Alapon

বিশ্ব পরাশক্তি এবং সাম্রাজ্যবাদের রূপান্তর...


(বহুবছরের যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্র ‘কথিত’ জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তিতে সই করেছে। চুক্তিটি সই হয়েছে কাতারের দোহাতে। চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্ত-১৪ মাসের মধ্যে আফগান ভূমি ছাড়তে হবে মার্কিন সেনাদের। কেউ বলছে,এটা যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়, কেউ আবার বলছে নির্বাচন সামনে রেখে এটা ট্রাম্পের ভোটে জেতার কৌশলের অংশ। তবে, যে যাই বলুক,তালেবান এবার বুক উঁচিয়ে বলতে পারছে, ‘আমরা সন্ত্রাসী নই’। যুক্তরাষ্ট্রও এটা মেনে নিয়েছে। দুই দেশের চুক্তি সইয়ের পর এনিয়ে বিভিন্নজনের নানা বিশ্লেষণ আপনারা পড়েছেন। তাই আপাতত বিশ্লেষণ বাদ। তবে, প্রসঙ্গক্রমে আফগানিস্তান নিয়ে নিচের এই লেখাটাও পড়তে পারেন। )
--------------------------------
প্রায় আড়াই লাখ বর্গমাইলের পার্বত্য দেশ আফগানিস্তান-কাবুল তার রাজধানী। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশটিতে নেই কোন সমুদ্রবন্দর। হিন্দুকুশ ও পাগমান পর্বতমালার এই দেশে দীর্ঘদিন ধরে যে লড়াই-সংঘাত চলছে তার অন্যতম কারন জাতিগত বিরোধ ও বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ। এখানে চার প্রধান জনগোষ্ঠীর বসবাস। পশতুন বা পাঠান (৬০%),তাজিক(৩১%), উজবেক(৫%) আর হাজারা(৩%)। এখানে মোঙ্গলরা হানা দিয়েছিল, ব্রিটিশরা এসেছিল,সোভিয়েত আগ্রাসন হয়েছিল আর সবশেষ ‘ওয়ার অন টেরোরের’ ছুতায় হামলে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোজোট। কিন্তু বেশিরভাগ বিদেশি শক্তিরই বিদায় হয়েছে অমর্যাদার সাথে। এছাড়া, কেউ কেউ এই ভূখন্ড মাড়িয়ে ভারতবর্ষ শাসন করে গেলেও তারা আফগানিস্তানে থিতু হতে পারেন নি।

আফগানিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ কথা বলে পশতুন ভাষায়,এরপরই তারা গুরুত্ব দেয় ফারসিকে। জালালবাদ থেকে কান্দাহার পর্যন্ত পশতুন তথা পাঠানদের বসবাস। প্রতিবেশি পাকিস্তানেও পশতুনদের ব্যাপক বসবাস রয়েছে। পশতুন নিয়ন্ত্রিত সরকারের মদদে এক সময় দাবি ওঠেছিল ‘পাখতুনিস্তান’ নামক রাষ্ট্র গড়ার। আর এই ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে আফগান সরকারের চলেছিল বিরোধ। তবে এখন আর সেই তৎপরতা দৃশ্যত নেই।

দেশটির সবশেষ বাদশাহ ছিলেন জহির শাহ। ১৯৭৩ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তারই ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাই সর্দার মোহাম্মদ দাউদ। দাউদ, জহির শাহের অধীনে এক সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ‘পাখতুনিস্তান’ নামক রাষ্ট্র গড়ার সমর্থকদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। দাউদের আবারো ক্ষমতায় ফেরার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ১৯৬৪ সালে আফগান বাদশাহ রাজনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দিলে তার প্রধানমন্ত্রিত্বে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে যায়। রাজ পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার প্রচলিত রীতি বন্ধ হয়ে যায় জহির শাহের সংস্কারের ঘোষণায়। বাদশাহর নিজের ক্ষমতাও কাঁটছাঁট করা হয়। রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে জহির শাহের সাথে সর্দার দাউদের বিভেদের শুরু এখান থেকেই। কর্নেল আসলাম ওয়াতানাজার ও কর্নেল আব্দুল কাদেরের সহায়তায় জহির শাহকে সরিয়ে দেন দাউদ। বাদশাহ আশ্রয় নেন ইতালিতে। কিন্তু সর্দার দাউদের পরিণতি হয়েছে আরো কঠিন। যে দুজন বিদ্রোহী কমান্ডারকে নিয়ে জহির শাহকে সরানো হয়েছিল,তারাই ছিল দাউদ অপসারণের মূল ভূমিকায়।

১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল ভোরবেলা আসলামের নেতৃত্বে ট্যাংক ইউনিট প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ঘিরে ফেলে। একই দিন বিকেলে কর্নেল কাদেরের নেতৃত্বে বিমান বাহিনীর বিমান থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গোলা নিক্ষেপ করা হয়। ভাই,স্ত্রী,ছেলে-মেয়ে,নাতি-নাতনি সহ নিহত হন সর্দার দাউদ। যাদের হয়ে আসলাম ও কাদের এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ধ্যান- ধারণায় বিশ্বাসী। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দলটির নাম ছিল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তান-পিডিপিএ। এই দলের তিন কান্ডারি- নূর মোহাম্মদ তারাকি,হাফিজুল্লাহ আমিন ও বাবরাক কারমাল। তাদের মধ্যে সিনিয়র নেতা তারাকি চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রে। ১৯৭৮ সালের ৩০ এপ্রিল একটি ডিক্রি জারি হয়। তারাকি পান দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রির দায়িত্ব। একই সাথে থেকে যান দলের মহাসচিবও। হাফিজুল্লাহ হন উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাবরাক কারমাল হন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও উপ-প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে আমিন প্রধানমন্ত্রী হন ,তারাকি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকেন। কিন্তু এই তিন রাজনীতিকের রেষারেষি আফগানিস্তানে বিদেশি হস্তক্ষেপের পথ খুলে দেয়।

@Sohel Rana

পঠিত : ৬৮৭ বার

মন্তব্য: ০