Alapon

আলিম-উলামা বিদ্বেষ ও জামাতিগণ!


কিছু লোকেরা অপবাদ দেয় যে জামাতিগণ উলামা-বিদ্বেষী। আমার ফেইসবুক বন্ধুদের কেউ কেউও এমন বলেছেন। কিন্তু জামাত-শিবিরকে আমার যতটুকু জানা আছে ততটুকুতে আমি কখনো তাদেরকে উলামা বিদ্বেষী হিসাবে দেখতে পাই নি। জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী হবার সুযোগ কখনো আমার হয় নি; কারণ ছাত্র থাকা অবস্থায়ই আমি দেশ ছেড়েছি। কিন্তু ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী থাকা কালে জামাত নেতাদের যতটুকু সংস্পর্শ আমি পেয়েছিলাম তাতে আমরা কখনো তাঁদেরকে উলামা-বিদ্বেষী কোন কিছু করতে দেখি নি।

জামাতের নিজেদেরইতো কত উলামা ছিলেন। শিক্ষা বৈঠক ও শিক্ষা শিবিরগুলোতে আমরা তাঁদের কাছ থেকেই কুরআন হাদীস এর দরস শুনেছি। এঁদের অনেকেই ছিলেন উপমহাদেশের ট্র্যাডিশনাল ধারায় শিক্ষাপ্রাপ্ত। তার মানে তাঁরাও দেওবন্দী ধারা থেকে উঠে আসা আলিম। কেউ কেউ ছিলেন আহলে হাদীসের। জামাত যা করে তা হল কোন একটা বিশেষ ফিকহী ধারাকে প্রাধান্য না দেয়া। জামাতে ইসলামী ছিল উদার ইসলামী সংগঠন। এর শুরু থেকেই এর সাথে দেওবন্দী ও আহলে হাদীস আলিমরা জড়িত ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

বিদ্বেষ যা হয় তা আসলে আসে জামাত বিরোধীদের কাছ থেকে। মাওলানা #মওদূদী (রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা) নিজেই অহেতুক বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। এরপরও তিনি কোন আলিম উলামার প্রতি কোন বিদ্বেষামূলক বক্তব্য দেন নি। সাংঘাতিক অপবাদের শিকার হবার পরও তিনি ধৈর্য ধরেছেন। শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড মনোকষ্টে জর্জরিত হয়ে তিনি নিচের কথাগুলো লিখেছিলেন, “যাঁরা এ ধরনের সন্দেহ পোষণ করে মানুষকে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত থেকে দুরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, আমি তাদেরকে এমন একটি ভয়াবহ শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত করেছি যে, তা থেকে তারা কোনক্রমেই নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে না। সে শাস্তি হলো এই যে, ইনশা’আল্লাহ আমি সব রকমের দাবী থেকে নিজেকে নিষ্কলুষ রেখে আমার খোদার সমীপে হাযির হয়ে যাবো এবং তারপর দেখবো যে, এরা খোদার সম্মুখে নিজেদের এইসব সন্দেহ এবং এগুলো বিবৃত করে মানুষকে হকের পথে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখার স্বপক্ষে কী সাফাই পেশ করেন।”

আমরা বিভিন্ন সময়ে তবলীগ জামাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জামাত নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ভাল ছাড়া মন্দ কিছু কখনোই শুনি নি। তাঁরা, বরং, তবলীগের ইসলামী আন্দোলন হওয়াকে স্বীকার করতেন। তবে মনে করতেন তবলীগ ইসলামের পূর্নাঙ্গ প্রতিষ্ঠার দাওয়াত দেয় না, এতটুকুই। অথচ বাংলাদেশি তবলীগীরা সুযোগ পেলেই উস্তাজ় মওদূদী ও জামাত বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করে। খোদ এই নিউইয়র্কেই তারা মসজিদে বসে বসে মওলানার বিদ্বেষ গেয়েছে যার স্বাক্ষী আমি নিজে।

আমার স্কুলের এক বাঙালী ছাত্রীকে একবার দেখলাম আরেক বাঙালী ছাত্রীর সাথে তর্কাতর্কি করছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম তাদের একজন “মিস্টার মওদূদীর নতুন ইসলাম” বই নিয়ে এসেছে এবং অন্য মেয়েটা এই কাজকে পসন্দ করে নাই। যেই মেয়েটা বইটা নিয়ে এসেছিল তার পিতা তবলীগ করেন এবং তিনি ডাক্তার। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাকে কি বইটা তোমার আব্বু দিয়েছে?” সে হ্যাঁ বোধক জবাবই দিল। আমি বইটা নিয়ে এসে পড়লাম। ভিত্তিহীন সব অভিযোগ। এর মধ্যে বিদ্বেষ ও হিংসা ছাড়া আর কিছুর প্রতিফলন নেই। এগুলো দিয়েই তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে এবং নিজেদের গুনাহের বোঝাকেও বৃদ্ধি করে চলেছে।

জামাত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা কি তবে আলিম-উলামাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না? হ্যাঁ, তারা অনেক সময়ে তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে কিছু বলে থাকেন। কিন্তু সেটা উলামা বিদ্বেষ নয়। উলামা বিদ্বেষ হল সাধারণভাবে উলামাদের প্রতি খারাপ ধারণা ও বিরূপ মনোভাব পোষণ করা। এই কাজ জামাত-শিবির করে না। তাইলে তারা যে তাদের বিরুদ্ধে বলা থাকেন সেটা কী? সেটা হল সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জামাত বিদ্বেষের প্রতিক্রিয়া মাত্র। গত কিছু দিন ধরে এই সমস্ত উলামা তকমাধারী লোকদের হিংসা ও বিদ্বেষতো আমরা দেখেই যাচ্ছি। এখন কেউ যদি এদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তা কখনোই উলামা-বিদ্বেষ নয়। এটা শুধু এই বিশেষ ব্যক্তিবর্গের বিদ্বেষের প্রতিক্রিয়া মাত্র। যাই হোক, আমি বলছি না যে এটা খুব ভাল কোন কাজ।

AbūSamīhah Sirājul-Islām

পঠিত : ৬৫৯ বার

মন্তব্য: ০