Alapon

পুলাওয়ামায় হামলা এবং কিছু কথা...


২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলাওয়ামায় সুরক্ষিত শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়েতে ৮০ কেজি আরডিএক্স বিস্ফোরক নিয়ে একটি গাড়ি ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর ৭৮টি বাসের একটি কনভয়ের উপর হামলা চালায়।

এই বাসগুলোতে ভারতের প্যারামিলিটারি পুলিশ বাহিনীর ৭৬তম ব্যাটালিয়নের ২৫০০ জন সেনা যাচ্ছিলেন।

ওই আত্মঘাতী হামলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিপিআরএফ) ৪০ জনের বেশি কর্মকর্তা নিহত হয়েছিল। হামলাটি চালিয়েছিল পুলওয়ামার ২২ বছর বয়সী এক কাশ্মিরি তরুণ আদিল আহমেদ দার।

দুটো নীল রঙের বাসে এই বিস্ফোরণের আঘাত সবচেয়ে বেশি লাগে। বাস দুটিতে ৩৫ জন করে সেনা ছিল। শ্রীনগর থেকে জম্মুর দিকে যেতে ২০ কিলোমিটার দূরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

আদিলের গল্পটা খুবই পরিচিত, যেটা তার বাবা-মা বলেছেন। বন্দুকের ছায়াতলে বড় হয়েছেন আদিল এবং কয়েক বছর আগে যখন স্কুল থেকে সে বাড়ি ফিরছিল, তখন ভারতীয় সেনারা একদিন তাকে চরম পেটায়।

এর পর থেকেই চরমপন্থী হয়ে ওঠে সে। ২০১৬ সালের শেষ দিকে তরুণ কাশ্মিরি নেতা বুরহান ওয়ানির হত্যাকাণ্ডের পর আদিল বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল।

নিরাপত্তা রক্ষীরা তার পায়ে গুলি করে এবং ১১ মাস তাকে বিছানায় থাকতে হয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে তার কাজিন মনজুর ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত হয়।

তার বাবা গুলাম হাসান দার বিবিসিকে বলেন, “ওই দিন সে বদলে যায়, একটা লাজুক ছেলে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরিতে রূপ নেয়, যদিও সেই ক্ষোভটা সে কমই প্রকাশ করতো।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে জয়শে মোহাম্মদের অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত একটি গ্রুপ একটি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে আদিল দার এ ঘটনার জন্য নিজের দায় স্বীকার করে।

কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই ভারত ওই দিনই তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ি করে এবং বলে যে, এই বিস্ফোরকগুলো সীমান্ত দিয়ে এসেছে।

সে সময় ভারতের এক সেনা কমান্ডার লে জেনারেল ডি এস হুদা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন যে, “সীমান্ত দিয়ে এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক নিয়ে আসা সম্ভব নয়।

জেনারেল হুদা বলেছিলেন, জম্মুর পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য যে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়, সেই ধরনের বিস্ফোরক হামলাকারী ব্যবহার করেছে।

পরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের আরেক সাক্ষাতকারে জেনারেল হুদা অবশ্য তাদের আগের বক্তব্য থেকে পিছু হটেন এবং বলেন যে, পাকিস্তান থেকে বিস্ফোরক আসার বিষয়টি তিনি নাকচ করছেন না।

বরং তিনি বলতে চেয়েছেন যে, এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাচার করে আনাটা কঠিন। পাকিস্তানের অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে, এই ঘটনার সময়টা গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ ভারতের সাধারণের নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই ঘটনা ঘটে এবং ভারতের নির্বাচনে পাকিস্তান বিরোধী আবেগ সাধারণত ভোট বাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি মন্তব্য করেন যে, “সহিংসতা তার সরকারের নীতি নয়”। ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করতে এক মিনিটও সময় নেয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

হামলার নিন্দা করে কোরেশি বলেছিলেন যে, ভারতের ভেতর থেকে যে বিপরীত কণ্ঠস্বরগুলো শোনা যাচ্ছে, সেগুলো শোনা উচিত ভারত সরকারের।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুধু যৌথ তদন্তেরই প্রস্তাব দেননি বরং এই প্রতিশ্রুতিও দেন যে, ভারত কোন তথ্য প্রমাণ দিলে পাকিস্তান ব্যবস্থা নেবে।

ভারত সে সময় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশান এজেন্সির (এনআইএ) ১২ সদস্যদের একটি দলের নাম ঘোষণা দেয়। কিন্তু এর পর ১২ মাস চলে গেলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন তথ্যপ্রমাণ তারা দিতে পারেনি।

পুলওয়ামা কি শুধু বেপরোয়া তরুণ আদিল দারের কাজ ছিল, না কি ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে দক্ষিণ এশিয়ায় একটা ‘নতুন নীতি’ দাঁড় করানোর জন্য এটা ছিল একটা ‘সাজানো নাটক’ – সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে, বড় বড় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল অবাক করার মতো – ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’।

CLTD

পঠিত : ৪৮৭ বার

মন্তব্য: ০