Alapon

মুসলিম জাতির হুঁশ ফিরবে কবে...?


ইউটিউব ওপেন করলেই সাজেস্টেড ভিডিও আসল। সেখানে একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘দেখুন, ওমুক মাওলানা তমুক মাওলানাকে কীভাবে বাঁশ দিল’! ভিডিও ওপেন করে দেখলাম সত্যিই হুজুরেরা ওয়াজ মাহফিলে কুরআনের তাফ‍সির করবে কি একজন আর একজনকে বলছে, ‘বাটপার! ওরে বাটপার!’

এরপর আর একটি ওয়াজের ভিডিও ওপেন করলাম সেখানেও দেখলাম, এক হুজুর আর এক হুজুরের গোষ্ঠি উদ্ধার করতেছে।

হুজুরদের এই গোষ্ঠি উদ্ধার করার প্রবনতা দেখে আমার সেই বাগদাদের কথা মনে পড়ে গেল। যেখানে একদিকে গোটা মুসলিম বিশ্ব মঙ্গলদের গোড়ার নিচে পদদলিত ও লাঞ্চিত হচ্ছিল তখন, একদল আলেম-ওলামা জাতিকে জিহাদের জন্য উজ্জেবিত করতে কি, তারা বাহাসে লিপ্ত ছিল। একদল আর একদলকে বাতিল প্রমাণ করার জন্য তৎপর ছিল। কিন্তু অন্যদিকে তাদের দিকে যে মৃত্যু ধেয়ে আসছে- সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না।

আজকের আলেমদের অবস্থাও হয়েছে তা-ই। আমাদের সমাজে সমস্যার অন্ত নেই। আমাদের যুব প্রজন্মের নৈতিকতার লেশ মাত্র নেই। আমাদের কিশোররা এখন মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এখনকার ৮০ শতাংশ কিশোররাই পর্নগ্রাফিতে আসক্ত। বর্তমানে ডিভোর্সের সংখ্যা মহামারি আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপরোক্ত সমস্যাগুলো যে নৈতিকতার দুর্বলতার কারণে হচ্ছে- এ বিষয়ে প্রত্যেকেই জানে। আর নৈতিকতা বিল্ডআপে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও সহজবোধ্য করে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

অতি সম্প্রতি পশ্চিম জার্মানির কয়েকটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ, কিশোররা দ্রুতই নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছে। আর নৈতিকতা জাগরণে ইসলাম যে সবচেয়ে কার্যকরি তা বিধর্মীদের দেশ জার্মানিও জানে। আমরাও জানি কিন্তু মানি না।

আমাদের আলেম-ওলামারা কিশোর, যুবক এবং নারীদের নসিহত করবে কি- অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, কুরআন হাদিস থেকে এখন তাদেরকেই নসিহত করতে হচ্ছে। এক একজন আলেম ওলামা ওয়াজ মাহফিলের মাইক পেলে যে কোন বনে যান- আল্লাহই ভালো জানেন। তারা উপরোক্ত সমস্যা নিয়ে কথা ব্যতিরেখে কোন আলেমের কী সমস্যা এসব বলতেই বেশি আগ্রহ বোধ করেন।

এরূপ অপ্রয়োজনীয় বাহাসে লিপ্ত থাকার কারণে যেমন বাগদাদ নগরীকে মঙ্গলদের ঘোড়ার নিচে পদদলিত হতে হয়েছিল, ফোরাত নদী দারুল হিকমাহর বইয়ের কালিতে কালো হয়ে গিয়েছিল- আমরাও হয়তো সেভাবেই লাঞ্জিত হতে যাচ্ছি।

যেখানে পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র ভারতে মুসলিম বিরোধী আইন পাশ করা হচ্ছে, কাশ্মীরের মুসলিমরা কোন অবস্থায় আছে বিশ্ব জানেই না, সিরিয়ায় প্রতিদিন মুসলিমরা নিহত হচ্ছে, লিবিয়া, ইরাক, ইরান আক্রান্ত হচ্ছে, ফিলিস্তিনকে নতুনভাবে ধ্বংসের রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে সেখানে আমাদের আলেম-ওলামারা একজন আরেকজনের পিছনে বাঁশ দিতে ব্যস্ত। এই জাতির পিছনে দূর্ভোগ নেমে আসাটাই উচিত। এবং হয়েছেও তা-ই। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জাতির নাম মুসলিম জাতি। কিন্তু তারপরও কি আমাদের হুঁশ ফিরেছে?

পঠিত : ৪০০ বার

মন্তব্য: ০