Alapon

সিরিয়ার ইদলিবে যা ঘটছে...


তুরস্ক তাদের ৩৬ জন সেনা হত্যার প্রতিশোধে সিরিয়া বাহিনীর উপর হামলা করেছে।
তুরস্ক প্রথমে ড্রোন হামলা করে সিরিয়ার এয়ার ডিফেন্সকে নিউট্রালাইজ করে। এরপর আনে এফ-১৬। এই পর্যন্ত বিশ্বের কোন যুদ্ধেই এমন ভাবে ঝাকে ঝাকে ড্রোন ব্যবহার করে হামলা করতে দেখা যায় নাই। তুরস্ক তাদের ড্রোন ওয়ারফেয়ার অত্যন্ত সফিস্টিকেটেড করে ফেলেছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আকার বলেছিলেন যে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি থেকে গত ৩ দিনে তুরস্ক সিরিয়ান বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে ১টি ড্রোন, ৮টি হেলিকপ্টার, ১০৩ টি ট্যাঙ্ক, ২ টি হাউইটজার, রকেট লঞ্চার এবং ৬টি এয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এরপর তুরস্ক সিরিয়ার দুইটা বোমারু বিমান, ৩টা ড্রোন ফেলে দিয়েছে আর সেই সাথে সিরিয়ার যুদ্ধবিমানের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন রানওয়ের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

নিশ্চিতভাবে ইদলিব ফ্রন্টে তুরস্ক সিরিয়ার বিশাল ক্ষতি করেছে।তুরস্কের এই হামলা ইদলিবের ফ্রন্ট লাইনে সিরিয়ান বাহিনীর সক্ষমতাকে ভালোভাবেই পঙ্গু করে দিচ্ছে।
ব্রিটেন ভিত্তিক যুদ্ধ নিরীক্ষক সিরিয়ান অবজারভেটরি বলেছে যে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত ৭৪ জন সিরিয়ার সরকারী সেনা এবং আসাদ সমর্থক সেনা (মিলিশিয়া, হেজবোল্লাহ সেনা) নিহত হয়েছে। তুরস্কের হামলায় নিহত হয়েছে ২১ জন আফগান হাযারা আর পাকিস্তানি মিলিশিয়া।

"ইরানের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে তুরস্কের হামলায় ২১ জন ইরানী নিহত হয়েছেন এবং ইরান-মিত্র লেবাননের মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ রবিবার বৈরুতে পাঁচজন যোদ্ধাকে দাফন করেছেন, লড়াইয়ে আটজন নিহত হয়েছেন।" ওয়াশিংটন পোস্ট।

বহুদিন হয়ে গেছে যে আসাদ-ইরান-হিজবোল্লাহরা সিরিয়ায় এমন হামলার সম্মুখীন হয় নাই, আর তার প্রধান কারন রাশিয়া তাদেরকে গত ৩ দিন কোন প্রকার এয়ার সাপোর্ট দেয় নাই। একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিল রাশিয়ান এয়ারফোর্স।

তুরস্কের ড্রোন হামলা চলাকালে রাশিয়া তুরস্ককে কোন প্রকার বাধা দানের চেষ্টা করে নাই। এরদোয়ান পুতিনকে হামলার আগেই সরে থাকার জন্য বলেছিল, " স্টেপ এসাইড, লিভ আসাদ টু আস'।"

এরদোয়ানের সাথে পুতিনের এই ঘটনাকে ভিত্তি করে কি ডিল হয়েছে জানা না গেলেও পুতিন হ্যাজ স্যাক্রিফাইজড সিরিয়া-ইরান টু এরদোয়ান। রাশিয়া এমনিতেও এখানে বিশাল সেনা প্রেসেন্স রাখে নাই, তাদের মুল অপারেশান হচ্ছে সিরিয়ায় আসাদ আর ইরানের গ্রাউন্ড ফোর্সকে এয়ার কাভার করে ডিফেন্স দেয়া। আসাদ যে পুতিনকে এর জন্য বিশাল অর্থ দেয় তাও না। তবে আসাদ রাশিয়াকে তাদের কিছু ন্যাচারাল গ্যাস আর ন্যাভাল ঘাটি লিজ দিয়েছে আগামী বহু বছরের জন্য, যা রাশিয়ার জন্য একান্তভাবে লাভজনক। তাছাড়া আমেরিকা সরে পরায় রাশিয়া এখানে তাদের মিড ইস্ট বলয় ভালোই বাড়াচ্ছে, প্রচুর অস্ত্র বিক্রি করছে।

“Russia’s central interests in Syria have been secured, whether political or economic, so Russia has nothing to gain by entering into an awkward and bloody confrontation with Turkey, which is a member of NATO.” Danny Makki, a Syrian analyst who works in London and Damascus

এবার বাকি আছে তুরস্কের গ্রাউন্ড এসল্ট, যার জন্য তুরস্ক গত এক মাস ধরে প্রচুর সমর সরঞ্জাম ইদলিবে জড় করেছে। সেই সাথে বিদ্রোহীদের দিয়েছে প্রচুর পরিমান এন্টাই ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল। যদিও এসব আসাদ ফোর্সকে ঠেকাতে সক্ষম হয় নাই। তবে এবার মনে হচ্ছে ইকুয়েশান বদলে গেছে।

"এক সপ্তাহ আগেও কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেছিলেন সিরিয়া থেকে তুরস্কের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তুরস্কের উপস্থিতি সিরিয়ায় এখন কেবল থাকবেই না, বরং এই মিলিটারি অপারেশান যখন শেষ হবে স্থায়ী চুক্তির ক্ষেত্রে তুরস্ক আগের চেয়ে আরও বেশি পাবে।" হাসান হাসান; নিউ ইয়র্ক টাইমস করেস্পন্ডেন্স, মিলিটারি কনফ্লিক্ট এনালিস্ট।
তুরস্ক ইফ্রান ও নর্থ ইস্ট সিরিয়ায় কুর্দিদের আক্রমণ করে তাদের বাস্তুচ্যুত করেছিল। জিহাদীদের সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল। তুরস্কের অধিনে যেসব সিরিয়ান দল আছে তারাও এবিউসিভ। এরপরও আসাদ বাহিনীর হাতে ইদলিবের গণহত্যা রোধ করার একমাত্র শক্তি এখন তুরস্ক।

গ্রিসের সীমান্ত এখন ১০ হাজার সিরিয়ান শরণার্থী জড় হয়েছে , যাদের উপর গ্রিস কাদুনে গ্যাস মারছে। একদিনের জন্য তারা শরণার্থীদের সহ্য করতে পারছে না অথচ তুরস্কে গত ৮ বছরের উপরে ৩৫ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী আছে। ইদলিবে কিলার আসাদ বাহিনী ঢুকলে তুরস্কে ঢুকবে আরও ৩০ লাখ শরণার্থী। যা তুরস্কের ধারন ক্ষমতার বাইরে। হিউমেনেটিরিয়ান গ্রাউন্ডে যে করেই হোক আসাদ বাহিনীকে ইদলিব থেকে দূরে রাখতে হবে।

Backing Turkey in Idlib saves human lives. Nothing else matters right now.

@Sabina Ahmed

পঠিত : ৬৫০ বার

মন্তব্য: ০