Alapon

আমার সংসার ভাবনা...


১- প্রথমে জানতে হবে জামাইরা কি চায়। আমরা বিয়ের আগে সংসার নিয়ে যতটা সুখ স্বপ্ন দেখি, জামাইরা দেখে তার বহুগুন বেশী। তবে তারা সংসার নিয়ে যতটা দেখে তারচেয়ে বেশী দেখে বউ নিয়ে। হ্যা বউ। প্রতিটা ছেলের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত পরম আরাধ্য বস্তু। এই বউ নিয়ে স্বপ্ন দেখার সময় কি তারা ঝগড়া করার স্বপ্ন দেখে? বউকে সারাদিন বকা দেয়ার ভুল ধরার স্বপ্ন দেখে? অবশ্যই না। তবে কেন এই আচরন গুলো করে?

কারন তারা বাহিরে যতটা শক্ত, ভিতরে ততটাই ভঙুর নরম। সেই নরম যায়গাটা কোন মেয়ের কাছে খুলে দেয়া নিরাপদ মনে করেনা তারা। কঠিন আচরনের আবরনে ঢেকে রাখে। আর অনেকক্ষেত্রে সেটাই উচিত। এমনিতেই তারা তাদের প্রাপ্য সম্মান আনুগত্য পায়না, যদি নরম হত তাহলে কি ঘটত কে জানে। আমাদের মেয়েদের চিন্তার গভীরতা অনেক কম, অনেক কম। তাদের মনের নরম যায়গাটা ছুতে হলে আগে তাদের এই আস্থাটা অর্জন করতে হবে, যে আমার দ্বারা তোমার আত্বসম্মান কখনই আঘাতপ্রাপ্ত হবেনা।

তারা চায় বউ তার সম্মান করুক, আনুগত্য করুক। স্ত্রীর কাছে ছোট হওয়াকে মারাত্বক ভয় পায়। অন্তত বাহিরের লোকের সামনে তারা স্ত্রীর কাছ থেকে পরিপূর্ন আনুগত্য চায়। এই জিনিসটা উনাদেরকে দিয়ে দেন। সাকিবা আপু একটু আগে লিখেছে yes boss বলতে। কথাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। yes boss বলা শিখে যান। সেই দিন দূরে না যেদিন বস কিছু বলার আগেই চিন্তা করবে আপনার উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না তো! কারন বললেই তো আপনি মেনে নিবেন। আবার মেনে নিয়ে যদি কোন খারাপ কিছু ঘটে সেটাও তো উনি দেখবে। তার সব সিদ্ধান্তই যে সঠিক না সেটা তাকে মুখে না বলে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে দিন। নিজেই তখন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আলোচনা করতে আসবে।

2- প্রত্যেক পুরুষ তার সঙ্গীর চোখে হিরো হতে চায়। আমরা যেমন চাই আমাদের সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ হোক। তারা চায় তাদের সাহসিকতা, দায়ীত্বশীলতা, পুরুষত্ব আমাদেরকে মুগ্ধ করুক। অথচ আমরা এমন নাদান, মুগ্ধ হবার বদলে সুক্ষ খোচা দিয়ে তাদের পুরুষত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বেশী পছন্দ করি, হিরোর বদলে বানিয়ে দেই হিরো আলম। ফলাফল খোচার বদলে খোচা, তারপর আবার খোচা। চলতেই থাকে। আমি যখন একটা বাকা কথা বলি সে নির্লিপ্ত থাকে। আমি আগে ভাবতাম গায়ে লাগেনা। এখন বুঝি গায়ে ঠিকই লাগে। আমার কোন কাজের ভুল ধরার মাধ্যমে সেটার প্রতিফলন হয়। এটা কেউ ইচ্ছা করে করেনা। কেউ বারবার আপনার ভুল ধরছে, সেটা যত যৌক্তিকই হউক, আপনি হয়ত চুপ করে থাকলেন, কিন্তু আপনার সামনে যখনই তার কোন ভুল আসবে আপনি সাথে রি এক্ট করে ফেলবেন খুব স্বাভাবিক ভাবেই। তাই আসুন খোচাখুচি বাদ দেই। প্রশংসার তেলে চুবিয়ে চুবিয়ে তাদেরকে চকচকে হিরো বানিয়ে রাখি। আফটার অল সে রাজা হলে আমরাই তো রানী।

