Alapon

আমরা যেন ফকির মজনু শাহ বা মীর নিসার আলী তিতুমীরকে কখনো ভুলে না যাই...


অনেকেই আসবে যাবে, কিন্তু আমরা যেন ফকির মজনু শাহ বা সাইয়েদ মীর নিসার আলী তিতুমীরকে কখনো ভুলে না যাই।

গতকাল খুব সম্ভবত ফকির মজনু শাহের ইন্তেকাল বার্ষিকী ছিল, আর আজ ছিল তিতুমীরের জন্মদিন।

ফকির মজনু শাহ ক্লাসিক্যাল প্রিমডার্ন ইসলামী মুজাহিদ সুফীদের সিলসিলার শেষদিকের মানুষ, আর সুবে বাঙ্গালাহর এন্টি কলোনিয়াল সংগ্রামের দীর্ঘ সিলসিলার প্রথম মুজাহিদ, প্রথম মুক্তিযোদ্ধা।
আফসোসের বিষয়, এই মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের স্কুল কলেজের পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করা হয় বিদ্রোহ হিসেবে। বলা হয় ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নাকি দেশপ্রেমে তেমন একটা উজ্জীবিত ছিল না, ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের লক্ষ্য নাকি ছিল লুটপাট করা।

অথচ এই ইতিহাস বর্ণবাদী, ঘৃণ্য শোষক জমিদার শ্রেণীদের ন্যারেটিভকে প্রচার করে কলোনিয়াল ব্রিটিশ শাসনকে বৈধতা দেয়া ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না।
ফকিরদের প্রতিরোধ সংগ্রাম দুনিয়ার বুকে আর দশটা জায়গায় সুফী মুজাহিদদের গড়ে তোলা এন্টি কলোনিয়াল মুক্তিসংগ্রামেরই বাংলাদেশী
ভার্সন ছিল।
সেসময় বাঙ্গালাহ যতটা না ব্রিটিশরা শাসন করতো তারচেয়ে বেশি করতো জমিদাররা।সেদিন কথায় কথায় বলছিলাম, কোলকাতা শহরের প্রতিটা ইটের মধ্যে বাঙ্গালাহর গরিব মানুষের রক্তের দাগ আছে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে প্রতিটা প্রজাকে জমিদাররা শোষন করেছে, সেই পয়সা পাই পাই করে পাচার করে তারা কোলকাটা গড়েছে।
ব্রিটিশদের মদদে এই হরিলুটে বাধা দেয়া, প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রথম অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালানো বীর ফকির মজনু শাহকে আমাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইতে কেন দস্যু হিসেবে দেখানো হয় বলতে পারেন??
আমরা যা আমাদের ইতিহাস বলে জানি, তা কি আমরা আমাদের জবানীতে লিখি??
নাকি আরেকজনের জবানকে নিজের জবান ভেবে কপি পেস্ট বুদ্ধিজীবীতার নষ্টামি চালাতে গিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী উৎপাদনের সিলসিলা জারি রেখে যাই??

তিতুমীরের ব্যাপারটা আবার একটু আলাদা।
শহীদ তিতুমীরের চেয়ে শত বা হাজারগুন বেশি মিডিয়া কাভারেজ বাংলাদেশে দেয়া হয় মাস্টারদা খ্যাত সূর্যসেন এবং ক্ষুদিরামকে। অথচ এরা দুজনেই রাজনৈতিক আদর্শ,লক্ষ্য ও কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের স্বার্থবিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত ছিলেন।
সেদিকে আর না যাই।

তিতুমীরকে ধারন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুসলমানদের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মত।
সাইয়েদ মীর নিসার আলী তিতুমীর, হাজী শরীয়ত উল্লাহ বা দুদু মিয়াদের কেউই কেবল মুসলমানদের প্রতিনিধি ছিলেন না, তারা ছিলেন ব্রিটিশ-জমিদার শোষনের ফলে ভিখারীতে পরিণত হওয়া বাংলার কৃষক সমাজের প্রতিরোধের বুলন্দ আওয়াজের তীব্রতম স্বর।এই কৃষকদের মধ্যে শুধু মুসলিম নন বরঞ্চ সাধারন হিন্দুরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তারাও জমিদারদের নির্যাতনের শিকার হতেন।

তিতুমীর বা দুদু মিয়ার আন্দোলনকে একচেটিয়া মুসলমানের আন্দোলন হিসেবে দেখিয়ে হিন্দু-মুসলিম আস ভার্সেস দেম তৈরির যে বঙ্কিমীয় রাজনীতি নির্মানের ধ্রুপদী কোলকাতাইয়া ফাঁদ, বাংলাদেশের মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ বুঝে বা না বুঝে সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের যে নিম্নবর্ণের হিন্দু, যাদের সাথে আসলে মুসলিমদের বড় ধরনের কোন বিরোধ নাই, তাদের অপরে পরিনত করে ফেলেন।

তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ বা দুদু মিয়ারা এই মাটির বীর।
তারা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের চুড়ান্ত নিশান, জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের চিরন্তন লড়াইয়ের অক্ষয় সিপাহসালার।

Muhammad Sajal

পঠিত : ৬২৫ বার

মন্তব্য: ০