Alapon

আমানত সুরক্ষা না চোর সুরক্ষা?



আমাদের দেশে ‘আমানত সুরক্ষা আইন ২০২০’-এর যে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে, তা আদৌ গ্রাহকদের আমানতের সুরক্ষা দেবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন আকারে ধরা দিয়েছে। এটা মোটেই আমানত সুরক্ষা নয় বরং এটা হচ্ছে চোর সুরক্ষা।

বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাংক লুটপাট। কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে এটা সবারই জানা। বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, জনতা ব্যাংকসহ বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে আছে। চোর চুরি করছে আর সেই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে আমাদের দেওয়া কর থেকে। আর এদিকে আমানত সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে চোরদের আরো চুরি করার অপশন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর টাকা কারা চুরি করছে? কত টাকা চুরি হচ্ছে তা এখানে আর না বললাম। এগুলো নিয়ে বিস্তর জানাশোনা এখন সবারই আছে।

নতুন চূড়ান্ত হওয়া আইনটিতে যেসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত (বন্ধ) হলে প্রত্যেক আমানতকারী সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো গ্রাহকের একাধিক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ টাকার বেশি থাকলেও তিনি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকাই পাবেন। একজন গ্রাহকের ১ কোটি টাকা ব্যাংকে থাকলে সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হলে গ্রাহক ওই ১ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাবেন না, অর্থাৎ তার প্রায় পুরোটাই ক্ষতি। তাহলে এটি কী ধরনের সুরক্ষা আইন!

প্রকৃতপক্ষে আমানত সুরক্ষা আইনটি মাঝারি ও বড় আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে। এর ফলে শুধু যে আমানতকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। এর ফলে কেউ টাকা ব্যাংকে রাখার জন্য আগ্রহী হবে না। প্রথমত সুরক্ষা নাই, দ্বিতীয়ত ব্যাংক লুটেরা গোষ্ঠী হর-হামেশা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা ধীরে ধীরে আমানত তুলে নেবেন।

দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ কোটি হিসাবধারী গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ১ লাখ টাকার বেশি। শুধু উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নয়, বহু সাধারণ মানুষেরই এখন ১ লাখ টাকার উপরে এফডিআর রয়েছে। তাদের আমানতের সুরক্ষা দেয়া জরুরি। সম্প্রতি একটি লিজিং কোম্পানি অবসায়িত হলে এর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘শিডিউল ব্যাংকিং স্ট্যাস্টিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যক্তি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। মোট ১০ কোটি ২৫ লাখ অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা আছে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত অ্যাকাউন্টে আমানত আছে এমন অর্থের পরিমাণ ৬০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। আমানত সুরক্ষা আইনে সুরক্ষিত থাকবে মাত্র ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ অর্থ। ব্যক্তি খাতের ৯৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ আমানতই ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।

একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিধায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা তাদের আমানত সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে অনুধাবন করছেন। তাছাড়া দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অত্যধিক খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানতকারীরা তাদের অর্থ তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহকদের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যেখানে আরও বেশি জরুরি, সেখানে ক্ষতিপূরণের নামে উল্টো ‘ক্ষতির’ বিধান সংবলিত আইন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এ আইনের মাধ্যমে মূলত লুটেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থেরই সুরক্ষা হবে, গ্রাহকদের নয়। কাজেই গ্রাহকদের আমানতের সুরক্ষার দিক বিবেচনা করে আইনটি শুধু নামে নয়, সত্যিকার অর্থেই যুগোপযোগী করা দরকার বলে আমরা মনে করি। এই ব্যাপারে আমাদের আরো সোচ্চার হওয়া দরকার। নইলে লুটেরা আওয়ামী গোষ্ঠি দেশের সম্পদ লুটের পর এখন ব্যক্তি সম্পদে হস্তক্ষেপ করবে অথচ এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

পঠিত : ৪৬৫ বার

মন্তব্য: ০