Alapon

আপনি কি রাগ কমাতে চান- তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য...


আপনার কি অনেক রাগ? রাগে মাথায় আগুন ধরে যায়? নিজেকে এই দুষ্ট স্বভাবের শেকল থেকে মুক্ত করতে পারছেন না? —তবে এই লেখাটি আপনার জন্য। আশা করি আপনার রাগ অনুরাগে পরিণত হবে ইন-শা-আল্লাহ!

১। আপনি যখন কোনো একটি সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন না, মূলত তখনই আপনার রক্ত গরম হতে শুরু করবে। গায়ের জোরে কিছু করার চেষ্টা আর কি। তাই ধৈর্যের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

২। রাগান্বিত অবস্থা মূলত একটি অসুস্থ অবস্থা। কারণ তখন বিবেক-বুদ্ধি-আবেগ-শারীরিক গতিবেগ কোনোকিছুই স্বাভাবিক থাকে না। একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিশেবে আমরা নিজেকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারি না।

৩। কারো অন্যায় রাগের কারণে যদি রাগ হয়, সেক্ষেত্রে বলবো আপনি একজন মানসিক রোগীর সাথে অমানবিক আচরণ করছেন। রোগীর তো রাগাটাই স্বাভাবিক। একজন সুস্থ মানুষ হিশেবে আপনার উচিত তার সাথে মানবিক ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করা।

৪। কোনো পরিবেশ আপনার মাঝে নেতিবাচক উত্তেজনা সৃষ্টি করে বা কেউ আপনাকে রাগাতে পারে—এর মানে হলো আপনি একজন রি-অ্যাক্টিভ, আত্মনিয়ন্ত্রনহীন ব্যক্তি। আপনার ইগোতে খোঁচা দিয়ে বললে বলা যায়—আপনার নাকের দড়ি অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করছে। এজন্য বলবো আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য আত্মবিশ্বাসী হোন। আর আত্মবিশ্বাসী হতে হলে দরকার আত্মজ্ঞান। নিজে কাজটি সঠিক করছেন না বেঠিক করছেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখুন; এরপর অন্যদের নেতিবাচক ধারণা থেকে নিজেকে প্রভাবমুক্ত রাখুন।

৫। হিংসা আর রাগ এমন এক প্রকারের বিষ যা মানুষ নিজে পান করে আর ভাবে—অন্যজন মারা যাচ্ছে। আসলে সে নিজেই যে নিজেকে মৃত্যুর কিনারায় পৌঁছে দিচ্ছে তা সে টেরই পায় না। বিষ খুব বিশ্বস্ত শত্রু। একে বুঝে পান করেন আর না বুঝে পান করেন, সে আপনাকে ধ্বংসের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত আপনার হাত ছেড়ে যাবে না।

৬। রাগ আপনার পারিবারিক ও সামাজিক সেতুবন্ধনে ফাঁটল সৃষ্টি করছে এবং দিনকে-দিন আপনার মধ্যে মানসিক অস্থিরতা ও চাপ সৃষ্টি করছে। সুতরাং রাগের প্রতি অনুরাগ দূর করুন।

৭। রাগে উত্তেজনার মুহু্তে দৃষ্টিকে নিচের দিকে রাখুন। দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়ুন। এতেও কাজ না হলে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। যেকোনো মূল্যে মুড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা চাই।

৮। অন্যদের অবস্থান বুঝার, তাদের প্রতি সুবিবেচনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ক্ষমা করার স্বভাব গড়ে তুলুন। ক্ষমা করে কেবল অন্যদের প্রতি করুণা করছেন ব্যাপারটা এমন নয়; বরং নিজেকে মানসিক অস্থিরতার জিঞ্জির থেকে মুক্ত করে নেয়ার জন্যও ক্ষমা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

৯। বিকল্প অনুসরণ করুন। একটি স্বভাব ত্যাগ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এর পরিবর্তে আরেকটি স্বভাবের অনুশীলন শুরু করা। ”রাগ” এর সাধারণ অর্থ ”ক্ষোভ”। তবে সঙ্গীতশাস্ত্রে রাগের মানে: “স্বর-লহরী / স্বর ও বর্ণ দ্বারা ভূষিত ধ্বনিবিশেষ” যা মনকে রঞ্জিত/বিমোহিত করে। আপনি দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করে মানুষের মাঝে সুরের ধারা বইয়ে দিতে পারেন। অথবা রাগের সাথে সামান্য “অনু ” যোগ করে দিন—ব্যস ”অনুরাগ” হয়ে গেলো। এতে আপনার রাগ করাও হলো আবার মানুষের মাঝে অনুরুক্তিও সৃষ্টি হলো।

১০। রুঢ় ও রাগী স্বভাবের রোগা লোকজনকে মানুষ পছন্দ করে না। মানুষ স্বস্তি পায়, কেবল এমন আচরণই করুন। মেঘ আর বজ্র-বিদ্যুতের ভয় না দেখিয়ে প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের আকাশে রঙধনুর রঙ ছিটিয়ে দিন।

১১। ওপরের পরামর্শগুলোর কোনোটা কাজে না দিলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। তার সাথে খোলামেলাভাবে আপনার অবস্থা নিয়ে কথা বলুন। আশা করি তিনি আপনাকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন।

১২। আল্লাহ কাছে অনবরত প্রার্থনা করে এই রাগের আগুন থেকে মুক্তির সাহায্য চান।

রাগ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত ফর্মূলা:

`রাগের উত্তেজনা অনুভব হওয়ার সাথে সাথে নিজেকে বলতে শুরু করি: আমি ক্রমেই রাগে আইসবার্গ হয়ে যাচ্ছি।'

-----------------------------------------
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললঃ আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ রাগ করো না। লোকটি বার বার রাসূলের নিকট উপেদশ চায় আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ রাগ করো না।” [সহীহ আল-বুখারীঃ ৬১১৬]
-----------------------------------------

Anger is for weak and victim. I believe: you are STRONG and VICTOR!

পঠিত : ৫৬৭ বার

মন্তব্য: ০