Alapon

ওয়াজে বক্তাদের বক্তৃতা বিতর্ক ও প্রদত্ত ব্যাখ্যার অসারতা...


বক্তারা খোঁচা দিয়ে ভক্তকুল ও নিন্দুককুল কে উষ্কে দিয়ে পরে বলছেন- "আমি তো এইটা বুঝাইতে চাই নাই"। তাইলে কি তারা বুঝাইতে চাইতেছেন যে, দুনিয়ার বুকে মাতৃভাষাটা একমাত্র তারাই বুঝেন, অন্য কেউ বুঝেন না! ভক্তকুল ও নিন্দুককুল- উভয় কুলকে বলদ ভেবে বক্তারা নিজের কথাটা ঠিকই রাখেন। এইটা থেকে আমি এইটা বুঝতে পারি যে, বক্তারা শ্রোতা-দর্শকদের মূর্খ, আবাল এবং ভোদাই মনে করেন।

বক্তাদের "আমি এটা বুঝাইতে চাই নাই" টাইপের প্রত্যেকটা ব্যাখ্যা চরম ভাবে পরিত্যাজ্য। নাম ধরে ধরে বলতে হবে এবং এতে ফিতনা আরও বাড়বে। তাই আমি আপাতত নাম ধরে এবং তাঁদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা ধরে ধরে কিছু বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু খুব নিরপেক্ষ ভাবে যদি বিচার করেন তাহলে দেখবেন- সম্প্রতি বিতর্কের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট আলেমদের দেয়া প্রায় প্রতিটা ব্যাখ্যা মিথ্যার রিভার্স টুইস্ট ছাড়া আর কিছুই না।

এগুলো বন্ধ হওয়ার উপায় একটাই- Stop poking each other. খোঁচাখুচিটা খুব দ্রুত বন্ধ করা জরুরী। মতের অমিলের কারণে মানুষের ঈমান আকিদা নিয়া টান দেয়া বন্ধ করেন। দুনিয়াতে সকল চুলকানির ঔষধ আছে। কিন্তু প্রশ্ন হল- আপনি ঔষধ ব্যবহার করতে ইচ্ছুক কি না। উলামাদের পারস্পরিক চুলকানিরও ঔষধ আছে, কিন্তু উনারা ঔষধ ব্যাবহারে ইচ্ছুক নন। আমরা শতাব্দিকাল ধইরা উলামাদের এইসব বুলশিটের ভার বহন করে আসতেছি। এর পরেও আমরা তাঁদেরকে সম্মানের উচ্চ স্থানে রাখি। উলামারা আজ পর্যন্ত আমাদের "অমুক গোমরাহ" "তমুক ভ্রান্ত" এইসব ঘৃণাবাদি ও প্রান্তিক বয়ান বাদ দিয়ে "অমুক ভিন্ন মত দিয়েছেন" "তমুকের ইজতিহাদে ভিন্ন সিদ্ধান্ত এসেছে" এই ধরণের চুলকানি মুক্ত বয়ান দিতে পারেন নাই। কারণ তারা চুলকানি খুব ভালোবাসেন। উলামাদের বুঝা উচিৎ, উনাদের এই চুলকানি সংস্কৃতি উম্মতে মোহাম্মদিকে কোনও ইতিবাচক কিছুই দিতে পারে নাই। এসবের দ্বারা একদল অন্ধ এ বিবেকহীন ভক্তকুল ও নিন্দুককুলের বাইরে মুসলমানদের আর কোনও অর্জন নেই।

হুজুরদের জনপ্রিয়তার প্রতিযোগীতাকে কতটা বিশ্রী লাগে, কতোটা ঘৃণিত এই ব্যাপার- সেটা যদি উনাদের বুঝানো যেত। আফসোস, এটা বুঝানো দায় হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি নিজের মহত্ব, বড়ত্ব ও কামেল-দরবেশী প্রমানের জন্য আত্মপ্রশংসা একটা চরম পর্যায়ের ঘৃণিত কাজ। আর নিজের ওয়েট বৃদ্ধির জন্য যখন ওবামা, ট্রাম্প, বিল-গেটস... ইত্যাদি লোকদের সাক্ষাৎ কিংবা তাঁদের সরাসরি দেখা অথবা তাঁদের লেকচারে অংশগ্রহণ করা দিয়ে অথবা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও না যাওয়ার মাধ্যমে জাহির করার গল্প মানুষকে শোনাতে হয় তাহলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে। যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (স) দিদারের কাঙ্গাল সে জাতি আজ এইসব সেক্যুলার-অমুসলিমদের সাক্ষাৎ দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে মহত্ব দিতে চায়। কি লজ্জার বিষয়!

দাওয়াতের কাজের জন্য মহত্বের দরকার হয় না। দাওয়াতের কাজের জন্য খুব বেশি ইলমেরও দরকার হয় না। যে যতটুকু সহিহ জ্ঞান রাখে ততটুকুই যদি অন্যকে বলে দেয় তাহলেই দাওয়াতের কাজ হয়ে যায়। ফলে বেশি জানার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এতে দুইটা ক্ষতি হয়- (এক) দা'য়ীর দাওয়াতি কাজের সুন্দর এই ইবাদতে 'রিয়া' চলে আসে। ইসলামে এটা হারাম, এটা সকল আমল কে ধ্বংস করে দেয়। (দুই) যে আলোচনা জনসাধারণের জন্য নয়, যে আলোচনা একাডেমিক এবং উলামাদের জন্য খাস- সে আলোচনা জনসাধারণের মধ্যে চলে আসে। যেহেতু সেখানে গন্ড মূর্খ থেকে এমন শিক্ষিত লোক থাকে যাদের ইসলাম সম্পর্কিত একাডেমিক জ্ঞান নাই, সেহেতু ব্যাপক ভাবে ত্রুটিপূর্ন বার্তা ছড়িয়ে পড়ে, অযথা ফিতনা, ফাসাদ ও বিভাজন ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ওয়াজের মতো একটি সুন্দর সুশৃংখ্যল দাওয়াতি কাজগুলো ইসলাম ধ্বংসের কাজে পরিণত হয়।

সুতরাং, সময় থাকতে আলেম-উলামাগন, ভক্তকুল ও নিন্দুককুল- সবাইকে এ ব্যাপার গুলো নিয়ে ব্যাপক ভাবে ভাবা ও যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরী।

Jabal At Tariq

পঠিত : ৫৯২ বার

মন্তব্য: ০