Alapon

করোনা ভাইরাস; তুরস্ক বনাম বাংলাদেশের অবস্থা...


গতকাল তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে- এখন পর্যন্ত সরকার ২০৩৪৫ জনের করোনা পরীক্ষা করেছে, তাদের মধ্যে ১২৩৬ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এবং বিগত ১১ দিনে সর্বমোট #৩০_জনের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছে সরকার।

বিগত মাসে কয়েকজনকে পর্যবেক্ষণে নেয়া হয়েছিল। এ মাসের ১১ তারিখ যখনই অবস্থা বেগতিক হতে লাগল তখনই পুরো দেশের স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ৩ সপ্তাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে দেয় সরকার। সেই সাথে নির্দেশনাও দিয়ে দেয় যে ঘর থেকে বেশি বের না হতে। মেলামেশা না করতে। ঘরবন্দী জীবন-যাপন করছি আমরা বিগত ১০ দিন থেকেই।

তুর্কিরা হচ্ছে উসমানীদের উত্তরসূরী। বিশ্ব শাসনকারী উসমানীদের একটি গুণ সকলের কাছে সমাদৃত ছিল, সেটি হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। তুর্কিরা উসমানীদের সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে। জাতি হিসেবে ওরা যথেষ্ঠ পরিষ্কার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি ওদের কালচারের সাথে মিশে আছে।

হ্যা তুরস্ক, সাউথ কোরিয়া অথবা চীনের মতো উন্নত না। সাউথ কোরিয়া যেখানে দিনে ২০ হাজার জনের করোনা পরীক্ষা করছে তুর্কি সেখানে এই দশদিনে ২০ হাজারে পৌঁছেছে, কারণ তুর্কি এতো উন্নত নয় ঐসকল দেশের মতো। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করছে। তারপরও মাত্র দশ দিনের মধ্যে অবস্থা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনো তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পরীক্ষা করা হয় নি। যদি করা হয় অবস্থা আরও বেগতিক হতে পারে আশংকা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকলকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এতো সচেতন জাতির এতো সতর্ক ব্যবস্থার পরেও যদি এই অবস্থা হয় একবার আমাদের বাংলাদেশের কথা চিন্তা করুণ।

সরকারী মেডিকেলের এর মধ্যেই ময়লার যে স্তুপ সে সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল। আর ওয়ার্ডগুলোর অবস্থার কথা নাই বললাম। মেডিকেলের যে বেহাল অবস্থা এতে এক করোনা রোগী থেকে ১০০ জন ডাক্তারের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আশংকাই বেশি, সাধারন রোগীরা তো পরের হিসাব।

সব ডাক্তাররা ইকুইপমেন্টের জন্য জোর দিচ্ছেন, হ্যা সেটা অবশ্যই দরকার। কিন্তু এই ডাক্তাররা যে মেডিকেলে মানুষকে সেবা দিবেন, স্বয়ং সেই মেডিকেলই যে করোনা ভাইরাসের ব্যাপন প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় তুলবে সে সম্পর্কে সবাই বেখবর।

মেডিকেলের চিত্রগুলো একবার দেখেন। সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য একটু হলেও তদবির করেন। ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসকল স্থানের বাতাসকে প্রথমে পরিশুদ্ধ করেন। তবেই করোনা প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।

আমরা জাতি হিসেবে এখনো সতর্ক হচ্ছিনা। যারা ওয়াজ করেন তাদের নিয়ে ট্রল করছি। কিন্তু সত্য হলো যে, আমরা যারা তাদেরকে নিয়ে ট্রল করছি তারা গুটিকয়েক। গ্রামের সাধারণের কাছে সেসকল ওয়েজীনদের বক্তব্য মারত্মকভাবে গ্রহণযোগ্য। ধর্মের নামে ওরা যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে মানুষ তা গিলছে। ফেসবুকে পুরো বাংলাদেশ এক্টিভ থাকে না। এখানে আমরা যুবকরা সময় দেই। সাধারণ মানুষ ফেসবুকের ধারেকাছে আসে না। তাদেরকে বুঝানোর দায়িত্ব আমাদের।

ঘরের মধ্যে থাকুন। আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন। আবহাওয়া পরিশুদ্ধ রাখুন। নিজে সতর্ক থাকুন, অন্যকে সতর্ক করুন।

এখনো যদি সতর্ক না হতে পারি আমরা, তাহলে বিশাল এক ঝুকির মধ্যে পতিত হব সবাই। আমাদের সরকারের উপর ভরসা করে কোন লাভ নেই সেটা জনগণ হিসেবে আমরা সকলেই বুঝি। নিজেরা যদি সতর্ক না হই তাহলে কয়েক লাখ মানুষের জীবন ঝুকির মধ্যে পড়ার আশংকা রয়েছে।

মনে রাখবেন, দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি ছাড়িয়ে। তাই কয়েক লাখকে দেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে খুবই ছোট মনে হবে। কিন্তু সংখ্যার দিক দিয়ে তা পুরো বিশ্বকে ছাড়িয়ে যাবে...

@Abid Ihsan

পঠিত : ৭০৩ বার

মন্তব্য: ০