Alapon

ধারণা করা, একটি বিপদজনক প্রবণতা...


পুরানো কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে হঠাৎ একটা খতিয়ান পাওয়া গেলো। সেখানে দাদার নামে দেখা গেলো ৮০ শতক জমি। নাতিকে আর পায় কে। খুশিতে ডগমগ। খোঁজ নিয়ে দেখলো জমি দখল করে একই গ্রামের রহিমুদ্দিন। নাতি জমি দাবী করলো তার কাছে। রহিমুদ্দিন অবাক। এই জমি তারা গত ৫০ বছর ধরে দখল করে আসছে। তার পিতা ৩০ বছর ধরে দখল করে মারা গেলে গত ২০ বছর ধরে সে। হঠাৎ আরেকজনের দাবী!! বাবা দখল করতো এটুকু জানে সে, কিভাবে তা জানে না। দখল ছেড়ে দিতে রাজি হলোনা সে।
নাতি গেলো চতুর মাতবরের কাছে। খুলে বললো। রহিমুদ্দিনের সাথে সম্পর্ক ভালো না মাতবরের। সে বিজ্ঞের মতো বলল, জমি তো একসময় তোমার দাদাকে দখল করতে দেখেছি। এ জমি তো তোমারই পাওয়ার কথা বাপু। না দিলে মামলা করে দাও। দেখি ব্যাটা না দিয়ে থাকে কিভাবে।

নাতি মাতবরের পরামর্শে দখল উদ্ধারের মামলা করলো। সমন পেয়ে হাজির হলেন রহিমুদ্দিন। আইনজীবীর পরামর্শে দলিল খুঁজতে লাগলেন এবং রেজিঃ অফিস সন্ধানে নাতির দাদা দত্তা, রহিমুদ্দিনের পিতা বরাবরীয় ১৯৬৫ সালের একটা দলিলের সন্ধান পেলেন। দলিলটির জাবেদা নকল তুলে মামলার জবাবের সাথে আদালতে দাখিল করলেন।
নাতি তখন দেখলো এই দলিল থাকলে দাদার জমি তো সে পাবে না। অথচ সে ৮০ শতক জমির আশায় বুক বেঁধেছে। মাতবর বলছে জমি তারই পাওয়ার কথা। তারও স্থির ধারণা, জমি সেই পাবে। ৮০ শতক জমি! কম তো নয়।

তাহলে পাওয়ার উপায় কি? ঐ দলিদ বাতিল চেয়ে আরেকটা মামলা করতে হবে। সেই মামলায় দলিলটা বাতিল হলেই তো জমি পাওয়ার রাস্তা ফকফকা৷ ফলে সে আরেকটা মামলা করলো।

বছরের পর বছর মামলা চলতে থাকে। এর মধ্যে আরো কিছু অনুসঙ্গ যোগ হয়। নাতি জমি জোর করে দখল করতে চাইলে, রহিমুদ্দিন নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত দেয়। জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। নাতি তা লংঘন করে কিছু জমি দখল করে। সে সময় উভয় পক্ষের সংঘাতে কয়েকজন রক্তাক্ত হয়। হয় ফৌজদারী মামলা। সাথে নিষেধাজ্ঞা লংঘনের দায়ে ভাইলেশন মামলা।

এভাবে মামলার পরিমাণ বাড়তে থাকে। মামলার জালে আটকে পড়ে দুই পরিবার। শত্রুতা তৈরী ও হতাহত হওয়ার পাশাপাশি টাকা চলে যেতে থাকে বন্যার জলের মতো। গোছানো টাকা শেষ হওয়ার পর ধার শুরু হয়। এক পর্যায়ে শুরু হয় জমি বিক্রি। ততদিনে মামলার বিষয়টা জমিতে স্থির নাই কেবল, ওটা হারা জেতার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। জমি আরও তিন বিঘা যাক, মামলায় জিততে হবে।

এভাবে বার থেকে পনের বা বিশ বছর পার হয়ে যায়। একসময় রায় হয়। প্রমাণিত হয়, নাতির দাদা এখন থেকে ৫০ বছরেরও বেশি আগে ১৯৬৫ সালে জমিটা রহিমুদ্দিনের বাবার কাছে বিক্রি করেছিলো। পুরানো খতিয়ানে দাদার নাম থাকলেও বিক্রি করায় ঐ জমিতে দাদার কোন স্বত্ত্ব ছিলো না। ফলে ওয়ারিশ সূত্রে নাতিও ঐ জমি প্রাপ্ত হয় নাই। বিষয়টা মেনে নিতে পারে না নাতি। আপীল করে। মামলা পুনরায় চলতে থাকে বছরের পর বছর।

নাতি নিজেও একসময় দাদা হয়ে যান। তরুণ নাতি পৌঢ় মানুষে পরিনত হয়। মামলার চাপে পৌঢ় বয়সেই বার্ধক্য চলে আসে।
আপীলেও প্রমাণিত হয়, দাদার বিক্রির কথা। তখন আর মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। ততদিনে যৌবনের উজ্জ্বল সময় আর অর্থ হারিয়ে নিঃস্ব সে। কিছুই নেই অবশিষ্ট, শত্রুতা আর হতাশা ছাড়া।

একটা খতিয়ানে দাদার নাম দেখেই নিজেকে জমির মালিক বলে ধারণা করেছিলো নাতি। অভিজ্ঞ ও জানাশোনা কোন মানুষের সাথে আলাপ না করে, বিস্তারিত খোঁজ খবর না নিয়েই যাত্রা করেছিলো অনিশ্চিত পথে। মূল্যও দিতে হলো তার।

প্রশ্ন হলো, এদেশে এমন কি হয়? উত্তর হলো হাজারে হাজার।

যে কোন কোন বিষয়ে বিস্তারিত জানার পরই পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। মামলার ক্ষেত্রে তো বটেই। ধারনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ, বড় বিপদজনক।

@Shahdat Hossain

পঠিত : ১০৪৮ বার

মন্তব্য: ০