Alapon

কচুরিপানা, পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং কিছু কথা...


ফেসবুক খুললেই আজকাল চোখের সামনে কচুরিপানা ভাসে...
গ্রামের পুকুরে এক সময় দল বেধে গোসল করতাম। সেই পুকুর ঢেকে যেত কচুরি পানায়.। আমরা কচুরি পানার নিচে ডুব সাতার খেলতাম। করুচিপানার নিচের দিকের পানি আশ্চর্য শীতল...

মাননীয় মন্ত্রীর সৌজন্যে কচুরিপানার সেই দিনগুলো আবারও ফিরে পেলাম। মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

তা হঠাত করে এত কচুরিপানার হিড়িক পড়ল কেন?
খবর পেলাম,মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন "গরু কচুরিপানা খেতে পারলে আমরা খেতে পারব না কেন?"

মাননীয় মন্ত্রী অত্যন্ত চমতকার ও গুরুত্বপুর্ন কথা বলেছেন। কিন্তু আফসোস! অবুঝ বাংগালী মন্ত্রীর কথার গুরুত্ব বুঝতে পারল না। উল্টো এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠল.
কিন্তু, মন্ত্রী মহোদয় এ কথা কেন বললেন?

দুটো কারন হতে পারে।
তিনি আসলে রসিকতা করেছেন। তার বত্রিশ পাটি দন্ত বিকশিত করিয়া অম্লান হাস্যবদন তাহাই ইংগিত করে। কিন্তু বেরসিক বাংগালী তাহা ধরতেই পারে নি।
লেখক হুমায়ুন আহমেদ বাংগালী জাতির রসিকতাবোধ নিয়ে তার এলেবেলে বইয়ে অনেক হা হুতাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, একবার এক ডাক্তার বন্ধুকে একটা কৌতুক বললাম।
কৌতুকটা হল এক লোক গেল দাতের ডাক্তারের কাছে। দাত তোলা শেষে লোকতা ডাক্তারকে ধরে এই মারে সেই মারে এই অবস্থা।
ডাক্তার বলল, কি ব্যাপার আপনি এত ক্ষেপেছেন কেন? এত আরামে আমি আর কারও দাত তুলিনি।

রোগী বলল, দাত মনে করে আপনি যা তুলেছেন তা আমার আলজিহবা
হুমায়ুন আহমেদের ডাক্তারবন্ধু এই কৌতুক শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন। কৌতুক কেমন লাগল জিজ্ঞাসা করায় বন্ধুটি বলল, ডাক্তার দাত আর আলাজিহবার পার্থক্য বুঝবে না, এ কেমন কথা!

হুমায়ুন আহমেদ বোঝাতেই পারলেন না, এটা স্রেফ নির্মল একটা কৌতুক। সেই থেকে হুমায়ুন আহমেদ রসিকতা করার খেত্রে সতর্ক থাকতেন। কারন বাংগালী রসিকতা বোঝে না। বাংগালীর রসবোধ দুর্বল!
মন্ত্রী মহোদয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই।
আবার এও হতে পারে, মাননীয় মন্ত্রী একটা আইডিয়ার কথা বলেছেন। অর্থাত কচুরিপানা নিয়ে গবেষনা হতে পারে। এটাকে কিভাবে গরুর মত খাদ্যে পরিনত করা যায়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষনা করবেন। আমরা বানিজ্যিক ভিত্তিতে কচুরিপানার চাষ করব। দেশে দেশে কচুরিখাদ্য রপ্তানি করব। কচুরিখাদ্যের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকবে 'মেইড ইন বাংলাদেশ'
কচুরিপানা রপ্তানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব। আমরা হব কচুরিপানায় স্বয়ংসম্পুর্ণ জাতি। বিশ্বের দরবারে আমাদের নাম উজ্জ্বল হবে।

আফসোস! বেকুব বাংগালী মন্ত্রী মশাইয়ের কথার মর্ম ধরতেই পারল না। উন্নত কোন দেশ হলে এতদিনে হইচই পড়ে যেত। বিজ্ঞানী মহলে এই আইডিয়া নিয়ে কাজ করার জন্য হুড়াহুড়ি লেগে যেত। অথচ এই দেশে লোকজন হাসাহাসি করিয়াই দিন পার করিতেছে....
এজন্যই ডক্তর মুহাম্মাদ শহিদুল্লাহ বলিয়াছেন, যে দেশে গুনীর কদর নাই , সেই দেশে গুনী জন্মাইতে পারে না...

সময় হইয়াছে, এইসব গুনী মানুষদের কদর করার. তাদের গুনের মর্যাদা দেবার.
আশার কথা হইল, সবাই এত বেকুব নয়। কিছু মানুষ মাননীয় মন্ত্রীর কথার মর্ম বুঝিতে পারিয়াছেন। তাইতো পত্রিকার পাতায় কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যের রেসিপি শোভা পাইতেছে।

সেদিন দেরি নয়, যেদিন জেলায় জেলায় কচুরিপানার রেস্টুরেন্ট হইবে। তাহাতে কচুরিপানা উইথ টাকি ফিশ, চিকেন বিরিয়ানী উইথ কচুরিভর্তা, দুধ কচুরি পিঠা ইত্যাদি খাবার থাকিবে। ছেলেমেয়েরা সেই সব রেস্টুরেন্টে লাইন ধরে ভীড় জমাবে, একে অন্যকে কচুরিপানার ট্রিট দিবে।
সেই শুভ দিনের প্রত্যাশায় রইলাম...
(এই লিখা গুরুচন্ডালি দোষে দুষ্ট।
ভাল কথা, গুরুচন্ডালি শব্দের মানে জানেন তো? সঠিক উত্তর দাতাদের জন্য থাকবে গরুখাদ্য কচুরিপানা নিয়ে কচুরিপানা রেস্টুরেন্টে বুফে খাবারের ব্যবস্থা)

Shamsur Rahman Omar

পঠিত : ৯০১ বার

মন্তব্য: ০