Alapon

বিশ্বসেরা অর্থমন্ত্রীর হাতে দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমন বেহাল দশা!



মনে করুন, আপনি একটি অফিসে চাকরি করেন। সেখানে আপনি বেতন পান ১ লাখ টাকা। সংসারের সব খরচ মিলিয়ে মাসে আপনার খরচ হয় ৮০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে উদ্বৃত্ত থাকে এবং আপনি তা ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চয় রাখছেন।

এখন আপনার অফিসের বস আচমকা ঘোষণা দিল, মাসিক খরচ বাদ দিয়ে মাসিক বেতন থেকে যে যত টাকা সঞ্চয় করেছে, সব টাকা অফিসের একাউন্টে জমা দিতে হবে। এবং আগামীতেও একই কাজ করা হবে।

তখন আপনি কী করবেন?
নিশ্চয়ই বাধ্য হয়ে সঞ্চিত সব টাকা খরচ করতে শুরু করবেন। প্রয়োজন নেই, তারপরও খরচ করতে শুরু করবেন। আগে যেখানে ৮০ হাজার টাকায় আপনার সংসারের খরচ চলত, এখন পুরো ১ লাখ টাকাই খরচ করে ফেলবেন। সঞ্চয় বলতে একটি টাকাও থাকবে না।

অতি সম্প্রতি সরকার স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সঞ্চিত অর্থ রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা উপরোক্ত ঘটনারই অনুরূপ। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে কী ঘটতে যাচ্ছে!

উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দেখবে, তাদের সব সঞ্চিত অর্থ সরকার নিয়ে নিচ্ছে তখন তারা এই সঞ্চিত অর্থগুলো খরচের উদ্যোগ করবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ব্যায় এবং ভুতুড়ে ভাউচারের রেশিও আচমকা বৃদ্ধি পাবে। ফলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের টাকা গোল্লায় যাবে।

অবশ্য সরকারের স্বায়ত্ত্বশাসিত ও আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা গ্রহণের উদ্দেশ্য যে মহৎ নয়, তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। সরকার প্রথমে শেয়ারবাজারের টাকা খেল, তারপর হাত দিল ব্যাংকগুলোতে। ব্যাংকের টাকা খাওয়া শেষ এবার হাত দিয়েছে স্বায়ত্ত্বশাসিত ও আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অন্যদিকে তারা হাত দিয়ে গরীব মানুষদের টাকাতেও। সঞ্জয়পত্রের সুদের পরিমাণ ১১ শতাংশ থেকে ৬ এ নামিয়ে এনেছে। এভাবেই দেশের অর্থনীতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে!

অন্যদিকে স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঞ্জয়ী অর্থ গ্রহণ করা হলে সেবা, পরিকল্পনা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের উপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। নিজস্ব অর্থব্যবস্থা না থাকায় স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত আর স্বায়ত্ত্বশাসিত থাকবে না। হাতে টাকা না থাকায় ইচ্ছেমত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে না। ফলত তারা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। ফলে তাদের কার্যতৎপরতা স্থবির হয়ে পড়বে এবং কাংখিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

অথচ সরকার যদি লুট হয়ে যাওয়া টাকা এবং ঋণ খেলাপিদের থেকে অর্থ আদায়ে তৎপর হতো তাহলে হয়তো এতো দেউলিয়াপনা দেখাতে হতো না। সরকার যেন টাকার জন্য এখন পাগলাপারা হয়ে গেছে। অথচ কিছুদিন আগেও পত্রিকা আর টেলিভিশন খুললেই অর্থমন্ত্রীর হাসি হাসি মুখে শোনা যেত, বিশ্ব এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমনকি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল নিজেকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রীও বলে দাবি করেন।

হয়, তবে এই ব্যর্থতা কার? অর্থমন্ত্রীর নাকি দেশের মানুষের?

হীরক রাণীর দেশে সব দোষ সাধারণ মানুষেরই! শাসকরা দেবতা তুল্য! তাদের কোনো ভুল বা দোষ থাকতে পারে না।

পঠিত : ৫৫৬ বার

মন্তব্য: ০