Alapon

সফলতার সংজ্ঞাটি কিন্তু এত সহজ-সরল নয়!


সফলতার সংজ্ঞাটি এত সহজ-সরল নয়। আজকে যাকে সফল মনে হচ্ছে, কাল তিনি ব্যর্থ হতে পারেন। সুতরাং এটা কোন চুড়ান্ত ফলাফল নয়। চুড়ান্ত সফলতা তাকেই বলা যাবে যা কখনো বিফল হবে না। অর্থাৎ এটি অর্জিত হবার পরে আর কখনোই হারিয়ে যাবে না। এরকম সফলতার কোন উদাহরণ আমাদের সামনে আছে কি?

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে সার্চ এঞ্জিন হিসেবে yahoo ছিল বিশ্বের এক নাম্বার পজিশনে। অনলাইন সার্চের ৫৬ শতাংশ ছিল ওদের দখলে। google এর সেসময় ১% মার্কেট। সফলতার যোগ-বিয়োগে yahoo তখন সফল ছিল। আজ google এর দখলে আছে ৬৫%, আর yahoo পাচ্ছে মাত্র ১৬%। এমনিভাবে সফলতার যত রেকর্ড আছে, তা ব্রেক করে এগিয়ে যাচ্ছে অন্য কেউ।

বলা হয়- "সাকসেস ইজ এ জার্নি, নট এ ডেস্টিনেশন" কথাটা কখনোই আমার পছন্দ হয়নি। কারণ একটা লোক এত দৌড়ঝাঁপ করে সবার আগে গিয়ে দু' মিনিট বিশ্রাম করতে গিয়ে যদি এমন আশংকা করে যে অন্য কেউ তাকে ওভারটেইক করে ফেলবে, তাহলে তার বসে থাকা চলবে না। তাকে অনবরত দৌড়াতে হবে। এর কোন ফিনিশ লাইন নেই। পদ্মা সেতুর কাজ ধরে যদি তা কোনদিন শেষ না হয়, কেউ বলবে না যে প্রকল্পটি সফল হয়েছে। অতএব কোনকিছুকে সফল হতে হলে তার চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছুতে হবে। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে কোন অভীষ্ট লক্ষ্যও নেই, বিশ্রামও নেই। আছে শুধু দৌড়।
বিশ্বের টপ পপুলার সেলফোন কোম্পানি NOKIA একটু বসেছিল, আর দৌড়াতে পারেনি। এখন বোধহয় মাইক্রোসফটের ক্রাচে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটছে।

একসময়ে দুনিয়া কাঁপানো লোকগুলো আজকে নেই। তাদের নামে কিছু স্তুতিবাক্য, কিছু মেকী আনুষ্ঠানিকতা, ফুল দেয়া, মৌনতা.... এসব তাদের কোন কাজে লাগছে? হ্যাঁ, তাদের অবদান আমরা উপভোগ করছি- এটা অনস্বীকার্য, কিন্তু তারা এখন কী অবস্থায় আছেন?

কোনকিছু সফল তখনই হয় যখন সেটা তার মেইন পারপাস সার্ভ করতে পারে। যেমন আমরা শুনতে পাই 'সফল পারমাণবিক পরীক্ষা', 'সফল অস্ত্রোপচার', 'সফল জাতীয় নির্বাচন' ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ্ মানব জাতিকে অবশ্যই একটা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। এটা কোন খেয়ালীপনা নয়, তিনি খেয়ালি নন। তিনি স্রষ্টা, মহা পরিকল্পনাকারী। সামান্য একটা মাছিকে গভীরভাবে নিরীক্ষন করলেই তাঁর (সুবহানা হুয়া তা'য়ালা) সম্পর্কে কিছুটা আন্দাজ চলে আসে। তিনি তাঁর মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে তিনি আমাদেরকে তাঁর ইবাদত ভিন্ন আর অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করেন নাই।
তাহলে বোঝা গেল যে আল্লাহ্ রব্বুল 'আলামীনের অনুগত হয়ে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, তাঁরই নির্ধারণ করা পথে এগিয়ে চলা হচ্ছে সফলতার উদ্দেশ্যে যাত্রা।

মানব সৃষ্টির পর থেকে এই পথে হেঁটেছেন নবী-রাসূলগণ, হেঁটেছেন আল্লাহর রাস্তায় জীবনদানকারী শহীদগণ, আর যারা সৎ পথে থেকে সৎ কর্ম করেছেন- তারা। তারা নয়, যারা নিজের গন্তব্য নিজের ইচ্ছেমত নির্ধারণ করে নিয়েছে।

যারা তাদের অস্তিত্ব, তাদেরকে সৃষ্টি করার পিছনে মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্য- অর্থাৎ তাদের জীবনের মেইন অবজেক্টিভ সম্পর্কে জেনে-বুঝে সে অনুযায়ী যথাসাধ্য আমল করেছে, তাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা নিজেই সফল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, আর তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন,

يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ
হে প্রশান্ত মন,
ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً

তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।
فَادْخُلِي فِي عِبَادِي

অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।

وَادْخُلِي جَنَّتِي

এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।

[সূরা আল ফজর, আয়াত ২৭-৩০]

এটাই মানবজাতির চুড়ান্ত লক্ষ্য, আর একেই বলে সফলতা। এই অর্জনের পরে আর কোন মিশন নেই, এটাই ফিনিশ লাইন।

আমাদের জীবন-মরণের মালিক, যাঁর দাসত্ব আমাদেরকে অন্য সকলপ্রকার দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়, যিনি আমাদের একমাত্র উপাস্য, সেই সুমহান রবের কাছে আমাদের চাওয়া- তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও রহমতের চাদরে ঢেকে নেন!

cltd

পঠিত : ১২০৩ বার

মন্তব্য: ০