৩- আপনি তার সাথে কি আচরন করছেন আর সে কি করছে এভাবে মাপতে যাবেন না। সে আপনার উপর দায়ীত্বশীল, আপনি না। আপনার ভালো মন্দের দায় তার উপর। যেমন আপনার উপর আপনার সন্তানের ভালো মন্দের দায়। তাই মাপতে হলে সন্তানের সাথে আপনার আচরন দিয়ে মাপুন। বাচ্চারা যেমন আপনার সব সিদ্ধান্ত সব নিষেধাজ্ঞার কারন বোঝেনা, আপ্নিও তেমন বুঝেন না এটা মেনে নিন। পুরুষ মানুষের দূরদর্শিতা এবং চিন্তার গভীরতা একটু বেশীই থাকে সাধারনত৷ সে যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তাকে তার ভুল থেকে শিখতে দিন। বলে বলে শেখানোর দরকার নাই, সম্ভবও না।

৪- আমরা মেয়েরা নিজেদেরকে যতটা দুর্বল আর অসহায় মনে করি, আদতে আমরা তা না। আল্লাহপাক ছেলেদেরকে শারিরীক শক্তি দিয়ে তাদের মনের চাবি মেয়েদের হাতে দিয়ে দিয়েছে। আমরা সে চাবিটা ঠিকমত চালাতে জানিনা। উলটো খারাপ ব্যাবহার, অবাধ্যতা, উদাসিনতার মাধ্যমে চাবিটাই হাতছাড়া করে ফেলি। পুরুষরা নারীর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, তাদেরকে মিষ্টি কথায় ভোলানো এমন কোন কঠিন কাজ না। হ্যা যদি আপনি মনে করেন "আমিই কেন শুধু মিষ্টি কথা বলব", অথবা "আমি ভাই সোজা সাপটা কথা বলি, স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড, অত ভনিতা জানিনা" তাহলে আপনাকে আমার কিছু বলার নেই। কোন কথাটা কোথায় কখন কিভাবে বললে সর্বোত্তম রেসাল্ট আসবে এই জ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি। তবে অনেকে রেসাল্ট চায় না। শুধুই তর্কে জিততে চায়।

৫- সে কেন আমাকে বোঝেনা। নাহ, বোঝেনা সে বোঝেনা, জাতীয় সমস্যা। আমার একসময় মেইন সমস্যা ছিলো এটা৷ সময় আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমি তাকে বুঝি এরচেয়েও কম। একটা দুই বাচ্চার মা সারাদিন ঘরে বসে কি করে এটা বোঝা একটা পুরুষের পক্ষে সম্ভব না, দরকারই বা কি বুঝানোর। যদি বলতে আসে সারাদিন ঘরে বসে করো কি? মুচকি হেসে বলে দেন "ও তুমি বুঝবে না"। ভুল ধরছে? ভালোত, একটা সারাক্ষন ভুল ধরার মানুষ থাকা খারাপ কিছুনা। নিজেকে শোধরানোর কি সুন্দর সুযোগ!

৬- আমরা সবাই কমবেশী অলসতা নামক মহামারীতে আক্রান্ত। নিজেদের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন, আর ধুমিয়ে কাজ করুন। কাজ শেষে ভাববেন না এত কাজ করলাম কেউ তো কৃতজ্ঞ হয়না। বরং নিজে কৃতজ্ঞ হোন, আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার কাজগুলো করতে পেরেছি। একটা যায়গা তো আছেই যেখানে সব প্রতিদান জমা থাকে। যেখানে অবিচার হবেনা কারো সাথেই।

