Alapon

কীভাবে ধনী হবেন...?


আচ্ছা, বলুনতো ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন কে না দেখে ?

হয়তো আমি ছাড়া সকলেই দেখে, সবাই চায় নিজের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়তে—ছোট্ট এই জীবনটাকে আনন্দময় করে তুলতে ৷

আমি বলি, যার ভবিষ্যৎ আঁধার -গভীর অন্ধকারে ঢাকা — তার জীবনে আলো নেই—পথ চলতেই সাপে কামড়াবে— আঁধারে সাপটাকে দেখবেনা সে— শুধুই চিৎকার করে মারা যাবে— বিষাক্ত বিষে দেহটা নীল হয়ে যাবে ৷ শুনেন, দেখেছেন কখনো ? ঋণগ্রস্ত বিপদগ্রস্ত মানুষের হাহাজারি ৷ টাকা নেই বলে তাদের কতো চিৎকার ও কান্না ৷ তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন ? টাকার কী দাম !
দু মিনিট না খেয়ে থাকা ছোট ছোট শিশুদের পেটে তাকিয়ে দেখবেন— মনে হবে, ওদের দেহে বুঝি পেট নেই ৷ আহ, কিভাবে মিশে গেছে পিঠের সাথে ৷ ঋণগ্রস্ত কোনো লোকের কান্না দেখেছেন ?

————————————————

আঁধারে কি পথ চলা যায় ? অন্ধকারে চোখের সুখ পাওয়া যায় ?

তাহলে তুমি কেনো আঁধারে থাকবে ? কেনোইবা নিজ ভবিষ্যৎ অন্ধকার রাখবে ?

তুমি মানুষ -হাত, পা, বুদ্ধি সবই আছে — কী নেই আমাদের ?

আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে আজ অনেক এগিয়ে গেছে — উন্নতির শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ৷

মানুষ চলে এসেছে — পাথর থেকে এ্যাটমের যুগে — গরুরগাড়ি থেকে উড়োজাহাজ বরং রকেটের যুগে — মোমবাতি থেকে বিজলি বাতির বর্তমানে ৷ বৈদ্যুতিক আলো দিয়ে মানুষ আজ রাতকে দিন বানিয়ে ফেলেছে ৷ রাতে বের হলে মনে হয়,যেনো আমি দিনের আলোতেই হাটছি ৷ সূর্যটা ডুবে গেলেও যেনো তার আলোটা রেখে যায়— রাতেও সে আলো ছড়ায়— বিদ্যুতের আলোতে রাতটা উজ্জল দিন হয়ে যায় ৷

আশ্চর্য ! যে মানুষ গভীর রাতটাকে উজ্বল আলোতে ভরে দিয়েছে— সে কেনো নিজ জীবনে আলো জ্বালতে পারবেনা ৷

কেনো নিজ জীবনের ভবিষ্যতটা আলোকিত করতে চায়না ? কেনো ? কেনো ? কেনো সে পারবেনা ?

আসলে ভবিষ্যতটা উজ্বল করা খুবি জরুরী বিষয়— অনেক প্রশংসার দাবী রাখে ৷

কেমন জরুরী ?

কথা বলার জন্য দু ঠোঁট যেমন জরুরী ৷

কেমন প্রশংসার দাবী রাখে ?

কারো জীবন বাঁচিয়ে দিলে প্রশংসার বাণী যেভাবে কানে বাজে ৷

হ্যাঁ, ভবিষ্যতটা উজ্বল করতে হবে ৷ কেমন উজ্বল হবে ?

তার আলোতে গভীর অমাবস্যা কেটে যাবে— গভীর রাতটা হয়ে যাবে রোদেলা দুপুর ৷

তুমি কি চাওনা— ভবিষ্যতটা উজ্বল হয়ে যাক, জীবনটা আনন্দে ভরে যাক ? তাহলে মুষ্টিবদ্ধ করো দু হাত ৷

——————————————————
ধর্ম কী বলে ?

