Alapon

একটি ইসলামি সংগঠন যেভাবে বিতর্কিত হয়...


প্রথমে বলে নেই, পোষাক আসাকের ক্ষেত্রে আমি সেই দলের নই যারা গোটা জমিনের মানুষদের সুন্নাতী পোষাকের নামে জুব্বা কোর্তায় ঢাকতে চান। এটাকে তারা সুন্নাতী পোষাক নাম দিয়েছেন। বস্তুত রাসুলুল্লাহ স থেকে পোষাকের বাহ্যিক ধরণ, রং নিয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। কারণ, তিনি কেবল মাত্র আরবের নবী ছিলেন না, তিনি জগতের সকল অঞ্চলের নবী ছিলেন।

তার রেসালতের মধ্যে জরুরী ছিলো ফরজ সতরের বিষয়ে উম্মাতকে পয়গাম দেওয়া, তিনি সেটা জিম্মাদারীর সাথে দিয়েছেন। তারপরেও বলতে হয় যে, তিনি এক ধরনের পোষাকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছেন যেটা আমরা অগ্রাধিকার দিতে পারি। নবী প্রেমী কেউ চাইলে সেই পোষাক বেছে নিতে পারেন, এটাই মোহাব্বাতের নমুনা।

কিন্তু কোন ব্যক্তির রুচি, অভিরুচীতে তিনি হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করেননি। স্থান কাল পাত্র ভেদে মানুষের পোষাকে পরিবর্তন আসার খবর তিনি ঠিক সেভাবে জানেন যেভাবে কেয়ামতের পুর্ববর্তি প্রত্যেকটি ঘটনা তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। কিছু হাদিস থেকে জানা যায় যে, সম্পদশালীদের ভালো , রুচিশীল পোষাক পরিধান করাতে তিনি উৎসাহ দিয়েছেন।

সামর্থ্য থাকার পরেও রুচীশীল দামি পোষাক না পরাতে তিনি বরং নাখোশ হয়েছেন। যারা বলেন, গরিবের হালতে চলুন, তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ঐসব হাদিস। গরিবের হালত বলতে নোংরা, কমদামী পোষাক বুঝায় না আমার ভাই। বরং গরিবের হালত হলো নিজের অন্তরকে সব সময় আল্লাহর কাছে মুহতাজ বানিয়ে রাখার নাম, অহংকার মুক্ত অন্তরের নাম।

এবার শিরোনামের বিষয়ে আসি।
ইসলামী সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়ে কঠোরতা দেখাতে হয়, তেমনি কিছু বিষয়ে ছাড় দিয়ে মানুষকে কাছেও টানতে হয়। কিন্তু ইসলামী সংগঠনের ভাবমুর্তি
যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাও দায়িত্বশীলের জিম্মাদারী। কারণ, সংগঠন যদি মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিতে চায় তাহলে তাকে তার পরিবেশ পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে সেই অঞ্চলের মানুষের মানস্তাত্বিক অবস্থার ব্যাপারে সম্মান জানাতে হবে।

যদি কোন দল সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই দল কোন দিনও গণমানুষের সংগঠন হতে পারবে না। বিশেষত ইসলামী সংগঠনের দাবি করা কোন দল যদি এ দিকে দৃষ্টি না দেয়, তাহলে তাদের বিকল্প তৈরি করা হয় অটোমেটিক ভাবে, তারা মানুষের অন্তরের শ্রদ্ধার আসন থেকে হারিয়ে যান। আমি জানি যে, আমর এসব মারেফতি কথা আপনাদের বোধগম্য হচ্ছে না। বিষয়টি উদাহারণের সাথে তুলে ধরছি যাতে ক্লিয়ার হতে পারেন এবং আশে পাশের প্রত্যেক ব্যক্তি যাদের জিম্মাদারী রয়েছে তার এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিতে পারেন।

পোষাকের যে অবস্থার কথা বললাম সেটা হলো শরীয়াতের রোখসাত। আমি কী পোষাক পড়বো সেটা শরীয়াত আমাকে ঠিক করে দেয় না কিন্তু শরীয়াত আমাকে বলে আমি যেন আমার স্থান কাল পাত্র ভেদে, মানুষের মনস্তাত্বিক অবস্থা বা পজিশান উপলদ্ধি করে আমার লাইফ স্টাইল নির্ধারণ করার সাথে সাথে আমার পোষাক আসাক নির্ধার করতে গুরুত্বপুর্ণ এই দিকগুলোতে নজর দেই।

