Alapon

মোটাদাগে আযহারী আমাদেরকে চারটা ইমপ্যাক্ট দিয়েছেন...


এক. উনি এটা প্রমাণ করেছেন, যে গোপাল ভাঁড়ামী না করে, সুর না করে, হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে, ভদ্রচিত ভাবে, ধীরস্থির ভাবে, সুন্দর ভাবে কথা বললেই সেটা আসলে মানুষ বেশী পছন্দ করে। সেটাতেই মানুষ কনভিন্সড হয় বেশী। সুর করে , হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি এসব করার আসলে কোন দরকারই নাই। যারা করেন, তারা এগুলো অতীতের কালচার হিসেবে করেন, আর কিছু না। " মানুষ সুর করা পছন্দ করে, মানুষ এরকম গোপাল ভাঁড়ামি পছন্দ করে" -- '' তাই আমাদের করতে হয় : এই যুক্তিটি আর খাটলোনা।

দুই. তিনি এটাও প্রমান করেছেন, যে ইংরেজী কোন প্রবলেম না; বরং আপনার কথার মূল কনটেন্ট কি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। গাজাখুরী গল্প গুজব করার চেয়ে , সরাসরি হাদীস কুরআনে যা আছে, তা বললে সেটা গাজাখুরী গল্প থেকে বেশী গ্রহণযোগ্য। ''গাজাখুরী গল্প রসিয়ে না বললে ওয়াজে লোকজন শুনবেনা থাকবেনা '' -- এই যুক্তিটি ও আর থাকলোনা।

তিন. প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করলে আসলে জনসমর্থন কমে বই বাড়েনা। যারা প্রতিপক্ষের পিছে খারাপ কথা বলে, দুর্নাম করে বেড়ায়, তারা আসলে সম্মানিত লোক বলে প্রতিয়মান হয় না, এবং মানুষ তাদেরকে ফলো করেনা। মানুষ তাকেই ফলো করে, যে প্রতিপক্ষকেও সম্মান করে কথা বলে, বা সুন্দর ভাবে প্রতিপক্ষকে ডিনাই করে্।

চার. দিনের বেলায় ওয়াজ করলেও মানুষ শুনে। রাতের বেলাতেই ওয়াজ করতে হবে, না হলে মানুষ শুনবেনা -- এই যুক্তিটিও থাকলোনা্। আসলে আগেকার যুগে রাতে যাত্রাপালা-গানবাজনা হইতো, হারামের কারখানা ছিল যেগুলো। সেটাকে ওয়ায়েজিনরা এই মাহফীল দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছে, যেটা ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এখন তার আর দরকার নেই।

এ হতে শিখার আছে অনেক কিছু।
উপরের চার টা দিকেই আযহারী কিন্তু বাংলাদেশে বেশ কিছু সুন্নাতকে যিন্দা করেছেন বলেই আমার মনে হচ্ছে।

তাহলে আপনারা যারা ওয়ায়েজিন তাদের প্রতি অনুরোধ :

এক. সুর না করে, জাস্ট সুন্দর করে, ধীরস্থির ভাবে ভদ্রোচিত ভাবে ওয়াজ করুন। আলহামদুলিল্লাহ, দেখবেন যে ভাল সাড়া পাবেন।

দুই. গাজাখুরী গল্প না করে, বরং সরাসরি হাদীস এবং কুরআন থেকে রেফারেন্স দিয়ে মানুষকে ঘটনা বলুন। হাদীসে এরকম অজস্র মনিমুক্তা ছড়িয়ে আছে, সেগুলোই কিন্তু আমাদের মোটিভেট করার জন্য যথেষ্ঠ।

তিন. প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ না করে, বা 'দালাল-মুনাফিক-গরু' এসব না বলে বরং ভদ্রচিত ভাবে যুক্তি খন্ডন করুন দলীল প্রমান দ্বারা। দেখবেন যে আপনাকে মানুষ ফলো করছে্

চার. দিনের বেলায় ওয়াজ করুন। রাতের বেলায় নয়। রাতে ঘুমান। আর ওয়াজের সময় মাইকগুলো মানুষের বাসার সামনে দিবেন না। শুধু ওয়াজের জায়গায় রাখবেন। এবং খুব ভাল সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করবেন। সেই সাথে , মাইক গুলোকে অধোমুখ করে রাখবেন, পাশে দিবেন না। যার দরকার , সে মাহফিলে এসে শুনবে। বাহিরের কাউকে জোর করে শুনানোর দরকার নাই। আর মাইকের সামনে চিৎকার করে নয়, বরং আস্তে কথা বলুন।

দেখবেন , মানুষ কিভাবে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আপনার কথা শুনে। মানুষ এত ফিকহি যুক্তি তর্ক আসলে বুঝেনা। মানুষ কনভিন্সড হয় এটিকেট দ্বারা। আখলাক দ্বারা। আপনার ফিকহকে ছড়াতে চাইলে, এটা হল নিয়ম। এগুলোই আসলে সুন্নাহ।

আজ এখানেই বিদায়। ভাল থাকবেন। জাযাকাল্লাহু খইরন।

লিখেছেনঃ M. Rezaul Karim Bhuyan

পঠিত : ৬০৭ বার

মন্তব্য: ০