উজ্বল ভবিষৎ গড়তে ধর্মে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে ৷

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

আর যখন নামায শেষ হবে— তখন তোমরা ভূখন্ডে ছড়িয়ে পড়ো— আল্লাহর দেয়া সম্পদ অর্জনে লেগে যাও ৷ " ( سورة الجمعة)

আল্লাহ তায়ালা নিজেই আমাদেরকে সম্পদ অর্জনের কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছেন ! এমনকি দুনিয়ার সব তো আমাদের জন্যই ৷
আল্লাহ বলেন,

আর তিনি দুনিয়ার সবকিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন ৷ "

* সূরা জাছিয়ার 12 নং আয়াতে সমুদ্রের আলোচনায় আল্লাহ বলেন, "

" আর তোমরা যেন সমুদ্রের সম্পদ খোঁজ করো "৷

জানেনতো ? সমুদ্রে কিন্তু অনেক মূল্যবান জিনিস থাকে ৷ আল্লাহ শিখাচ্ছেন, খোঁজ করতে ৷

কানযুল উম্মাল কিতাবে, রাসূল সা.বলেন , اطلبوا الرزق في خبايا الارض.

উম্মত, তোমরা মাটির নিচের খনিজসম্পদ বা খনি তালাশ করো ৷

এভাবেই আল্লাহ ও তার রাসূল সা. আমাদেরকে সম্পদের স্থান বলে দিচ্ছেন , সম্পদ অর্জনে উৎসাহ দিচ্ছেন ৷

যদি ধর্মে অনেক সম্পদ অর্জন নিষেধ থাকতো— তাহলে যাকাত দেয়ার জন্য ধর্ম কাকে বলবে ?

স্বাভাবিক জীবন— যাপনের পর বিশাল সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয় ৷ তাহলে ধর্ম যদি ধনী হতে নিষেধ করে— তাহলে যাকাত দিবে কে ?

রাসূল সা.এর যুগে অনেক সাহাবী বিশাল সম্পদের অধিকারী ছিলেন ৷ উসমান রা.যার নামের সাথে "গনী "বলা হয় মানে ধনী বলা হয় ৷ আ.রহমান ইবনে আউফ রা.কতো বড় ধনী ছিলেন ৷

রেশমি কাপড় চিনেন ? কেমন দামী ? খলিফাদের যুগে এই রেশমি কাপড় দিয়ে আবু হুরাইরা রা. নাকের ময়লা পরিষ্কার করতেন ৷ দেখেন, নাকের ময়লা রেশমি কাপড় দিয়ে (তিরমিযী শরীফ)

★ বুঝেন ? ইসলাম যদি ধনী হতে নিষেধ করতো তাহলে দান, সদকা, ফেৎরা আর যাকাতের জন্য কাকে ধমক দিতো ? বলেন ৷

আমরা যে দোয়াটি পড়ি— কোরআনে আছে—

ربنا آتنا في الدنيا حسنة ...রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া....এর অর্থ :: হে আমাদের রব, আপনি আমাদের দুনিয়ার জীবনকে উজ্বল করে দিন ৷ দেখেন, উজ্বল জীবন মানেই উজ্বল ভবিষ্যৎ ৷ আল্লাহ নিজে শিখাচ্ছেন,
উজ্বল ভবিষ্যতের দোয়া করতে ৷

হালাল সম্পদকে কোরআন, হাদিসের সব জায়গায় خير খায়রুন) সর্বোত্তম জিনিস বলা হয়েছে ৷

ভুলে গেলে চলবেনা, সওয়াবের এই বিশাল অংশ কিন্তু নিজ সম্পদকে ঘিরেই ৷
——————————————————
দুনিয়া কী বলে ?

