Alapon

এবারের আবিষ্কার ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ব্যবস্থা’...


প্রত্যেক স্বৈরাচারই তাদের বিভিন্ন কাজের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। যেমন, এডলফ হিটলার বিখ্যাত ছিলেন তার নাৎসি বাহিনীর কারণে। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বিখ্যাত ছিলেন নিজের কঠোরতার কারণে। আর স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ বিখ্যাত ছিলেন, নারী লিপ্সুতার কারণে।

খুব সম্ভবত স্বৈরাচারা আওয়ামী লীগ এবং তাদের নেত্রী বিখ্যাত হতে যাচ্ছে, নব্য ভোটিং ব্যবস্থার কারণে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই গোটা বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী ভোটার বিহীণ নির্বাচন দেখেছে। যেখানে ১৫৫ জন সংসদ সদস্য কোনো ধরণের ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছিল। আর সেই নির্বাচনের বদৌলতে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় সরকার গঠন করেছিল।

সেই মেয়াদ শেলে এলো ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন। গত নির্বা‍চন ভোটার বিহীণ হওয়ায় দেশ-বিদেশে সরকার বেশ সমালোচনার স্বীকার হয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বেশ কয়েকটি দেশ- এহেন নির্বাচনের কড়া সমালোচনা করে। তাই আর ভোটারবিহীণ নির্বাচন নয়। তাই ৩০ ডিসেম্বর এলো রাতের আধারে নির্বাচন।

৩০ ডিসেম্বরের আগেই মধ্যরাতে সারাদেশের ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করে রাতের আধারেই ব্যালটবক্স পূর্ণ করে ফেলল। সাধারণ জনগণ পরের দিন ভোট দিতে গিয়ে দেখে- তাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। খুব সম্ভবত বিশ্বের আর কোথাও- এমন রাতের আধারে নির্বাচনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটলেও আমার জানা নেই। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেমন উন্নয়নের রোল মডেল তেমনি ভোট চুরির ক্ষেত্রেও রোল মডেল।

এবার এল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। গত ১ জানুয়ারী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। তবে এবার আর ভোটার বিহীণ নির্বাচন নয় কিংবা রাতের আধারেও নির্বাচন নয়। ভোটার দের নিয়ে দিনের আলোতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। আর এবারেই প্রথম দেশের নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হল।

ইভিএমের নিয়ম হল- প্রথমে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে। ভেরিফিকেশন হয়ে গেছে গোপন কক্ষে রাখা ইভিএম মেশিনে গিয়ে নিজের পছন্দের ভোটারকে ভোট দিতে হবে।

আর এই গোপন কক্ষেই ছিল- স্বৈরাচার সরকারের নতুন খেল। ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট ভেরিফিকেশন করে গোপন কক্ষে গিয়ে দেখে- সেখানে আগে থেকেই একজন অপেক্ষা করছে। তার বুকে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থীর প্রতীক ঝুলছে। সেই ব্যক্তিই ইভিএম মেশিনের বাটন চেপে সরকার দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দিচ্ছে। আর এই ভোটকে বলা যেতে পারে ‘নিয়ন্ত্রিত ভোটিং ব্যবস্থা’।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার উপহার দিল- ভোটার বিহীণ নির্বাচন, তারপর দিল রাতের আঁধারে নির্বাচন। আর এইবার আমরা দেখলাম ‘নিয়ন্ত্রিত ভোটিং ব্যবস্থা’। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি- এমন নিয়ন্ত্রিত ভোটিং ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোত্থাও নেই। আর এই আবিষ্কার আমাদের জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন, উন্নয়নের রোল মডেল, মানবতার আব্বু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবিষ্কার।

আমরা জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অবদানের জন্য দেশ বিদেশে বহু পুরষ্কার ও সংবর্ধনা পেয়েছেন। আমাদের প্রাণের দাবি হল- এমন নিত্য নতুন স্বৈরাচারি ভোটিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা ও পুরষ্কৃত করা হোক। এমন প্রতিভা পৃথিবীতে সচারাচর দেখা যায় না। তাই আমাদের অবশ্যই এই প্রতিভাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। ব্যাপারটা আমাদের মাথায় রাখা উচিত কিন্তু!

পঠিত : ৪৭৫ বার

মন্তব্য: ০