Alapon

বিয়ে, সংসার এবং কিছু কথা...


কেউ বিয়ে করেছেন বছরখানেক হলো। স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়া মোটামুটি শেষ। এখন শুরু হবে সিরিয়াস সংসার।

সারাদিন খেটেখুটে ঘরে আসলেন, শুনলেন মা আর বউয়ের ঝগড়া। হয়তো ঠুনকো বিষয়ে। এই ঘরে পা রাখতে আর ইচ্ছা করবে?

অনেক ভাই দেখা যায়, অনেক রাত পর্যন্ত রাস্তায়, দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। অথচ তার ঘর টাইলস করা দেয়ালে নতুন রংয়ের বাহারি আস্তর। দামি সোফাসেট, ইয়া বড় স্ক্রীন ঝোলানো দেয়ালে পাশে হোম থিয়েটার। বদ্ধ জানালা কারণ রুমে এসি। বিদ্যুৎ চলে গেলেও সমস্যা নাই কারণ জেনারেটর/আইপিএস আছে। তারচে বড় কথা তার সুন্দরি একটা বউও আছে। এত এত থাকার পরও ছেলেটা, লোকটা না এসে অন্ধকারে মশার কামড় খেয়ে একটার পর একটা বিড়ি টেনে অশ্লীল কথাবার্তা বলে চাইছে, যত দেরিতে ঘরে ফেরা যায়। কারণ কী? ঘরে শান্তি নাই! দরজা খোলার আগেই মা অথবা বউ তারস্বরে অভিযোগের ফিরিস্তি শুরু করবে। বেচারা না পারবে মাকে কিছু বলতে, না পারবে বউকে। করবে কী? পারতপক্ষে ঘরেই ফেরে না। চায়, কেউ একজন ঘুমিয়ে যাক। চুপিসারে খেয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে কোনমতে রাতটা পার করে সকালে আবার বেরিয়ে পড়বে।

বর্তমানে এরকম নজির বহু।
আমরা মানুষটার গাড়ি/বাইক, পোশাক, সেন্টের খুশবু দেখছি অথচ তার অন্তর জ্বলে যাচ্ছে। তার ঘরে শান্তি নাই। আমরা তাদের ধনৈশ্বর্য দেখে আফসোসে মরি অথচ তাদের অন্তর অশান্তিতে ছাই হয়ে গেছে বহু আগে।
আল্লাহর কত বড় নি'আমত পারিবারিক শান্তি। এটা তো সেই বুঝবে যে অশান্তিতে পড়ার পর পুনরায় শান্তি ফিরে পেয়েছে।

তো ভাই, পরিবারে শান্তি ফেরাতে, মা-ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুখে চারটা খেয়ে জীবনটা পার করতে ঘরে দ্বীন চর্চার বিকল্প নাই। বিশ্বাস করুন, সত্যিই বিকল্প নাই। কেন? তার ব্যাখ্যায় গেলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে।

আশপাশে অশান্তির গল্প অনেক শুনি, অনেক জানি। কিন্তু তার প্রকৃতি যখন কোন ভুক্তভোগীর মুখে শুনি, মনে মনে কতবার যে আলহামদুলিল্লাহ পড়ি! আল্লাহ আমাকে কতই না সুখে রেখেছেন! কেননা তার কথা শুনে বেচারার প্রতি আমার কত সহানুভূতি জাগছে, পরিবারে অশান্তির গল্প শুনে আমারই চোখে পানি আসছে, অসম্ভব মনে হচ্ছে। তাহলে আমার রবের শুকরিয়া আদায় করব না কেন? যিনি আমাকে এত শান্তিতে, স্বস্তিতে রেখেছেন! এবং তাদের পরিবারেও সুখ ফিরে আসার নেক-দু'আ করব না কেন? আল্লাহ কি আমার সুখ কমিয়ে দিবেন!

আল্লাহ সকলের ঘরকে সুখে ভরপুর করে দিন।

ঘরে সুখ আসার যত কায়দা, কারণই বাতলানো হবে তার শেষ হবে দ্বীনের মাধ্যমে অর্থাৎ আপনাকে দ্বীনের চর্চা পরিবারে চালু করতেই হবে। প্রথমে নিজে দ্বীনে প্রবেশ এরপর পরিবারে তার শিক্ষা, চর্চা। যতটুকু আমরা প্রবেশ করব, ততটুকু শান্তিই মিলবে বিশ্বাস করুন!

আপনি নিজের মধ্যে দ্বীন প্রবেশের মাধ্যমে শুরু করুন দেখবেন আপনার স্ত্রী পাল্টে গেছে, আপনার মা পাল্টে গেছে। আপনার বোন, আপনার সন্তানের মধ্যে পরিবর্তন। তারা আপনাকে এবং পরস্পরে শ্রদ্ধাশীল হচ্ছে, একে অপরে মিলেমিশে থাকছে। একে অপরের প্রতি সহন-সহানুভূতিশীলে পরিণত হয়েছে।
হবেই।

আমরা মনে করি শুধু নামাজ শুরু করার নাম বুঝি দ্বীনে প্রবেশ। এটা ঠিক, প্রবেশটা নামাজের মাধ্যমে হয় তবে এটা শুধু প্রবেশই। দ্বীন তো ব্যাপক। এককথায় আপনার প্রত্যেকটা কদমকে মাপবেন এবং একে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুমের মধ্যে ফেলে দিবেন। যাই করেন, এটা আল্লাহ করতে বলেছেন কিনা কিংবা তিনি পছন্দ করবেন কিনা? আমার এই কাজটা রাসুলূল্লাহর সুন্নাহর সাথে মিলে কিনা? নামাজের মাধ্যমে শুরু এরপর প্রতিটা কর্মকান্ডই সুন্নাহর ছাঁচে ফেলে দিতে হবে। এটা দ্বীন চর্চা।

এবং এটা চর্চা শুরু করলে আপনি পারিবারিক, সামাজিক জীবনে সুখী হবেন, আল্লাহ আপনার যা আছে তারই মধ্যে অর্থাৎ অল্পতেই তুষ্ট করে দিবেন। বেশি হলে তো কথাই নাই।

হবেই ইনশা-আল্লহ!
এখনই শুরু করুন।

Nijam Uddin

পঠিত : ৬৩৮ বার

মন্তব্য: ০