Alapon

যৌন চাহিদা কমানোর উপায় কী...?


"এক কিশোর প্রশ্ন করেছিল, এক শাইখের কাছে!"

খুব সম্ভব কোনো এক হালাকার প্রশ্নোত্তর পর্বে।

তো শাইখ প্রথমেই শুরু করলেন বিয়ের শারঈ গুরুত্ব দিয়ে। হ্যাঁ, যেহেতু ইসলামে জৈবিক চাহিদা নিবারণের একমাত্র বৈধ পন্থা বিয়ে (আরেকটা যে পন্থা ছিল তাতো আমরা এ যুগে অচল করে ফেলেছি, তাই সে আলোচনায় যাচ্ছি না) সুতরাং, বর্তমান যুগে ঐ একটাই পন্থা। বিয়ে। আর প্রশ্নটাও যৌন চাহিদা কেন্দ্রিক সেহেতু উনি বিয়ের বিষয়টা দিয়ে উত্তর প্রদান শুরু করে ভুল করেননি। কিন্তু এর পরে যদি উনি এভাবে বলতেন যে, "যদি বিয়ের সামর্থ্য না থাক তাহলে রোজা রাখতে হবে, এটাই হাদিছের সাজেশন। সেই সাথে, চাহিদা উদ্রেককারী সকল উপসর্গ থেকে দূরে থাকতে হবে৷ প্রয়োজনে স্মার্ট ডিভাইসও ত্যাগ করতে হবে।"

কিন্তু উনি তা না করে, বিয়ে নিয়েই আলোচনা করে যাচ্ছিলেন। বিয়ের ফজিলত নিয়ে আলোচনার সূত্রধরে নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী থেকে আলোচনা করছেন যে, বিয়ে কী কী ভাবে কারো যৌন পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য উপকারী, ইত্যাদি। ঐ যে হাদিছটা যেখানে নাবীজি বলেছেন তোমরা কোনো কারণে ডিজায়ার ফিল করলে, তখনই স্ত্রীর কাছে গিয়ে ডিজায়ার সম্পূর্ণ করে আসবে। এসব আলোচনা করছিলেন।

প্রথম দিকে বিরক্তি না লাগলেও কয়েক মিনিট শোনার পরে বেশ বিরক্তি ধরে যাচ্ছিলো। ছেলেটাকেও দেখলাম উনার এই উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারছিলো না। বেশ অপ্রস্তুত লাগছিলো ওকে। কারণ উনি শুধু ফজিলত, গুরুত্ব আর পারিপার্শ্বিক উপকারীতাই আলোচনা করছেন, ছেলেটি যে প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে, সেই পয়েন্টে আসছেন না।

এর দুটি কারণ হতে পারে,
প্রথম কারণঃ হয়তো উনি প্রশ্নকর্তা ছেলেটির পয়েন্টটা ধরতে পারেননি।
দ্বিতীয় কারণঃ নয়তো ওই পয়েন্টে আলোচনা করার মতো পর্যাপ্ত রসদ উনার নেই, এজন্য ঘুরিয়ে পেচিয়ে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন আলোচনা করছেন কিন্তু প্রশ্নকর্তার কাঙ্খিত উত্তরে আসছেন না।

এটা আসলে বেশ বিরক্তিকর। আর এই সমস্যাটা আসলে উক্ত শাইখের একার না। যার দরুন আমি তার নাম উল্লেখ করছি না। এই সমস্যাটা আমাদের প্রজন্মের আলিমদের অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান। দেখা যায় প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করেছেন ফরজ নামাজের পরে সঙ্ঘবদ্ধ মুনাজাত বিদআত কিনা?
কিন্তু সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তরে না গিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে "নিয়মিত করলে", "জরুরী মনে করলে" সহ ইত্যাদি শর্তারোপ করে সহজ বিষয়টাকে একটা কমপ্লিকেটেড বিষয়ে পরিণত করে ছেড়ে দেন! শেষে কিছু একটা যদিও মতামত ব্যক্ত করবেন, কিন্তু তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশ্নকর্তার কাছে ঘোলাটে থেকে যায়।

আবার কেউ যখন প্রশ্ন করে নারীদের চুলে কালার করা জায়েজ কিনা, তখন "কাফের নারীদের অনুকরণ, ফাসিক নারীদের অনুকরণসহ" নানান শর্ত দিয়ে সোজা ব্যাপারটা ঘোলাটে করে দেন, যার ফলে মূল উত্তর জানার বদলে আরো একাধিক প্রশ্ন জাগে প্রশ্নকর্তার মনে।

আমি বলছি না যে, উনারা যেসকল শর্ত বা পয়েন্ট উল্লেখ করেন তা অবান্তর! সেগুলো অবশ্যই উক্ত বিষয়ে ফাতওয়ার দেওয়ার উসুল হিসেবে বিবেচ্য! কিন্তু কথা হলো, আম মানুষকে এসকল বিষয়েই মূল আলোচনা শুনিয়ে, দ্বিধায় ফেলার দরকারটা কী? এগুলো সংক্ষেপে বলে, কাঙ্খিত উত্তরটা সরাসরি দিলেই তো হয়ে যায়।

ব্যাপারটা তো মনে এমন নয় যে যুগের হালচাল বা তরুণদের মানসিকতা সম্পর্কে আলেমরা একেবারেই অবগত নন! আমাদের আলেমদের সাথে এই তরুণ প্রজন্মের দুরত্ব যদিও আগের থেকে কিছুটা কমেছে, কিন্তু এটা আসলে যথেষ্ট না।

আলেমরা উম্মাতের রাহবার।নবীর ওয়ারিস। নবী থাকলে যেমন উম্মাত, তাদের ছোট বড় সকল সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে নবীদের কাছেই যেতেন, ঠিক তেমনি ভাবে এখন নবীর ওয়ারিশদের কাছে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে গিয়ে সমস্যার সমাধানের বদলে যদি উল্টো আরো দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না? এই মুহূর্তে যে প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন সেটা না জানতেই যদি আরো একগাদা প্রশ্ন এসে হাজির হয় সাধারণ মানুষ তখন যাবে কোথায়?

এজন্য আলেমদের উচিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নশীল হওয়া সাধারণ লোকদের বোধগম্য হয় এমন পরিশীলিত ভাবে উত্তর দেওয়া। যেমন, প্রথম টপিকটাই দেখুন, যদি আপনার মনে হয় কোনো দ্বীনি হালাকায় আসা দ্বীনদার ছেলে বিয়ের গুরুত্ব বা ফজিলত জানে না তা হলে এটা অবশ্যই আপনার বিচক্ষণতার অভাব বলেই মনে হয়।

বিয়ের ব্যাপারে তারা ভালোভাবেই অবগত, কিন্তু পরিবেশ তাদের অনুকুলে নয়। আর আমরা বুড়োরাও তাদেরকে সেই পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারিনি। এজন্যই তারা আজকে, যৌন চাহিদা কমানোর পদ্ধতি জিজ্ঞেস করছে শাইখদের কাছে। এখন যদি তাদের প্রশ্নের উত্তর আলেমদের কাছ থেকে যথাযথভাবে না পায়, তবে তো তারা আরো বেশি আলেমবিমুখ হয়ে পড়বে।

@Safat

পঠিত : ৬৬১ বার

মন্তব্য: ০