Alapon

করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে রহস্যময় দিক এবং কিছু কথা...


করোনাভাইরাসের সবচেয়ে রহস্যময় দিক হচ্ছে, এই ভাইরাস শিশুদের তেমন আক্রমণ করছে না; আক্রমণ করছে বয়স্কদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনে আক্রান্তদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ শিশু, যাদের মধ্যে ০.২ শতাংশ মারাত্মক অসুস্থতার শিকার হয়েছে। আর চীনের এই মহামারীর মধ্যে কোনও শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। বলা যায়, শিশুদের রেহাই দিচ্ছে করোনাভাইরাস। [এখানে ১০ বছরের কম বয়সীদের কথা বলা হচ্ছে।] আসলে শিশুরা তো মাসুম।

তবে আমার কাছে এর চেয়েও রহস্যজনক লাগে করোনাভাইরাস কিংবা অন্য যেকোনও দুর্যোগের বিষয়ে মুসলিমদের [একাংশের, যাদের মধ্যে আবার অনেকে আছেন, যারা নিজেদের ইসলামপন্থী পরিচয় দেন] অবস্থান নিয়ে। কোনও দুর্যোগ আল্লাহর আজাব কিংবা গজব হিসেবে আসতে পারে কিনা- এ নিয়ে তারা উদ্ভট যুক্তিতর্কের সূত্রপাত করেন। সবকিছুর পেছনে মানবিক পর্যবেক্ষণ-নির্ভর যুক্তির দলিল খোঁজেন তারা। সেক্যুলার চিন্তার কাছে মনস্তাত্ত্বিকভাবে পরাজিত এই গোষ্ঠী ‘গায়েবে বিশ্বাসের’ ব্যাপারটি যেন চোখমুখ বন্ধ করে এড়িয়ে যেতে চান।

অথচ কুরআনের প্রথম দিকেই খুব স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘এই কিতাব সেসব মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত, যারা গায়েবে বিশ্বাস করে।’[১] আমার মাঝে মাঝে এদের প্রশ্ন করতে মন চায়- আচ্ছা, আল্লাহ যে আবাবিল পাখি পাঠিয়ে আবরাহার হস্তিবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন, সে কথা কি আপনাদের বিশ্বাস হয়?[২] আপনাদের কি বিশ্বাস হয় না যে বদরের যুদ্ধে আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে মু’মিনদের সহায়তা করেছিলেন?[৩] এই বদরের যুদ্ধে ৭০ জন কাফের নিহত হওয়ার পাশপাশি কি ১৪ জন সাহাবীও শহীদ হননি? অথচ, তারপরও আপনার প্রশ্ন করেন, আজাবই যদি হবে তাহলে মুসলিম দেশেও কেন বিভিন্ন দুর্যোগ আক্রমণ করে! কেন মুসলিমরাও মারা যায়!

প্রথম কথা হচ্ছে, বর্তমান সময়ের মুসলিমদের মতো সপ্তাহে একদিন জুমুআর নামাজ পড়তে যাওয়া মুসলিমের কী মর্যাদা আছে আল্লাহর কাছে, যারা ইসলামের অসংখ্য বিধিবিধানকে অস্বীকার করে বসে আছে! দ্বিতীয়ত, একই ঘটনায় মুসলিম কিংবা কাফির মারা যেতে পারে। এটা কারও জন্য আজাব-গজব আবার কারও জন্য সতর্কতা কিংবা রহমত হতে পারে!

মানবজাতির পাপের কারণেই এসব দুর্যোগ আসে। সেটা মুসলিম ভূমিতেও হতে পারে। হজরত উমার (রা.)-এর সময়েও আরবে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সিরিয়া-ফিলিস্তিনে প্লেগের মহামারী দেখা দিয়েছিল। এমনকি সেই মহামারীতে আবু উবাইদা (রা.)-এর মতো সাহাবী মৃত্যুবরণ করেছিলেন। একবার মদিনায় ভূমিকম্প হওয়ার সময় উমার (রা.) মিম্বারে খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি তখন বলে উঠেছিলেন, হে মদিনাবাসী, হয় তোমরা পাপকাজ পরিত্যাগ করো, নয়তো আমি মদিনা ছেড়ে চলে যাবো। সুতরাং আপনাকে গায়েবে বিশ্বাস করতে হবে।

যারা অযথাই নিজস্ব যুক্তির দাঁড়িপাল্লায় আল্লাহর দ্বীনকে মাপতে চান, আপনার কি এ কথা বিশ্বাস করেন যে জিবরাইল (আ.) মুহাম্মাদ (স.)-এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন? যারা করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন দুর্যোগ আল্লাহর গজব কিনা- তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন, আপনারা কি ১৪০০ বছর আগে থাকলে বিশ্বাস করতেন যে রাসুলুল্লাহ (স.) একরাতে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে সাত আসমানের ওপরে গিয়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন, নাকি মক্কার কাফিরদের মতো হাসাহাসি করতেন?

১. সুরা: বাকারা, আয়াত: ২-৩
২. সুরা: আল-ফিল
৩. সুরা: আনফাল, আয়াত: ৯

পঠিত : ৪৯১ বার

মন্তব্য: ০