Alapon

একইসাথে আঘাত হানতে যাচ্ছে করোনা ও ডেঙ্গী ভাইরাস



কোরোনা ভাইরাসের ভয়ের সাথে সাথে ঢাকায় তৈরি হতে যাচ্ছে ডেঙ্গী ভাইরাসের প্রকোপ। এই বছর ইতোমধ্যে ২৬২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতবছর এই সময়ে এর সংখ্যা ছিলো ২৪৮। আল্লাহ না করুন এবার আরো ভয়ংকর হতে পারে ডেঙ্গী।

বাচ্চাদের নিরাপদে রাখুন মেহেরবানী করে। স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই আপাতত। বাচ্চা যদি একবছর পিছিয়েও যায় তারপরও মৃত্যুমুখে পাঠানোর দরকার নেই। আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন।

সাবধান থাকুন। নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের পরিচ্ছন্ন রাখুন। একই সাথে বাড়ি ও তার আশপাশ ক্লিন করুন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

১- আবৃত থাকা : হাত আর পা মশার জন্য সবচাইতে সহজ লক্ষ্য। তাই ঘরে বাইরে যেখানেই থাকুন, চেষ্টা করতে হবে যথাসম্ভব কাপড়ে আবৃত থাকা। ফুল প্যান্ট, ফুলহাতা শার্ট, জুতা ইত্যাদি দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতে হবে। ঢিলেঢালা কাপড় পরাই হবে সবচাইতে আরামদায়ক।

২- বদ্ধ পানি অপসারণ : মশার বংশবিস্তারের আদর্শ স্থান হল জমে থাকা পানি। বৃষ্টির দিনে জলাবদ্ধতা বাড়ে, ফলে মশার বংশবিস্তারের স্থানও বাড়ে। তাই মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে অবশ্য করণীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হল যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে পারে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা। এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে জন্মে। তাই আমরা বিশেষত আমাদের বাসা, বারান্দা, ছাদ, ফুলের টব, জেনারেটর ইত্যাদি পরিষ্কার রাখবো।

৩- মশা দুরে রাখা গাছ : মশা তাড়ানোর একটি কার্যকর এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হল মশা দূরে রাখে এমন গাছ ঘরের আশপাশে রোপন করা। তুলসি, সিট্রোনেলা, লেমনগ্রাস ইত্যাদি এ কাজে কার্যকর।

৪- ঘরোয়া সমাধান : মশা দূরে রাখার নিরাপদ উপায় হল ঘরোয়া উপাদান, যা প্রায় সবার রান্নাঘরেই আছে। ধূপ, কর্পূর, সরিষার তেলের সঙ্গে মেশানো ক্যারোম সিড বা আজওয়াই ইত্যাদি মশা তাড়াতে কাজে আসে। নিমের ও ল্যাভেন্ডার তেল, ইউক্যালিপ্টাস অয়েল ইত্যাদিও উপকারী।

৫- ময়লা রাখার পাত্র : যেকোনো ময়লা রাখার পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। আর ব্যবহারের সময় তা ঢেকে রাখতে হবে। জীবাণু ভরা ময়লার পাত্র মশা টানে। এছাড়াও ঘরের কোণা, ছায়াবৃত স্থান, বাগান ইত্যাদিও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৬- মশা তাড়ানোর ওষুধ : মশা তাড়ানোর স্প্রে, মলম ইত্যাদি ব্যবহারে জোর দিতে হবে। ঘরে কিংবা বাইরে সবখানেই এগুলো ব্যবহার করা উচিত। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানাতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মশারি অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।

৭- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা : স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হলে সব ধরনের রোগ দূরে থাকবে। এজন্য খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা যেতে পারে।

৮- দরজা-জানালা বন্ধ : দিনের শেষে এবং রাতেই মশার উপদ্রব বেশি হয়। তাই এই সময় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখলে মশা ঢুকতে পারবে কম। পাশাপাশি জানালা ও দরজার ‘মসকিউটো নেট’ লাগানো যেতে পারে।

৯- চিকিৎসকের পরামর্শ : জ্বরাক্রান্ত হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আমাদের করণীয়গুলো হলো,

১. বারবার হাত ধুয়ে নিন
নিয়মিত এবং ভালো করে বারবার হাত ধোবেন অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ। সাবান–পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুলে এই ভাইরাসটি হাত থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হাতে ময়লা বা নোংরা দেখা না গেলেও বারবার হাত ধুতে পারেন। তবে অবশ্যই হাত ধোবেন অসুস্থ ব্যক্তির পরিচর্যার পর, হাঁচি–কাশি দেওয়ার পর, খাবার প্রস্তুত, পরিবেশন ও খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর, পশুপাখির পরিচর্যার পর।

২. অসুস্থ ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরে থাকুন
এই সময় যেকোনো সর্দি–কাশি, জ্বর বা অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত এক মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। কারণ সব ফ্লুর মতোই এই রোগও কাশির ক্ষুদ্র ড্রপলেট বা কণার মাধ্যমে অন্যকে সংক্রমিত করে। তাই যিনি কাশছেন, তাঁর থেকে দূরে থাকাই ভালো। ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ পশুপাখি থেকে দূরে থাকুন।

৩. নাক–মুখ স্পর্শ করবেন না
হাত দিয়ে আমরা সারা দিন নানা কিছু স্পর্শ করি। সেই বস্তু থেকে ভাইরাস হাতে লেগে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে কখনো নাক–মুখ–চোখ স্পর্শ করবেন না।

৪. কাশি দেয়ার সময় শিষ্টাচার মেনে চলুন
নিজে কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন, অন্যকেও উৎসাহিত করুন। কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় নাক, মুখ রুমাল বা টিস্যু, কনুই দিয়ে ঢাকুন। টিস্যুটি ঠিক জায়গায় ফেলুন। প্রয়োজনীয় টিস্যু সবসময় সাথে রাখুন।

৫. প্রয়োজনে ঘরে থাকুন
অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।

৬. খাবারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন
কাঁচা মাছ–মাংস ধরার পর ভালো করে সাবান–পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। ভালো করে সেদ্ধ করে রান্না করা খাবার গ্রহণ করুন। অসুস্থ প্রাণী কোনোমতেই খাওয়া যাবে না।

৭. ভ্রমণে সতর্ক থাকুন
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং অন্য দেশ থেকে প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন। অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

৮. সাক্ষাতে সতর্ক থাকুন
কারও সঙ্গে হাত মেলানো (হ্যান্ড শেক), কোলাকুলি থেকে আপাতত বিরত থাকুন

৯. স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নিন
এ সময়ে কোনো কারণে অসুস্থ বোধ করলে, জ্বর হলে, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করুন। আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর: ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১ এবং ০১৯৩৭১১০০১১।

১০. আল্লাহর কাছে সাহায্য চান
মহামারী থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর কাছে নিয়মিত সাহায্য চান। এক্ষেত্রে নিচের দোয়াটি বার বার পাঠ করুন।

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।

পঠিত : ৪০৯ বার

মন্তব্য: ০