ভবিষ্যৎ উজ্বল হলে দুনিয়া তাকে বাহবাহ দিবেই দিবে ৷ চিন্তা করে দেখো, তোমার এক কোম্পানি দিয়ে হাজার মানুষের পেটে ভাত যাবে ৷ তোমার এক প্রতিষ্ঠান দিয়ে শত শত ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে যাবে ৷ তোমার অনুগ্রহের হাত দুঃখী মানুষের দুঃখ ঘোচাবে ৷ তোমার টাকায় গড়ে উঠবে সুউচ্চ মিনার— তা থেকে ছড়িয়ে পড়বে "আল্লাহু আকবার " সুমধুর ধ্বনি দূর দূরান্তে ৷

হ্যাঁ, হ্যাঁ তুমিই হাসি ফোটাবে ছোট্ট শিশুর মুখে— চামড়া কুচকে যাওয়া বৃদ্ধের দু ঠোঁটে
মানুষ বলবে, তোমার জীবন—সবার হাসি— সবার জীবন ৷ তোমার মৃত্যু— সবার কান্না— সবার মরণ ৷

তুমি কি চাওনা এরকম হতে ? উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে ?
————————————

কিভাবে ?

যে কোনো হালাল পেশা গ্রহন করা যেতে পারে ৷ কিন্তু কোরআন, হাদিসে সবচে বেশি ব্যবসার কথা বলা হয়েছে ৷ রাসূল সা.নিজেও ব্যবসা করেছেন ৷ আবু বকর ও উমর, উসমানসহ رضوان الله عليهم অনেকেই ৷

রাসূল সা. একজন সঠিক ব্যবসায়ী পরকালে সুউচ্চ জান্নাতে নবি-রাসূল ও শহীদদের সাথে থাকবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ৷

কী ব্যবসা ?

আপনি যদি আমেরিকা যেতে চান আর আপনার সামনে— বাস, ট্রেন, বিমান, রকেট এ চারটি অপশন থাকে — আর এর প্রত্যেকটিতে চড়ার সামর্থও আপনার থাকে ৷ তাহলে কোনটি গ্রহন করবেন ?

নিশ্চয় রকেট কারণ তা সবচে দ্রুত গতির ৷ ঠিক এমন ব্যবসা করতে হবে যাতে হালাল পন্থায় সবচে দ্রত লাভ আসে ৷
আমি সঠিক জানিনা ৷ তবে
কানযুল উম্মাল কিতাবে আছে,

রাসূল সা.মানুষকে কাপড়ের ব্যবসা করতে উপদেশ দিতেন

(সূত্র: اسلام اور جدت پسندی)

মনে রাখবেন, চলার পথে কিছু ব্যর্থতা আসবেই ৷ সেজন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে ৷ ভেঙে পড়লে চলবেনা ৷ বড় আশা কিংবা বিলাসিতার চিন্তায় শুয়ে বুদ থাকা যাবেনা ৷ বরং সব আল্লাহর উপর বিশ্বাস ৷

এজন্যই আমি বলি " পানি খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবো ৷ এর মানে আমি ভবিষ্যৎ উজ্বল হোক— এর বিপক্ষে নই বরং এই ভাবনা হলো মানসিক প্রস্তুতি ৷ যেনো কখনো ভেঙে না পড়ি ৷ কেউ বলতে পারবে ? তার জীবনে কোনো ব্যর্থতা আসবেনা ৷ অবশ্যই আসবে— তাহলে কি একটু সতর্ক থাকা ভালো নয় ? পরিশেষে বলি, যারা উজ্বল ভবিষ্যতের চিন্তা করেনা তাদের নিন্দা করে ইসলাম ৷ রাসূলুল্লাহ صلي الله عليه و سلم বলেন,

" তুমি মারা যাবে আর তোমার সন্তানেরা মানুষের কাছে হাতে পেতে খাবে— এরচে উত্তম হলো তুমি তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ঠ সম্পদ রেখে যাবে ৷

(দেখুন, বুখারি শরীফ, হাদিস নং, ৫৬৬৮,২৭৪৪, ৬৩৭৩, ৫৬৫৯, মুসলিম, ১৬২৯, সহীহ ইবনে মাজাহ,২২০৮, সহীহুল জামে,
৩০৮২, ৩০৮১, ৩০৮০ )

এই ভাই , তোমার কি লজ্জা নেই ? সবাই কতো সামনে আর তুমি এখনো পেছনে ?
© M K L

পঠিত : ৬২০ বার

মন্তব্য: ০