Alapon

করোনা নিয়ে সরকারের দ্বায় এড়ানোর সুযোগ ছিল, কিন্তু...



পরিস্থিতি যে ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে— এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার বাহাদুরের মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে—৭১ এর পাক হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মারা বাংলাদেশে নতুন করে আক্রমন করেছে। এখন সেনাপতি ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগে যুদ্ধে নামবে। তারা দু-চারটা কামান দাগিয়ে দেশ করোনা মুক্ত করে ফেলবে!

সরকারের এতো কাহিনি করার কোনো দরকার ছিল না। এতো বড় বড় বক্তব্য দেওয়ারও প্রয়োজন ছিল না। কারণ, আমাদের দেশের সামর্থ সম্পর্কে আমাদের চেয়ে আর ভালো কে জানে!

সারাবিশ্বে যখন করোনা ভাইরাসের প্রকপ শুরু হল— ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী ছোট্ট একটা উদ্যোগ গ্রহণ করলে, সরকার অনেকটাই দ্বায় মুক্ত থাকতো বলে আমার মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী যদি বলতেন, ‘প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে- যে মহামারী ধেয়ে আসছে তা সক্ষমভাবে মোকাবেলা করার মত স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থা আমাদের নেই। এটাই বাস্তবতা। তাই আপনারা স্ব স্ব উদ্যোগে সতর্ক থাকুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।’

কিন্তু তা না করে সরকারের মন্ত্রীরা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন— তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না। চলুন দেখি মন্ত্রী সাহেবরা করোনা ভাইরাস নিয়ে কী বক্তব্য দিচ্ছেন-

গতকালও প্রমাণ করেছি, আমরা করোনাভাইরাসের চেয়েও শক্তিশালী : সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। (সূত্রঃ ইনকিলাব, ১৮ মার্চ)

শেখ হাসিনার মতো নেত্রী পেয়েছি বলেই করোনা প্রতিরোধ করতে পারছিঃ মোহাম্মদ নাসিম
(সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

করোনা নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। (সূত্রঃ কালের কন্ঠ)

করোনা প্রতিরোধে ঢাকা বিমানবন্দরের মতো ব্যবস্থা উন্নত দেশগুলোতেও নেই : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম (সূত্রঃ বাংলাদেশ টুডে)।

করোনা মারাত্মক কোনো রোগ নয়, এটা সর্দি জ্বরের মতো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। (সূত্রঃ যমুনা টিভি)।

শেখা হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন কোনো ভাইরাস নিয়েই চিন্তা নেই : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। (সূত্রঃ কালের কন্ঠ)

করোনা যত বড় শত্রু হোক আমরা পরাজিত করব: কাদের। (সূত্রঃ যুগান্তর)

এতোটুকুন বক্তব্য আর প্রবাসীদের কোয়ারেন্টেনে নেওয়ার দায়িত্বটা যদি তিন মাস আগেই সেনাবাহিনীকে দেওয়া হতো— তাহলে সরকার অনেকটাই দ্বায় মুক্ত থাকতে পারতো।

অনেকেই পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র নেপালের উদাহরণ টানছেন। আমি বলব, ফিলিস্তিনের গাজার দিকে তাকান। গাজা গত ১৩ বছর ধরে অবরুদ্ধ। আর গাজার সরকার এখন হামাস। ইসরাইলের দুই চোখের বিষ। ফলে গাজার মানুষেরা বাহিরের খুব একটা সাহায্য-সহযোগিতাও পায় না।

হামাস সরকার নিজের সামর্থের ব্যাপারে অবগত। তাদের মাত্র একটি হাসপাতাল আছে; তাও মাত্র ৩০ শয্যা বিশিষ্ঠ। সেখানে আইসিইউ-এর সংখ্যা আর কতইবা হবে। যার কারণে তারা গত ৩ মাস থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল। ফলাফলস্বরূপ ফিলিস্তিনের গাজায় এখন পর্যন্ত একজনও করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।

সরকার বাহাদুর, করোনা ভাইরাস বিএনপি জামায়াত নয় যে— দু- একটা ক্রসফায়ার দিয়ে সব ঠান্ডা করে ফেলবেন। অথবা র‌্যাব, পুলিশ নামিয়ে সব দমন করে ফেলবেন। এমন চিন্তা করে থাকলে করোনা স্বয়ং আপনাদেরকেই সংক্রমণ করে ঠান্ডা করে দিবে। তখন কিন্তু হাউ কাউ করার টাইম পাইবেন না...

পঠিত : ৪৬৮ বার

মন্তব্য: ০