon

কুরআনের তাফসির শেষ করার সহজ উপায়...


অফিসে যাবার সময় গাড়ীতে বসেই দীর্ঘ পাঁচ বছরে পবিত্র কোরআনের তাফসির শেষ করেছি! আলহামদুল্লিল্লাহ! এটা আমার দ্বিতীয় বারের সফলতা যদিও ব্যাপারটি নিতান্ত ব্যক্তিগত, তদুপরি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা জানালে আমার মত অন্য কারো হয়ত উপকার হবে। কখনও দৈনিক তিন আয়াতের বেশী পড়িনি। সুরা নূরের আয়াতের ব্যাখ্যাগুলো অনেক লম্বা। সেক্ষেত্রে একটি আয়াতের ব্যাখ্যা পড়তেও আবার কয়েকদিন লেগে গেছে। কৌতূহলী আয়াত গুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন তফসিরের পাতা উল্টাতে হয়েছে। পবিত্র কোরআনের শেষ দিকের কিছু সুরার আয়াত গুলো ছোট, সেগুলো তিন আয়াতের বেশী পড়েছি। যেহেতু গাড়ীতেই পড়তাম তাই শুক্রবার এবং অফিস ছুটির দিনে কখনও পড়া হয়নি। এভাবে পবিত্র কোরআনের পুরো বিস্তারিত তাফসির পড়তে আমার অতিরিক্ত কোন সময় ব্যয় করতে হয়নি। যে সময়টা ঘুমের জন্যও উপকারী নয়, বিশ্রামের জন্যও নয়। অধিকন্তু সকালের সতেজ মনে গাড়িতে বসেই শেষ হয়েছে। যখন আমার পাশের ব্যক্তিরা কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনত!

তাফসির অনুধাবনে শতভাগ সার্থকতা ও বিপুল মজা পাওয়া যায় যদি আগে থেকেই রাসুল (সা) সীরাত তথা জীবনী সম্পর্কে অবগত থাকা যায়। তাহলে কোরআনের আয়াত পড়ার সাথে সাথেই সেই সময়কার চিত্র নিজের মানস-পটে ভেসে উঠবে। মনের ছবিতে তদানীন্তন আরবের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সীরাত গ্রন্থ আগেই শেষ করেছিলাম। এই জ্ঞান আমাকে অনেক উপকৃত করেছে। ইতিহাসের এই জ্ঞান, পবিত্র কোরআনের মৌলিক ধারণা অর্জনে দারুণ সুফল পাওয়া যায়, এমন কি এই উপমা হাদিস বুঝার ক্ষেত্রেও সমাজ প্রযোজ্য। কারো কোন ব্যাখা ছাড়াই নিজে নিজে বুঝা যায়। পুরো পবিত্র কোরআন পাঠ ও হাজার হাজার হাদিস পড়ার পরে এগুলো মনে থাকেনা। মনে রাখা সম্ভবও নয়। কিন্তু কেউ যদি কোন প্রশ্ন করে, তাহলে সেকেন্ডের কম সময়েই সে সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত কিংবা হাদিসের উৎস সাথে সাথেই মনে পড়ে যায়। আমি যখন কোন বিষয় নিয়ে লিখতে বসি, তখন সে বিষয় সম্পর্কিত আয়াত গুলো মাথায় ঘিজ ঘিজ করতে থাকে, যদিও কিছুক্ষণ আগেও তা নিয়ে ভাবিনি! মূলত এটাই কোরআনের অন্যতম মোজেজা, যা মহা পবিত্র আল্লাহ সোবহান-ওয়া-তায়ালা সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য দিয়েছেন। এই চিত্র আমি বহু মানুষের ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে দেখেছি। মানুষ ভুলে গেলেও কোরআন মানুষকে মনে করিয়ে দেয়। কখনও বিষয়বস্তু মনে থাকলেও কদাচিৎ হাদিসের নম্বর ও লোকেশন কিংবা কোরআনের আয়াতের উৎস খোঁজ করতে গিয়ে কখনও বেগ পেতে হয়েছে।

