Alapon

বইয়ের জগতেও দিন বদলাতে শুরু করেছে...


বইমেলার শুরুর দিকের কথা। সন্ধ্যার দিকে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে মেলার স্টলগুলোতে ঘুরছি। এমন সময় মাথা ভর্তি সাদা চুল ওয়ালা এক আধা বুড়োকে দেখে খুব চেনা চেনা মনে হল। আরও একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম- আরে উনি তো কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক!

কিন্তু আনিসুল হকের এই নাঙাভুঙা অবস্থা কেন! নাঙাভুঙা বলতে, আগে দেখেছিলাম আনিসুল হকের পিছনে কতক তরুণ-তরুণীর ভিড় অবশ্যই থাকতো। তারা মুখে স্যার স্যার বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলত! কিন্তু তারপরও মাথা ভর্তি সাদা চুলওয়ালা এই আধাবুড়ো সাহিত্যিক তাদের পানে খুব একটা চাইতেন না। বরঞ্জ হাসি হাসি মুখ করে ক্রেতাদের অটোগ্রাফ দিতেই ব্যস্ত থাকতেন। আর আজ কিনা তার নাঙাভুঙা অবস্থা!

বইমেলার মধ্যক্ষণে কোনো এক শুক্রবার আর এক চুলপাকা বুড়ো লেখককে দেখলাম। যদিও সেই বুড়োর লেখা পড়ে সাইন্স ফিকশনের প্রতি একটা আলাদা প্রেম জন্মেছে। কিন্তু লোকে বলে, মাথাভর্তি সাদা চুল আর ইয়া বড় গোফওয়ালা জাফর ইকবাল সাহেব নাকি অধিকাংশ সাইন্স ফিকশন বিদেশি বই থেকে চুরি করে লিখেছেন।

এইতো কয়েক বছর আগের বইমেলাতেও এই বুড়োর পিছনে শতশত ছেলেমেয়ের লাইন ছিল। সেসব ছেলেমেয়েদের ভাবখানা দেখলে মনে হতো- এই বুড়োর কলমের খোঁচায় যদি একখানা অটোগ্রাফ পাওয়া যায় তাহলে জীবনে আর কিছু চাইবার থাকবে না! আর যদি একটা সেলফি তোলা যায়, তবে যেন আসমানের চাঁদ পাওয়া হয়ে গেল। ফেসবুকে লাইকের অভাব হবে না। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! এই বুড়োর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলে, ‘হা...হা...হা...’ রিঅ্যাক্টের তোপে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ে। তাই বুড়োর পিছনে ছেলেমেয়েদের লাইনও ছোট হয়ে এসেছে।

তবে এখন ফোকাস লাইট কোনদিকে?

গতকাল বইমেলায় এসেছিলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ, জনপ্রিয় আলোচক শায়খ আবদুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহসহ আরও অনেকে। যদিও তাদের কারোরই কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু গতকাল মেলার অধিকাংশ সচেতন তরুণরাই যেন তাঁদের পিছনে ছুটছিলেন। শাইখগণ যে স্টলেই যাচ্ছিলেন সেখানেই পাঠকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।

শাইখ আবদুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ সাহেবের সাথে সেলফি তোলার জন্য মানুষ রীতিমত প্রতিযোগিতা করেছে!

দিন বদলাতে শুরু করেছে! এখন আর চুরি করা সাইন্স ফিকশন আর স্বস্তা প্রেমের গল্পের যুগ নেই। এখন সময় সত্য ও সুন্দরের। এখন সময় মানসম্মত ইসলামি সাহিত্যের।

পঠিত : ১১৫০ বার

মন্তব্য: ০