Alapon

ভাষার মাসে আমার প্রশ্ন- 'শহীদ' না 'শহিদ' ?


আজকাল 'শহীদ' লিখলেই বাংলাভাষার শুদ্ধাচারকারীগণ মারমুখী হয়ে উঠছেন।
ছি: ছি: রব তুলে ফেলছেন!
আমি তাদের দোষারোপ করছি না। পরিষ্কার উপলব্ধি করতে পারছি, বাংলা একাডেমি অতিসম্প্রতি অনেক গবেষণা, সমীক্ষা ও তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে 'শহীদ' এর 'হ' থেকে ঈ-কার বিতাড়িত করে ই-কার যুক্ত করে 'শহিদ' করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে ! যেমনটি করা হয়েছে ক'দিন পূর্বে।

'ঈদ' থেকে 'ঈ' সরিয়ে 'ই' যুক্ত করে 'ইদ' বানিয়ে বাংলা একাডেমি নামক এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিরাট গবেষণালব্ধ ফল দেশ ও জাতিকে উপহার(!) দিয়েছে! আর আমরা বাঙালিরা গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে বাংলা একাডেমির সেই সব তথাকথিত ভাষাবিদদের সাথে সুর মিলিয়ে 'ঈদ'কে 'ইদ' লিখছি এবং অতিসম্প্রতি 'শহীদ'কে 'শহিদ' লিখছি! কেউ এটা না মানলে ভুল বানান বলে ছি: ছি: রব তুলছি! বাংলা ভাষার জাত গেল বলে আফসোস করছি!

তার আগে বাংলা একাডেমির সম্মানিত গবেষকরা কী করেছেন?
উত্তরটা শুনুন ; তার আগে তারা শ্রেণী, বাড়ী, গাড়ী, নারী এসব শব্দকে শ্রেণি, বাড়ি, গাড়ি, নারি লিখার তাগাদা দিয়েছেন! জাতিকে উদ্ধার করেছেন আর কি!

তারও আগে বাংলা একাডেমির পন্ডিতগণ বলেছেন, জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী, ষ্টেশনারী, জুয়েলারী এসব বিদেশি শব্দগুলিকে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, ষ্টেশনারি, জুয়েলারি এভাবে লিখতে হবে!
আরে ভাই! বিদেশী শব্দগুলির শেষে ই-কার লাগালেই কী আর ঈ-কার লাগালেই বা কী? যেখানে বাংলাএকাডেমির উচিত ছিল এসব বিদেশী শব্দ ব্যবহার করা থেকে বাংলাভাষাভাষীদের নিষ্কৃতি দিয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য নতুন বাংলা শব্দ উদ্ভাবন করে বাংলা শব্দভান্ডারকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা; সেখানে তাদের চিন্তা শব্দের শেষে ঈ-কার যুক্ত শব্দগুলির ঈ-কার প্রতিস্থাপন করে ই-কার যুক্ত করা! বাহ! কী অসাধারণ কর্মযজ্ঞ!

যেখানে বিশ্বের অন্যান্য স্বীকৃত ভাষার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে বছর বছর, তাদের অভিধানগুলির নতুন সংস্করণের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে বিশ্বে ষষ্ঠস্থানে থাকা বাংলাভাষার শব্দভান্ডার আগের মতই রয়ে গেছে যুগের পর যুগ! যেহেতু বাংলাভাষার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ নয় সেজন্য বাংলাভাষায় অনেক বিদেশী শব্দ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে কথায়, লেখায়!
মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাংলার পন্ডিতগণের দ্বারা পর্যায়ক্রমে এবং কালক্রমে উদ্ভাবিত শব্দভান্ডার দিয়েই চলছে বাংলা একাডেমির গবেষণা ও এখানকার তথাকথিত পন্ডিতদের জারিজুরি আর বাহাদুরি।

এ ছাড়া সর্বস্তরে শুদ্ধ বাংলাভাষা চালু করার যে মহান দায়িত্ব বাংলা একাডেমির উপর বর্তেছিল, সেই দায়িত্ব ও আদর্শ থেকে বাংলা একাডেমি যোজন যোজন দূরে!

এবার মূল কথায় ফিরি, বাংলা বর্ণমালা থেকে ঈ-কার সরিয়ে দেবার দুরভিসন্ধি বাংলা একাডেমির অনেক আগে থেকেই। তার সর্বশেষ গবেষণালব্ধ ফল(!) 'শহিদ', 'ইদ' ! তার আগে গবেষণায় কী কী শব্দ ই-কার সংযুক্ত করে অলংকৃত করে বাঙালি জাতিকে ধন্য করেছে এই বাংলা একাডেমি তা উল্লেখ করেছি আগেই!
রক্তের দামে কেনা বাংলা ভাষার বর্ণমালা থেকে ঈ-কার সরানোর পাঁয়তারা অনেক আগে থেকেই করছে এই বাংলা একাডেমি, এবং তারা সফলকাম হচ্ছে বলাই যায়।

আসল কথা হল সুদীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাসে বাংলা একাডেমি দেশ ও জাতিকে তেমন কিছু দিতে পারেনি! বছর বছর একুশে বইমেলার আয়োজন, একুশে পদক আর বাংলা একাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠান করা ছাড়া দৃশ্যত আর কোন কাজ করেনি বা করতে পারেনি! না ফলপ্রসূ গবেষণা, না সর্বস্তরে শুদ্ধ বাংলাভাষা চালুকরণ।

আসল কথা, বড় অংকের রাষ্ট্রীয় অর্থের শ্রাদ্ধ করে বাংলা একাডেমির গবেষক ও পন্ডিতদের অন্তত এটুকু জানান দিতে হবে যে, বাংলাভাষা নিয়ে তারা নিরন্তর গবেষণায় ব্যস্ত ও লিপ্ত! তারই সর্বশেষ ফল, 'শহীদ'কে 'শহিদ' আর 'ঈদ'কে 'ইদ' এ রূপান্তর করা এবং জাতিকে এভাবে লেখার তাগাদা দেয়া!

কয়েকদিন পর উ-কার দিয়ে ঊ-কার সরানোর কর্মযজ্ঞে মেতে উঠবে ধামাধরা, ঘুণেধরা এই বাংলা একাডেমি!
মানে বাংলা বর্ণমালা থেকে ঈ-কার সরানোর পর গবেষণার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ঊ-কার সরানোর কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবে এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক-পন্ডিতেরা!

আচ্ছা! জাতি হিসেবে আমরা কি এতটাই নি:স্ব ও মেরুদন্ডহীন যে, বাংলা একাডেমি নামক এক প্রতিষ্ঠানের তথাকথিত কয়েকজন ভাষাগবেষক ও পন্ডিত কর্তৃক রক্তের দামে কেনা বাংলা বর্ণমালা থেকে বর্ণ বিতাড়ণের হঠকারী সিদ্ধান্ত মেনে নিব? নাকি বাংলা একাডেমির মুষ্টিমেয় কিছু বাঙালি পন্ডিত ও গবেষকদের চাপিয়ে দেয়া অবিমৃষকারি সিদ্ধান্ত পুরো সচেতন ও শিক্ষিত বাঙালি জাতিকে বয়ে বেড়াতে হবে?

আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি!
সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা!!

@রাজ কামাল

পঠিত : ২১৫৭ বার

মন্তব্য: ০