নবম শ্রেণীতে উঠা আমার ছেলেকে টার্গেট দিয়েছিলাম কোরআনের তাফসির শেষ করতে। আমি এবং সে একসাথে তাফসির পড়া শুরু করি। প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও, তার মায়ের আন্তরিক চেষ্টায় সে চার বছরে সেটি সম্পন্ন করতে পারে। আমার আরো এক বছর বেশী লাগে। সপ্তাহের কয়েক রাতে সুযোগ মত, তার সাথে একই বিষয়ে আলোচনা করতাম। তার সাথে মিলিয়ে দেখি কে কতটুকু বুঝেছে। তার বুঝা ও আমার বুঝায় ভিন্নতা ছিল। এক সময় তার কাছে ব্যাপারটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। কারণ সে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় তাফসির পড়ত। অনলাইনের ইংরেজি তাফসিরে কোরআনের আয়াতের সাথে ব্যাখা হিসেবে বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ইহুদী-খৃষ্ট ধর্মের বহু লিঙ্ক থাকত। সেগুলো সে পড়ে আসত, অন্যতায় নেট থেকে সার্চ করে হলেও জানার চেষ্টা করত। এটা এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। আমার মত স্রোতা পেয়ে সে আনন্দ পেত, আমিও ব্যতিক্রম ধর্মী তথ্য পেয়ে নিজের তথ্য ভাণ্ডারকে স্বাস্থ্যবান করার সুযোগ করে নিতাম। আমার ম্যাডাম বলতেন, আমি এত কথা মনে রাখি কিভাবে? লম্বা উত্তর না দিয়ে তাকেও কোরআন হাদিস সহ বিভিন্ন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে দেই। এখন সে আমার ভুল গুলো শুধরে দিতে পারে। প্রশ্ন করি এটা তুমি কিভাবে জান? সোজা সাপ্টা উত্তর কোরআনের ঐ জায়গায় কিংবা হাদিসের ঐ স্থানে তার উত্তর রয়েছে। এভাবেই আরবের পাষাণ হৃদয়, মূর্খতায় আচ্ছন্ন, গোঁয়ার্তুমি চরিত্রের মানুষ গুলোকেই এই কোরআন সবাইকে সোনার মানুষে পরিণত করে!

তাই আসুন সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোরআন-হাদিস পড়ি। এটাতে নিজের জ্ঞান ও অন্তঃ-চক্ষু খুলে যায়, আল্লাহর রহম আসতে থাকে। তিন আয়াত করে সপ্তাহের পাঁচ দিনে পড়ে পাঁচ বছরেই আমি কোরআন পড়া শেষ করেছি। এবং তা বিস্তারিত ভাবেই। এতটুকু সময় সব মানুষেরাই পায়। ইচ্ছা করলেই এই কাজটি সবাই করতে পারে। আল্লাহ যেদিন প্রশ্ন করবেন, দুনিয়াতে চিনার জন্য বিশ বছর ধরে পড়েছ আবার প্রতিদিন ব্যস্ত থেকেছ কিন্তু আমার নেয়ামত সমূহ চিনা ও জানার জন্য তো এত পড়ার দরকার ছিলনা! কিন্তু তোমরা কখনও পড়নি! প্রকৃতই তোমাদের কোন আগ্রহ ছিলনা। সেদিন বান্দার প্রতি আল্লাহর এই অনাগ্রহ সবাইকে আগুনে ঢুকিয়ে ছাড়বে, কেউ মুক্তি পাবে না। তাই আসুন আজই কাজে নেমে পড়ি, জীবনের সময় খুবই সংক্ষিপ্ত ও সংকীর্ণ।

Nazrul Islam Tipu

পঠিত : ৪৩০ বার

মন্তব্য: ০