Alapon

মৃত্যুর কোনো কাল-অকাল নেই...


গতকাল সকালবেলা অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। হঠাৎ অফিসের একজন সিনিয়র কলিগ ফোন দিয়ে বললেন, আমাদের অপর একজন কলিগের বাবা মারা গেছেন! আচমকা খবরটা শুনে আঁতকে উঠলাম। তারপর সেই ভাইকে ফোন দিয়ে শুনলাম, তার বাবা রাতের খাবার খেয়ে সুস্থ মানুষের মতই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আর ঘুমের মাঝেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

পরে সন্ধ্যায় তাকে ফোন দিলাম, শুনলাম দাফন হয়ে গেছে। যেই সময় দাফন হয়ে গেছে, তার আগের দিনই হয়তো সেই মানুষটা সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন। হয়তো তখন অফিসে থেকে ফিরে জামা-কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে চা খাচ্ছিলেন। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে অফিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অল্প-স্বল্প গল্প করছিলেন। হয়তো তার স্ত্রী বলছিলেন- কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হবে। আজতো কেনা হলো না। আগামীকাল অফিস থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসিও। তিনিও হয়তো সম্মতি জানিয়ে বলেছিলেন- ঠিক আছে নিয়ে আসবো ইনশা আল্লাহ। কিন্তু পরের দিন ঠিক সেই সময়ে তিনি কবরের বাসিন্দা হয়ে গেছেন। কী অদ্ভুত ব্যাপার!

আর সকালে অফিসে আসার সময় দেখলাম, পুলিশ একটি বেওয়ারিশ লাশের বন্দোবস্ত করতে ব্যস্ত। একজন ভ্যানওয়ালা রাতে নিজের ভ্যানেই ঘুমিয়েছিলেন। সকালবেলা সবাই বুঝতে পারে সেই ভ্যানওয়ালা মারা গেছে। হয়তো ঘুমের মাঝেই হার্টঅ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেছে।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে ধ্রুব সত্য মৃত্যু। অথচ মানুষ সেই মৃত্যুর কথাই সবচেয়ে বেশি ভুলে থাকে। মানুষের চলন-বলন দেখে কখনো মনেই হয় না, তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

এমনকি আমি নিজেও যেন মৃত্যুকে ভুলতে বসেছি। দুনিয়া নিয়ে অনেক বেশি মত্য হয়ে গেছি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই গোসল, নাস্তা করে অফিসে ছুটছি। অফিস শেষ করে ফিরতে ফিরতে সেই রাত ১১ টা বেজে যাচ্ছে। কখনো বাহিরে খেয়ে ফিরি, কখনো বাসায় খাই। খেয়ে দেয়ে ফেসবুকের নোটিফিকেশন আর ইনবক্স চেক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন আবার একই রুটিন। নিজের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এই দুনিয়াটাই সব। যার কারণে ব্যতি-ব্যস্ত হয়ে সবকিছু ভুলে দুনিয়ার সফলতার পিছনে ছুটছি।

কিন্তু এমনও তো হতে পারে, আজ রাতে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়েছি। আর সেই ঘুমই হয়তো আমার চির ঘুম হয়ে যাবে। ঘুমের মাঝেই মৃত্যুবরণ করব। এমনটা হতেই পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকেই বলেন- আহহারে! লোকটা অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এগুলো অবান্তর কথা। মৃত্যুর কাল আর অকাল নেই। আল্লাহর যখন হুকুম হবে ঠিক তখনই মৃত্যু হবে। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্ঠ করে বলেছেন। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তাই মৃত্যুর কোনো অকাল নেই। বরঞ্জ মৃত্যুই সবচেয়ে ধ্রুব সত্য। আর এই মুহুর্তে যদি মৃত্যুবরণ করি তাহলে আল্লাহর সামনে দাড়ানোর মত প্রস্তুতি আমার আছে কি?

মনে হয় না! সেই আত্মবিশ্বাস আমার নেই। ভাবছি, দুনিয়ার ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য যেভাবে পাগলাপারা হয়ে ছুটছি, আখিরাতের ব্যবসার জন্য আমার মাঝে সেই পাগলপারা ভাব নেই কেন? অথচ আখিরাতের ব্যবসাটাই চিরস্থায়ী। আর দুনিয়ার ব্যবসাটা ক্ষণস্থায়ী। অথচ চিরস্থায়ী ব্যবসা ছেড়ে আমি এবং আমরা ক্ষণস্থায়ী ব্যবসা নিয়েই মজে আছি।

পঠিত : ৫৭৯ বার

মন্তব্য: ০