Alapon

জামায়াত কেন বাহাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে না ?


কামাল উদ্দিন জাফরী (হাফি) চরমোনাইর পীরকে বাহাসের আহ্বান জানালেন এবং আশ্বস্ত করে বললেন, প্রয়োজনে পুলিশ প্রটেকশনা তিনি দেবেন, তবুও যেন ইল্লাল্লাহর জিকির নিয়ে তার সাথে যে কোন জায়গায় বসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পীর সাহেব কোন প্রতিক্রিয়া দেননি। মুলত, তিনি ও তার দল রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা মেচিউরড হয়েছেন। যে কারণে হুটহাট করে বহসের ডাক দিলেই বসে যান না। যেমনটি জামায়াতের নেতারা চরমোনাইর নেতাদের কথিত বহসের চ্যালেঞ্জ কানে নিতেন না। কেন নিতেন না এর কারণ নিয়ে আমি দুজনকে প্রশ্ন করেছি।

প্রথম জন হলেন কামাল উদ্দিন জাফরী (হাফি)। ২০০৩ সালের দিকে হবে সম্ভবত। আমাদের হিফজুল কোরআন ফাউন্ডেশানের মাহফিলে তার খেদমত করার সুযোগ পেয়েছিলাম। নাস্তা খাওয়ার সময় কথায় কথায় আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, কিছু দিন আগে এই মাঠে চরমোনাইর পীর সাহেব চ্যালেঞ্জ করে গেছেন যে, জামায়াত ইসলামী দল এটা প্রমাণ করতে পারলে তিনি তওবা করে জামায়াতে যোগ দেবেন। জামায়াত তার সাথে বহসে বসছে না কেন ? জামায়াতের ভিতরে মাওলানা, মুফতির কোন কমতি নেই। তারপরেও কেন বহসের এই চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ?

আমার যতটুকো মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, তিনি ও তার দল যখন মেচিউরড হবেন, দলে বলে আরো এগিয়ে যাবেন, তখন বুঝবেন জামায়াত কেন তার সাথে বসছে না। জামায়াত এই মুহুর্ত্যে তাকে হাইলাইট করার দরকার মনে কর না। দ্বিতীয় কথা হলো, তার যত অভিযোগ সেগুলোর অধিকাংশই মাওলানা মওদূদীর কিতাব পত্রের ওপরে আনিত তাদের মুরব্বিদের গবেষনার রেজাল্ট । জামায়াত মনে করে কেউ যদি বহসে মাওলানা মওদূদীকে কাফের প্রমাণ করে ছাড়ে তাতেও জামায়াতের রাজনৈতি দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন পার্থক্য সৃষ্টি হবে না। জামায়াত তার দলীয় গঠণতন্ত্রের আক্বীদা বিশ্বাস থেকে ফিরে যাবেনা। লক্ষ্য উদ্দেশ্য একই থাকবে।

কারণ, জামায়াত মওদূদীর রহ এর কিতাব পত্র থেকে উপকৃত হয়, তার লিখিত তাফসির ইসলামী আন্দোলনের জন্য যুপোপোযোগি হওয়াতে স্টাডি লিষ্টে সবার আগে রাখে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, জামায়াত তাফসিরে তাফহীমুল কোরআনকে নির্ভূল মনে করে। পৃথিবীর কোন তাফসির গ্রন্থ নির্ভূল ভাবে লিখিত হয়েছে? কিন্তু যেসব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে মতবিরোধী বা ভ্রান্তীর অভিযোগ আনা হয় তার অধিকাংশই ফিকহের খুটিনাটি মতবিরোধ। এগুলো নিয়ে বিতর্কে জড়ানো বৃহত্তর ইসলামী দলগুলোর জন্য উপযোগী নয়।

