Alapon

বাবরি মসজিদের জায়গার দাবি ছেড়ে দিলো মুসলিমরা



ভারতের অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে আলোচিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের পাশাপাশি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে অযোধ্যার মধ্যেই অন্য স্থানে বিকল্প পাঁচ একর জমি দিতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিলো দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এখন রায় মেনে সরকারের দেওয়া পাঁচ একর জমি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের তরফে জানিয়ে দেয়া হয়, অযোধ্যায় কেন্দ্রের দেওয়া পাঁচ একর জমি তাঁরা গ্রহণ করবেন। তবে, ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি তৈরি হবে একটি গবেষণা কেন্দ্র, একটি হাসপাতাল এবং একটি পাঠাগার।

সোমবার লখনউতে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের বৈঠক ছিল। তাতেই কেন্দ্রের দেওয়া জমি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার ফারুকি বলেন, আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের দেওয়া পাঁচ একর জমি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফারুকি জানিয়েছেন, শীঘ্রই ওই জমিতে মসজিদ তৈরির জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হবে। সেই ট্রাস্টই ঠিক করবে কীভাবে, কত বড় মসজিদ তৈরি হবে। ওই মসজিদটির নাম মোঘল সম্রাট বাবরের নামে রাখা হবে কিনা, সেটাও ঠিক করবে ওই ট্রাস্ট। ওই পাঁচ একর জমিতে শুধু মসজিদ তৈরি হবে না। ওখানে একটি ইন্দো-ইসলামিক গবেষণাকেন্দ্র, একটি কেন্দ্রীয় পাঠাগার এবং একটি লাইব্রেরিও তৈরি করা হবে। এছাড়াও, ওই জমিটিকে আর কোনও সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা করা হবে। মসজিদটি ঠিক কত বড় হবে, তা ঠিক করা হবে পরিস্থিতি বুঝে।

প্রসঙ্গত ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে একদল উগ্রপন্থী করসেবক, যারা সেখানে গিয়েছিল মসজিদটির স্থানে একটি অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ করতে। তখন স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের ভারতে একটি বড় ধরনের দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। এর ফলে দুই হাজারের মতো মানুষ মারা যায়। যার ৯৫ শতাংশই মুসলমান।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় লিখেন, ‘রায়টা কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হলো, সবটা ঠিক বুঝতে পারছি না। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই আদালত একটা রায় দিলে তাকে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না। চার শ-পাঁচ শ বছর ধরে একটা মসজিদ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেই মসজিদকে আজ থেকে ২৭ বছর আগে ভেঙে দেওয়া হলো বর্বরদের মতো আক্রমণ চালিয়ে।

আর আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলল, ওখানে এ বার মন্দির হবে। সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে তো একটা বিষয় রয়েছে! এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে দেশের সংবিধানের ওপর থেকে কারও ভরসা উঠে যায়। আজ অযোধ্যার ক্ষেত্রে যে রায় হলো, সেই রায়কে হাতিয়ার করে ভবিষ্যতে এই রকম কাণ্ড আরও ঘটানো হবে না, সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন?’

পঠিত : ৪৪৯ বার

মন্তব্য: ০