৭- মানুষের খারাপ আচরন ইগ্নোর করবেন কিভাবে? শশুরবাড়িতে কেউ একটা বাজে কথা বলল? প্রথমেই ইগ্নোর করার দরকার নেই। ভেবে দেখেন আপনি সত্যিই এই ভুলটা করেন কিনা। যদি করেন সাথে সাথে স্বীকার করে নেন। হ্যা এরকম তো হওয়া উচিত না, আমিও ভেবেছি, এই এই কারনে পারছিনা। চেষ্টা করবো। কিছু না বলে চুপচাপ থেকে ভেতরে ভেতরে গজগজ করবেন না। আর যদি ভুলটা আপনার মধ্যে না থাকে? তাহলে তো কোন কথাই নেই৷ যে খারাপ আচরন করছে এটা তার সমস্যা। সে অবুঝ। নিজের ভুল বুঝতে পারছেনা। তার জন্য দোয়া করে দেন। আল্লাহ উনাকে তুমি বুঝ দিয়ে দাও।

৮- শাশুরিকে বশ করার মন্ত্র বলে দেই আসেন। অল্প বয়সী শাশুরিকে বশ করবেন প্রশংসা দিয়ে। তার কর্মদক্ষতা, রান্না, ম্যানেজমেন্টের প্রশংসা করুন৷ শিখতে চান। সংসারের বিষয়ে উনার পরামর্শ নিন। মাঝে মাঝে উনার ছেলের নামে বিচার দেন। জামাইর কাছে শাশুরির বদনাম করার চেয়ে শাশুরির কাছে জামাইর বদনাম করা অধিক ফলপ্রসু৷ সিরিয়াস বিচার না, সে তো আমি বললে শুনে না আপনি বললে শুনবে এই টাইপের বিচার।শাশুরি স্বস্থি পাবে যাক, ছেলে তাহলে পুরোপুরি বউয়ের হয়ে যায়নি, বউয়ের সাথেও উল্টাপাল্টা করে।
আর শাশুরি যদি বয়স্ক হয় তাহলে শুধু গল্প করেন উনার সাথে। সময় দেন উনাকে। বৃদ্ধ বয়সে সবাই খুব লোনলি ফিল করে। নিজের ছেলেমেয়েরাও পাশে থাকেনা। উনাকে শুধু বলবেন ছোটবেলার গল্প বলতে, বিয়ের সময়ের গল্প বলতে, একবার উস্কে দিয়ে এরপর শুধু চুপচাপ বসে থাকবেন। দেখবেন কিভাবে বলে যাবে। শুনতে শুনতে একসময় দেখবেন আপনি আপনার খারুস শাশুরির প্রেমে পড়ে গেছেন।

৯- সবচেয়ে শেষ এবং সবচেয়ে জরুরি টিপস, আমল জোরদার করুন। রবের সাথে সম্পর্ক মজবুত করুন। সকাল সন্ধ্যার আমল মিস দিবেন না। দৈনিক তিলাওয়াত মিস দিবেন না। ইনশাআল্লাহ কোন বদনজর কোন ব্ল্যাক ম্যাজিক সংসারে অশান্তি আনতে পারবেনা। বাচ্চাদেরকে এবং স্বামীকেও নজরের দোয়া পড়ে পড়ে ফু দিয়ে রাখবেন৷ নিজের এবং সন্তানদের মধ্যে আমলের অভ্যাস গড়ে তুলবেন। স্বামীর সাথে আমল নিয়ে ঘ্যান ঘ্যানানো যাবেনা। সে আপনার অধীনস্ত না। তার জন্য আপনি জিজ্ঞেসিত হবেন না। তার জন্য শুধু দুয়া করবেন। সে হয় আপনাকে দেখে বদলাবে আর না হয় আপনার দুয়ায় নিজে নিজে বদলাবে। আপনার কথায় কখনোই বদলাবে না। বরং কথার দ্বারা হিতে বিপরীত হবার রেকর্ড বেশী৷

সবগুলো টিপস নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেয়া। জানিনা সব মিলিয়ে কার কতটুকু উপকার হবে। একটা সুখের মুহূর্তও যদি কারও সংসারে আসে আমার লেখা সার্থক৷ এই লেখা গুলো এখানের জন্যই। সেকুলারদের এগুলো দেখিয়ে মার খেতে যাবেন না। স্বামীর আনুগত্য কেন করতে হবে এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই ভিমড়ি খাবেন। এখানে আশা করি এমন প্রশ্ন কারো মাথায় নেই। সবার জন্য অনেক অনেক দুয়া আর ভালোবাসা।

পঠিত : ৫৭২ বার

মন্তব্য: ০