আর আক্বীদার চিন্তা করলে নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে, এই তাফসিরে আহলে সুন্নাহর আক্বীদাই তিনি পেশ করেছেন। হয়তো বিষয়গুলো গভির ভাবে ব্যাখ্যা করার দরকার মনে করেননি। প্রথমি দিকে তিনি তাফসির সংক্ষিপ্ত করার চিন্তাই করেছিলেন যেটা ভূমিকা তে বলেছেন। তার চিন্তা ভাবনা, লেখার স্টাইল অনেক মানুষ বুঝতে ব্যর্থ হতেন। যে কারণে কাছের মানুষরা তাকে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতেন। কিন্তু বিরোধী অংশের অধিকাংশ আলেমেরর অবস্থা হচ্ছে এমন যে তাদের কাছে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে বা বিভ্রান্ত করার নিমিত্তে মাওলানার কোন লেখার খন্ডিত অংশ প্রেরণ করে ফতোয়া চাওয়া হয়েছে। ফলে তারা সেই খন্ডিত বাক্যের দ্বারাই তাদের হালত অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন। এগুলো জামায়াত বুঝে এবং তাদের দুর্বলতা স্বিকার করে তাদের সম্মান করে। মুল কথা হচ্ছে, জামায়াত মওদূদীর বিষয়ে কোন মুনাজারা, বিতর্কে জড়ানো বা তাকে নিয়ে বেশি বেশি আলোচনায় বিশ্বাস করে না। তিনি তার হিসেব দিবেন ইনশাআল্লাহ।

দ্বিতীয় জন হলে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রহ)। শহীদ আব্দুল মালেক অডিটিরিয়ামে ওপেন প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলাকালে আমি লিখেছিলাম, চরমোনাই পীর সাহেবের চ্যালেঞ্জ এবং মাওলানা মওদূদী রহ ইস্যূতে জামায়াতের অবস্থান। তিনিও সংক্ষিপ্ত করে বলে দিলেন, কেউ যদি মাওলানা মওদূদীকে কাফের প্রমাণ করে দেয়, আপনি তার সাথে শত্রুতা করতে যাবেন না। কারণ, মরহুম মাওলানা মওদুদী রহ তার আসল ঠিকানায় পৌছে গেছেন। আমরা তার লিখিত সাহিত্য, তাফসিরকে নেয়ামত মনে করে থাকি। যেসব বিষয় আমরা প্রয়োজনীয় মনে করেছি, সেগুলো অধ্যায়ন করার জন্য জোর দিয়ে থাকি। কিন্তু কারো ব্যক্তিগত আমল, আখলাক, আক্বীদা বিশ্বাস নিয়ে কারো সাথে বিতর্ক করি না। আমরা মনে করি আহলে সুন্নাহর আক্বীদাভুক্ত প্রত্যেক দল ও গোষ্টি যে যেভাবে দ্বীনের খেদমত করছে, তারা সকলে আমাদের ভাই।

চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তিনি বলেন, যেদিন কেউ জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ, দলীয় কর্মপদ্ধতি, গঠনতন্ত্রের কোন ধারা উপধারাতে কোরআন এবং সুন্নাহ বহির্ভূত কিছুর জন্য চ্যালেঞ্জ জানাবে যেটা আহলে সুন্নাহর খেলাফ, সেদিন আমরা তাদের ঘরে গিয়ে শুনে আসবো, জেনে আসবো আমাদের কোথায় ভুল রয়েছে।যাকে নিয়ে আপনি প্রশ্ন করেছেন সেই জামায়াতের প্রতিষ্টাতা নিজেও বলেছেন, ইলমে ফিকহের কোন বিষয়ে কেউ যেন তার মতামতকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন না করে। প্রত্যেক গোষ্টি তার দ্বীনি মানহাজ অনুযায়ী আমল করবেন। কিন্তু ইক্বামাতে দ্বীনের কাজে জামায়াতকে যেন সহযোগীতা করেন। সামর্থে না কুলালে অন্তত দোয়ায় যেন আমাদের শরীক রাখেন। অতএব, তাকে সহীহ, হক প্রমাণের জন্য আমরা এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করতে চাই না। তবে কেউ যদি মিথ্যা তোহমদ দেয়, ইয়াহুদী, নাসারাদের এজেন্ট হয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায় তাহলে সম্মানের সাথে আমরা মজলুমের পক্ষে সত্য বলে যাবো। তবে সেটা হবে আন্তরিকতার সাথে যাতে সাধারণ দ্বীনি ভাইরা বিভ্রান্তির স্বীকার না হন।

Apu Ahmed

পঠিত : ৯১৬ বার

মন্তব্য: ০