Alapon

একটু ভেবে দেখবেন কি...?


প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন ৬১০ খৃষ্টাব্দের ৬ই আগষ্ট, ১৭ই রামাদ্বান সোমবার। নির্দেশিত হয়ে আত্মসমর্পণ করলেন এক আল্লাহর কাছে। কয়েকমাস পরে ‘কুম ফা আনজির’ হুকুম পেয়ে কুরআনের মিশন নিয়ে নেমে পড়লেন মাঠে, সমাজবাসীকে সাবধান করতে।

শুরু করলেন নিজের ঘর থেকে। বিন্দু পরিমান সংশয়ও ছিল না স্ত্রীর মনে, স্বামীর চারিত্রিক সততা ও সত্যবাদীতা, নির্মোহ ও নিষ্কলুষ চরিত্রের ব্যপারে কোন ধরনের সাফাই প্রয়োজন ছিল না। তাই তিনি দাওয়াত পাবার অপেক্ষায় ছিলেন না। বরং এই খাদিজা’ই (রাsmile সর্বপ্রথম অহী পাবার মত অপার্থীব অভিজ্ঞতায় প্রিয় স্বামী যখন ভয়ার্ত হয়ে পড়েছেন তখন তাঁকে শান্তনা দিয়ে বলছেন; তাঁর মত মহান ও উন্নত চরিত্রের মানুষের উপরে জ¦ীনের আসর হতে পারে না, তাঁকে আল্লাহপাক অপদস্থও করতে পারেন না।

নিখাঁদ উপলব্ধী এবং স্বাক্ষ্য ছিল এটা। কোন অতিরঞ্জন ছিল না । তিনি যে মহুর্তে বুঝতে পেরেছেন স্বামী সুস্পষ্ট আহ্বান নিয়ে মিশনে নেমেছেন, সেই মহুর্তে বিনাপ্রশ্নে, বিনাদ্বিধায় মেনে নিয়ে হলেন প্রিয় নবীর পরে প্রথম মুসলমান।

এরপরে প্রিয় নবী সা: এর চাচা আবু তালিবের পুত্র, দশ বৎসরের বালক আলি রা:। তারপরে কিশোর; যায়েদ, প্রখ্যাত সাহাবি হযরত যায়েদ রা:। এরপরে বন্ধু হযরত আবু বকর রা:। তার আহ্বানে সাড়া দিলেন মক্কার অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব হযরত ওসমান। তারপরে হযরত যুবাইর ইবনে আওম, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাদিআল্লাহু তাআা’লা আনহুম জামিয়া)।

মা খাদিজার পরে আটজন সম্মানিত সাহাবি এক এক করে মিশনের সাথে জড়িয়ে পড়লেন। কিছুদিন পরেই এই দলে যোগ দিলেন; আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ, আল আরকাম ইবনে আবি আরকাম, উসমান ইবনে মা’জুন, উবাইদাহ ইবনুল হারিস, সাইদ বিন যায়েদ, খাব্বাব ইবনে আ’রাত, আব্দুল্লাহ ইবনে মা’সুদ, আম্মার বিন ইয়াসির, বেলাল বিন রাবিয়াহ, ওমর ইবনুল খাত্তাব প্রমূখ (রাদিআল্লাহু তাআা’লা আনহুম জামিয়া)।

মিশনের সেই প্রথম দিন থেকে তিনি সা:, তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ কি নিদারুণ শারীরিক, সামাজিক, মনস্তাত্বিক এবং অর্থনৈতিক নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন তা বর্ণনাতীত, এমনকি, ধারণারও বাইরে। সুমাইয়্যা খাব্বাব, খুবাইব (রাদিআল্লাহু তাআা’লা আনহুম জামিয়া), নির্যাতনের মুখে এঁদের শাহাদাতই সে কথার স্বাক্ষ্য বহন করে, স্বাক্ষ্য বহন করে হযরত বেলালের পিঠে পোড় ঘায়ের চিহ্নও।

অর্থনৈতিক বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্য আর মনোদৈহিক নির্যাতনে যখন এইসব সম্মানিত ব্যক্তিরা অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো দেশ ত্যাগ করে হিজরতের। তিনি হিজরত করলেন। তবে ততদিনে তেরটা বছর, বা স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, চার হাজার তিনশত পঁয়ত্রিশ (৪৩৩৫) দিন পেরিয়ে গেছে। এই দীর্ঘসময়ে এই মিশনে যোগ দিয়েছেন মাত্র তিনশত (৩০০) জন!

আর এই তিনশতজনের মধ্যে মক্কা থেকে ছিলেন মাত্র একুশ জন, বাকি দুইশত উনআশি জন (২৭৯) ছিলেন মক্কার পাশর্^বর্তি অঞ্চলসহ বিশে^র বিভিন্ন স্থান হতে আগত গুটিকতক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যেমন; পারস্যের সালমান ফারসি রা:, রোমের শুয়াইব রা:, আবিসিনিয়ার বেলাল রা:, আফগানিস্থানের হযরত মালিক বিন দিনার রা:, ভারতের তাজউদ্দিন রা: প্রমুখ।

এইখানে এসেই আমাদের জন্য চিন্তা ও ভাবনার এক বিরাট খোরাক রয়েছে, রয়েছে শিক্ষাও। যে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহকে পুরো মক্কাবাসী আজন্ম ‘আস সাদিক’ ‘আল আমিন’, বিশ^াসযোগ্য ও আস্থাভাজন জানতো, সেই সমাজে কয়েক হাজার জনশক্তির মধ্যে মাত্র একুশ জন তাঁর এই দাওয়াতকে গ্রহণ করলো!

অথচ যে মিশনের দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে, সেই দাওয়াত তারা যেমন জানতো, তেমনি যুগ পরাম্পরায় চলে আসা ভবিষ্যৎবাণীর কারণে এটাও জানতো যে, তাদের এই ভুমিতেই এক সময় একজন নবীর আগমণ ঘটবে। তারপরেও তারা এই দাওয়াতকে মেনে নিল না, নিতে চাইলো না!

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, প্রিয় রাসুল সা: সহ এই গুটিকতক নওমুসলিমকে তাদের মিশনের বাণী উপস্থাপনের ক্ষেত্রে কি চরম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে!

আজ যে সব ‘আল্লামা আর জানবাজ দা’ঈ ইলাল্লাহগণ দু’চারবার কুরআনের বাণী তুলে ধরেই অধৈর্য হয়ে হাল ছেড়ে দেন, ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন, তাদের জন্য এ ইতিহাসের মধ্যে এক বিরাট শিক্ষা ও উপদেশ লুকিয়ে রয়েছে। ইতিহাসের দর্পণে তারা কি একবার নিজেদেরকে বিচার করে দেখবেন?

@জিয়াউল হক

পঠিত : ৫২২ বার

মন্তব্য: ০