Alapon

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেল



গত এক তারিখ ঢাকা সিটির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে না এমনটাই ধারণা ছিলো। এর জন্য ভালো বিশ্লেষক হওয়ার দরকার পড়ে না। কারণ, সাধারণ মানুষ নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছিলো, তা নির্বাচনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করেছে। যার কারণে বড় সংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাননি। তারা জানতেন তাদের মতামত নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে না।

সাধারণত, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনসাধারণের তেমন একটা গুরুত্ব দেখা যায় না। তবে এবার সবচেয়ে খারাপ যা হলো তা হচ্ছে- ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কেও তেমন একটা ধারণা রাখেননি। আগে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের তথ্যসহ স্লিপ দিয়ে আসতেন। নির্বাচনকে প্রাণবন্ত করে রাখতেন। আমার মনে হয় না প্রার্থীরা এবার এই কাজটি করেছে। অনেকে বিভ্রান্তও হয়েছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কে কোন দলের, তা জানতেন না অনেক ভোটার।

কেন প্রার্থীরা এটা করবেন? যদি তিনি সরকার দলীয় হয়ে থাকেন তবে তিনি জানেন তিনি এমনিতেই জিতে যাবেন। তো কেন এই অযথা কষ্ট করা এবং টাকা খরচ করা। আবার যিনি বিরোধী দলীয় প্রার্থী তিনি জানেন তাকে হারিয়ে দেয়া হবে। তাই তিনি চান ভোটে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থানটুকু জানান দিতে। আর কিছু নয়। আর কিছু করে টাকা খরচ ও কষ্ট করতে কেউ রাজি নয়। মূল কথা যে খেলার ফলাফল আগেই নির্ধারিত সে খেলায় দর্শকদের যেমন আগ্রহ নেই তেমনি আগ্রহ থাকে না খেলোয়াড়দেরও। শুধু খেলার আয়োজক কমিটির একটু হাঁক-ডাক এই যা।

শুধু এটাই নয় যে মানুষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস রাখতে পারছে না বলে ভোট দিতে যাননি। প্রচারণা যেভাবে হয়েছে তাতেও তারা বিরক্ত। যেদিকেই গিয়েছেন সেদিকেই প্রচারণার অপ্রয়োজনীয়তা চোখে পরেছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে শহরের পরিবেশ উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, প্রচারণার সময় তারা যা করেছেন, তা তাদের প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীত। লেমিনেটিং করা পোস্টার এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার করে যেভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশ। এটা চলবেই। আমাদের বুঝতে হবে যে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এবং যেই নির্বাচিত হন না কেনো, তার উচিত একে বসবাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা। দুঃখের বিষয়, প্রচারণার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রার্থীরা জনসাধারণকে একটি ধারণা দিয়েছেন যে তারা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম নন।

তাছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ভোটারদের সন্দেহ ছিলো। প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। ইভিএমের কার্যকারিতা সম্পর্কেও সন্দেহ ছিলো। যথাযথ মেশিন কেনা হয়েছিলো কী না, তদারকি করার কোনো ব্যবস্থা আছে কী না ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে ইভিএম প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। নির্বাচন কমিশনও নিশ্চিত করেছে যে প্রশ্নটি কখনই যাতে মুছে না যায়। শুরু থেকেই ইভিএমের বিষয়টি যেভাবে সামনে এসেছিলো, তা মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করেছিলো। ভোটের প্রতি নিরুৎসাহিত হওয়ার এটি একটি বড় কারণ হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, আমি বলবো নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুবই অসন্তোষজনক ছিলো। এটা পরিষ্কার ছিলো যে, নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে কাজ করছে না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারেনি এবং কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যও করেছেন। প্রার্থী এবং প্রার্থীদের সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও তা তারা আমলে নেয়নি। প্রচারণার সময় সহিংসতা এবং প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনায়ও কাওকেই দায়বদ্ধ করা হয়নি।

জনগণ আশা করে নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্রভাবে কাজ করবে। তাদের কাজে ক্ষমতাসীনদের কোনো প্রভাব থাকবে না। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। প্রশাসনের উচিত তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলা এবং সব ধরণের সহায়তা দেওয়া। দুঃখের বিষয়, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং মানুষের আস্থা হারিয়েছে।

ইভিএম মেশিনের কার্যকারিতা নিয়ে মানুষের সন্দেহ আরো পোক্ত হয়েছে কারণ অনেকজন সিনিয়র সিটিজেনকে মেশিন সনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি। এর মধ্যে রয়েছেন খোদ সিইসি, কামাল হোসেন, জাফরুল্লাহসহ রয়েছেন অনেকে। ক্যামেরার সামনে এসব সারাদেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এছাড়াও বহু মানুষ তাদের নিজের ভোট দিতে সক্ষম হয়নি। আওয়ামী পোলিং এজেন্টরা হেল্প করার নামে মানুষের ভোট দিয়ে দিয়েছে। এগুলোও ভাইরাল হয়েছে।

গত কয়েকটি নির্বাচনে এই ব্যাপারটাই হয়েছে যে, মানুষ নির্বাচনের ব্যাপারে আস্থা হারিয়েছে। এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এর আগে ধ্বংস হয়েছে মুজিবের আমলে এখন আবার তার মেয়ের আমলে।

পঠিত : ১০২৬ বার

মন্তব্য: ০