Alapon

তালেবান ও আমেরিকার শান্তিচুক্তি কি আফগানিস্তানে প্রকৃত শান্তি এনে দিতে পারবে?


আমেরিকাকে শান্তিচুক্তিতে আসতে বাধ্য করা নিঃসন্দেহে তালেবানের জন্য, বা আফগানিস্তানের জন্য বিশাল একটা অর্জন। কিন্তু শান্তির পথ এখনও বহুদূর। বিশাল হলেও আরও বৃহত্তর প্রক্ষাপটে এটা খুবই ছোট একটা স্টেপ।

সোভিয়েত ইউনিয়নও কিন্তু এক সময় পরাজিত হয়ে ফিরে গিয়েছিল। আফগানিস্তানে ইমিডিয়েটলি শান্তি আসেনি। মুজাহেদিনরা বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।

সেটা নব্বইয়ের দশকের ঘটনা। এখন টেকনোলজি অনেক বেশি উন্নত। টেকনোলজির উন্নতি মানেই সার্ভেইল্যান্সের উন্নতি। এখন ষড়যন্ত্র করার সুযোগও অনেক বেশি।

আমেরিকা চলে যাওয়ার পরেও লিটারেলি আফগানিস্তানের পরবর্তী শাসকদের প্রতিটা কর্মকাণ্ডই তারা নজরদারি করতে পারবে। নিজেদের পরাজয়ের কালিমাকে চাপা দেওয়ার জন্য তারা যদি আফগানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-গৃহযুদ্ধ জিঁইয়ে রাখতে চায়, নব্বইয়ের দশকের চেয়েও এখন সেটা আরো সহজে পারবে।

আলতাফ পারভেজ ভাই তার কলামে যেমন বলেছিলেন, আমেরিকানরা চলে যাওয়ার পর তালেবানরা কী মডেলে দেশ চালাবে, সেটাও পরিষ্কার না। এটা নতুন একটা পরিস্থিতি। তারা সম্পূর্ণ আগের মডেলেও ফেরত যাবে না, আবার প্রচলিত ইরান বা তুরস্ক মডেলকেও গ্রহণ করবে না। এটা ইউনিক একটা মডেল হবে। এবং এই মডেলে কীভাবে সব মতের মানুষকে স্থান দেওয়া হবে, সেটাও একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হবে।

কিন্তু সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা, সেটা হচ্ছে, শান্তিচুক্তিতে আমেরিকা কতটুকু অনেস্ট। আমেরিকা শান্তিচুক্তি করেছে, সে জন্যই সবাই বলছে, আমেরিকা পরাজিত হয়ে গেছে, শেষ হয়ে গেছে, তালেবান জিতে গেছে। বাস্তবতা পুরাপুরি সেরকমও না। আমেরিকা এখনও এক নম্বর সুপার পাওয়ারই আছে।

এই চুক্তিটা করা হয়েছে প্রধানত ট্রাম্পের উদ্যোগে। নির্বাচনের আগে "বিজনেসম্যান", "ডিলমেকার" ট্রাম্পের একটা বড় ধরনের শান্তিচুক্তি করে দেখানো দরকার ছিল। আইদার ইরানের সাথে, অর তালেবানের সাথে। ইরানের সাথে হয়নি, তালেবানের সাথে হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই সাময়িকও হতে পারে। নির্বাচনের পর এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে। ওবামা ইরাক থেকেও ট্রুপস সরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পর আবারও পাঠিয়েছিল।

আমেরিকার চুক্তিভঙ্গের নির্লজ্জ ইতিহাস আছে। ইরানের সাথে ওবামার করা চুক্তি ট্রাম্প এসে বাতিল করে দিয়েছে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যদি বার্নি স্যান্ডার্স না হয়ে অন্য কেউ হয়, সে কি এই চুক্তি মেনে চলবে? তালেবানের বাইরেও আফগানিস্তানে অন্যান্য যেসব তাকফিরি, খারেজি প্লেয়াররা আছে, বা বিদেশী যেসব এজেন্ট আছে, যারা এই চুক্তিতে অসন্তুষ্ট হবে, তালেবান যদি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে, তাহলে তাদের কোনো একটা হঠকারী কর্মকাণ্ডের (নাইন ইলেভেন ভার্সন টু) অজুহাতে আমেরিকা আবারও সেখানে সময়ে সময়ে বম্বিং করে দিয়ে আসতে পারে।

শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করা সহজ (অ্যাকচুয়ালি এটাও কঠিন, বাট তুলনামূলকভাবে সহজ), কিন্তু শান্তি বজায় রাখা অনেক বেশি কঠিন।

@Mozzamal Hossain Toha

পঠিত : ৪৪৬ বার

মন্তব্য: ০