উদাহারণ হিসেবে ধরুন। এদেশে হাফেজে #কোরআন বলতে মানুষ #হুজুরদের বুঝে। আর হুজুর বলতেই মানুষের মনের কোনে ভেসে উঠে মুখে দাড়ি ভর্তি সাদা পাঞ্জাবী বা কোর্তা পরিহিত কোন একজন ব্যক্তি। এ হিসেবে মানুষ একজন হাফেজকে বা মাওলানাকে মুল্যায়ন করে। এখন পোষাকের রুখসাতকে মাথায় নিয়ে জীবন চালানো একজন হাফেজ বা মাওলানা যদি ভিন্ন কোন এলাকায় যান, সেখানে তিনি কিন্তু মাওলানা হিসেবে সম্মান পাবেন না। তিনি মাওলানা দাবি করলে বরং তিরস্কৃত হবেন।

ধরুন কোন মসিজেদে ইমাম সাহেব অনুপস্থিত আছেন। এমতবস্থায় আপনি হাফেজ, মাওলানা উপস্থিত হয়েছেন তবে প্যান্ট সার্ট পরিধাণ করে। এক্ষেত্রে লোকজন কী আপনাকে নামাজের ইমামতির জন্য আহ্বান করবে ? নিশ্চিত থাকুন মানুষ আপনাকে ইমামতির জন্য আহ্বান করবে না। কারণ আপনি হাফেজ, মাওলানা সেটা গায়ে লেখা থাকবে না। আহ্বান করবে কোন একজন দাড়ি টুপি পরিহিত ব্যক্তিকে। হয়তো তার সুরা কেরায়াত শুদ্ধ নয়, কিন্তু তার ওপরে আলাদা ভক্তি কেবল তার পোষাকের জন্যই নির্ধারিত হয়। এটা উপমহাদেশের মানুষের ধর্মী, ধার্মিকতার ক্ষেত্রে প্রমাণিত মনস্তাত্বিক ব্যাপার। এটাকে ডিজঅনার করে আপনি ইসলামী সংগঠনকে বিতর্কিত করবেন।

গ্রামের স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেটি যখন শহরে গিয়ে ইসলামী #ছাত্রশিবিরের সদস্য হয়ে দাড়ি টুপি, পায়জামা, পাঞ্জাবী পরিহিত হয়ে গ্রামে ফিরে আসে, লোকজন তখন শিবিরের বন্দনা গায়। হোক না আমলে আখলাকে সেই ব্যক্তিটি যতটাই নিম্ন মানের। কিন্তু কোন হাফেজ বা মাওলানা যদি সারা বছর মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে, শহরে গিয়ে ছাত্রশিবির করে প্যান্ট সার্ট পড়ে গ্রামে ফিরে যায় তখন পাবলিক শিবিরকে দোষ দেয়। বলে, শিবির করে সুন্নাতি জিন্দিগী ছেড়ে দিয়েছে। আসলে কি শিবির তাকে এই কাজে উদ্ভুদ্ধ করেছে ? মোটেও না, কিন্তু তারপরেও দু ক্ষেত্রেই #শিবির ক্রেডিট পেলো।

এ অবস্থায় দায়িত্বশীললের উচিত হবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অবস্থার ওপরে দৃঢ় রাখার চেষ্টা করা যাতে সংগঠন বিতর্কিত না হয়। আমি এরকম বহু লোককে জানি যারা আমার সাথে মাদ্রাসায় পড়েছেন কিন্তু পরবর্তিতে ঢাকা আলিয়াতে ভর্তি হওয়ার পরে পোষাকে আসাকে ব্যপক পরিবর্তন করেছেন। সংগঠন এসব টলারেট করতে থাকলে মানুষের কাছে বিতর্কিত হতে থাকবে। সংগঠন যদি এইসব কাজকে প্রশ্রয় দেয় তাহলে সেটা সংগঠনকে বিতর্কিত করার জন্য যথেষ্ট। আপনি ‍সুন্নাত ওয়াজিব বাদ দিন, মানুষের মনস্তাত্বিক দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সংগঠনকে মানুষের কাছাকাছি আনার চেষ্টা করুন।

আমি জানি, সংগঠন কাউকে সুন্নাত নফলের জন্য জোর করে না, কিন্তু কারো জন্য সংগঠনের বদনাম হওয়াও যেন মেনে না নেয় সেদিকে দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নেওয়া দরকার। যতই ষরযন্ত্র হোক, এদেশের মানুষদের অন্তরে আলেম ওলামা, দাড়ি,টুপি, কোর্তা, জুব্বা ওয়ালাদের প্রতি আলাদা মোহাব্বাত আছে, থাকবে। এটা মাথায় নিলেও আমরা ঐসব অপকর্মকে প্রশ্রয় দিতে পারি না যা তৃনমুলে সংগঠন সম্পর্কে দ্বীনদার লোকদের কাছে বাজে মেসেজ দেয়। আশা করছি দায়িত্বশীলরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

Apu Ahmed

পঠিত : ১২১৯ বার

মন্তব্য: ০