Alapon

পিলখানা হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ঘটনা...


১৬ এপ্রিল ২০০১ সাল! ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহিনী আচমকা নোম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে বাংলাদেশের সিলেট সীমান্ত অভিমুখে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। রাস্তা নির্মাণ করে তারা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তি এলাকা পদুয়াকে কানেক্ট করছে।

বাংলাদেশের তৎকালীণ সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআর ভারতের এহেন কাজের বারবার প্রতিবাদ করা স্বত্ত্বেও, ভারত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে নোম্যান্স ল্যান্ডে রাস্তা নির্মাণ অব্যাহত রাখে এবং সেখানে ৎঅস্থায়ী ক্যাম্প গঠন করে। এরপর বিডিআর তাদের পতাকা বৈঠকে বসার আহব্বান জানায়। কিন্তু ভারত সেই আহব্বানে সাড়া না দিয়ে রাস্তা নির্মাণ অব্যাহত রাখে।

অতঃপর ১৬ এপ্রিল রাতে বিডিআরের ৪০০ জওয়ান বিএসএফের নোম্যান্স ল্যান্ডে সদ্যস্থাপন করা ক্যাম্প অভিমুখে অপারেশন চালানোর জন্য মুভ করে। তারপর বিডিআর যখন পুরো বিএসএফ ক্যাম্প ঘেরাও করে মাত্র ৬ টি ফায়ার করে- তখন ক্যাম্পে থাকা ৭০ জন বিএসএফ সদস্য আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। পরে তাদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।

এরপর ভারত পতাকা বৈঠক আহব্বান করে। পতাকা বৈঠকে ভারত অনুরোধ করে- এর মাঝে যেন কোনো দেশই কোনো সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে।

কিন্তু ভারত প্রস্তাব দিয়ে সেই ভারতই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে।

১৮ এপ্রিল ২০০১ সাল। মধ্যরাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহিনীর প্রায় ৫০০ জওয়ান কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেই বিডিআরের পেট্টোল ক্যাম্পে হামলা করে। তখন ক্যাম্পে মাত্র ১১ জন বিডিআর জওয়ান অবস্থান করছিলেন। ভারতীয় বাহিনীর আকর্ষিক হামলায় শাহাদাত বরণ করেন বিডিআরের ল্যান্স নায়েক ওয়াহেদুজ্জামান।

ভারতীয় বাহিনী ভেবেছিল- এবার হয়তো বিডিআরের বাকি সদস্যরা আত্মসমর্পন করবে। কিন্তু ঘটনা ঘটল পুরো উলটো!

সহযোদ্ধার শাহাদাতে উজ্জিবিত হয়ে বাকি ১০ জন জওয়ান মাত্র মাত্র ২ টি সাব মেশিনগান এবং হালকা অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। আর তৎক্ষনাত সংবাদ পেয়ে রৌমারী সীমান্ত অভিমুখে ছুটতে থাকে আরও ৪০০ বিডিআর জওয়ান।

ভোর রাত থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত সেই ১০ জন বীর জওয়ান প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। বাকি জওয়ানরা ঘটনাস্থলে পৌঁছা মাত্রই বিডিআর অল আউট অ্যাটাক শুরু করে। বিডিআর বাহিনীর অলআউট অ্যাটাকে কূলকিনারা হারিয়ে ফেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফ। এক পর্যায়ে তারা ১৮ জন বিএসএফ জওয়ানের লাশ বাংলাদেশ সীমান্তে রেখেই পালিয়ে যেতে শুরু করে।

পরবর্তীতে শোনা যায়, সেই যুদ্ধে বিএসএফ তাদের শতাধিক জওয়ানকে হারিয়েছিল। আর আমরা হারিয়েছিলাম ৩ জন বীর জওয়ানকে। যারা দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছে। মহান আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন।

সেই যুদ্ধের পর ভারতের তৎকালীণ ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান, “এ ঘটনার বদলা নেয়া হবে।”

সেই ঘটনার বদলা স্বরূপ ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় বিডিআর অফিসারদের উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।

আগে যে বিডিআরকে দেখলে ভারতের বিএসএফরা প্যান্টে হিসু করে দিতো, আজ সেই বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে! এর চেয়ে লজ্জার কথা বাংলার মানুষের জন্য আর কিছু হতে পারে না!

পঠিত : ৬৭৬ বার

মন্তব্য: ০