Alapon

নামাজের জন্য অধিনস্তকে কি জোর করা ইসলাম সাপোর্ট করে?


আপনি যদি মুসলমান হন, নিজেকে মুসলিম দাবী করেন এবং ইসলামে আপনার বিশ্বাস থাকে- তাহলে ইসলামের মৌলিক আকিদা ও ইবাদতের জন্য আপনার উপর জোর খাটানোর অধিকার অন্য মুসলিমের রয়েছে। মাওলানা মওদুদী (র) বলতেছেন, ইসলাম হচ্ছে একটা রাষ্ট্র চিন্তা। এই রাষ্ট্র চিন্তা ফিজিক্যালি এবং আইডিয়ালি- দুইভাবেই স্বার্বভৌম। যদিওবা কখনও ফিজিক্যাল রাষ্ট্র না থাকে (যেমন এখন নেই) তখনও আইডিয়ালি এই সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে এবং মুসলমান হইতে হলে আপনাকে এই রাষ্ট্রের অনুগত হতে হবে। এইখানে আপনার সেক্যুলার চিন্তার দুই পয়সায় বিকাবে না। ওটাকে ডাস্টবিনে ফেলে আসুন। ইসলামের সেক্যুলার চিন্তার একটা নিজস্ব ফ্রেমওয়ার্ক আছে। অন্য ফ্রেমওয়ার্ক থেইকা ধার করে আপনি সেটা ইসলামে ভ্যালু চেইন কে ব্যাখ্যা করতে আসলে আপনার ওরিয়েন্টাল এপিস্টেমলজিকে সাধুবাদ জানাই। কারণ আপনার ক্রিটিক্যালিটি ও যুক্তিকে সম্মান করা আমার কর্তব্য। কিন্তু এটাও জানা জরুরী যে- আপনার সেই চিন্তা ইসলামে রিজেক্টেড।

ইসলামীরাষ্ট্র কিভাবে নামাজ কায়েম করবে, কিভাবে যাকাত আদায় করবে, কিভাবে হুদুদ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগ করবে- সেইটা সময়, কনটেক্সট ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ের সাপেক্ষে ট্যাকটিক্যাল ও স্ট্রাটেজিক্যাল ভিন্নতার মধ্য দিয়া যাবে। এইখানে রাষ্ট্র ওভার নাইট আমুল চেইঞ্জ করার চাইতে ইহসানের পথেই হাঁটবে। এইটা ভিন্ন একটা আলাপ। তবে আমি যেইটা বলতে চাচ্ছি- আপনারা যারা ইন্ডিভিজ্যুয়ালিজমের মধু খাইতে খাইতে নেশাতুর হয়ে ভাবতেছেন অন্যান্য ধর্মের মতোই ইসলামও যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার- আপনাদের মূর্খতার জন্য এক বালতি সমবেদনা। ইসলাম ব্যক্তিগত ব্যাপার-সেপারকে তথা ব্যক্তিস্বাধিনতাকে একটু ভিন্ন ভাবে ইনকরপোরেট করে। ইসলামের ব্যক্তিস্বাধীনতাটা ফিজিক্যাল কিংবা আইডিয়াল অথবা উভয়ের সমন্বয়ে তৈরি ছাতার ভিতরে একটা সাবসেট। যেই ব্যক্তিস্বাধীনতা আকিদাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না। ইসলামের ফিজিক্যাল রাষ্ট্রটা সময়ের ব্যবধানে থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু এর আইডিয়াল রাষ্ট্রচিন্তা সর্বসময়ের জন্য বিদ্যমান।

ফলে, একটা রাষ্ট্র যেমন আপনারে সংবিধান, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত- ইত্যাদি বিষয়কে প্রতি কদমে কদমে সু-উচ্চে সমুন্নত রাখার জন্য ফোর্স করে তেমনি ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তাও আপনাকে একইভাবে নামাজ, যাকাত, ও অন্যান্য মৌলিক আকিদা ও ইবাদাতের জন্য ফোর্স করে। আপনি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করলে রাষ্ট্র যেমন সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে উদ্যত হয় তেমনি ইসলাম ত্যাগ করলেও সেটাকে ইসলাম রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো অপরাধ মনে করে। ফলের এর শাস্তি কি হবে সেইটা নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও মেজরিটি কিন্তু সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যাপারেই মত দিয়া থাকেন। তো, এইটা আপনার দৌলিয়াপনা- রাষ্ট্র করলে আপনি নম নম করতেছেন কারণ রাষ্ট্র আপনাকে ডিসওয়উন করলে আপনার চাল চুলোর ঠিক থাকে না। ফলে আপনি রাষ্ট্রের ফোর্স্ফুলনেসকে আত্মস্থ করতেছেন। কিন্তু ইসলাম করলে আপনার চুলকায়, কারণ ইসলাম না করলেও বা আংশিক করলেও আপনার চাল চুলা ঠিক থাকে- আপনার এই ইমান থাকা আর না থাকা এক কথাই।

চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন- আপনার এই ইমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতার ইমান, দিলের সততার জায়গা থেইকা এইটা ইমান না বরং হিপোক্রেসি। আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা মানার আপনার যে ঘোষণা, সেইটা ঘোষণা পর্যন্তই এবং এই ঘোষণা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতার কারণে আপনি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আপনি যদি দিলের সততার জায়গা থেকে আল্লাহকে প্রভু মানতেন তাহলে ইসলামের মৌলিক ইবাদতের জন্য মুসলিমদের উপর জোর করার যে হক ইসলাম মুসলিম লিডারশিপকে দিয়েছে, সেটাকে সেক্যুলার গডলেস থিওরীর নিক্তি দিয়া মাইপা রিজেক্ট করার স্পর্ধা দেখাইতেন না। সুতরাং, আপনি ইমান আনেন বা না আনেন- এইটা আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে ইমানদার দাবী করেন তাহলে আমার দায়িত্ব হিসেবে আপনাকে সতর্ক করি- সুস্পষ্ট কুফুরি থেকে মুক্ত থাকুন।

Jabal At Tariq

পঠিত : ৯৪২ বার

মন্তব্য: ০