Alapon

বেগম খালেদা জিয়ার জামিন এবং বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে কিছু কথা...


ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমের প্রচারণার মাধ্যমে গোটা দেশবাসী জেনে গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেতে যাচ্ছেন। খুব সম্ভবত আগামীকালই তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তিনি তার গুলশানস্থ বাসায় চলে যাবেন।

গোটা বিশ্বসহ বাংলাদেশ যখন করোনা ভাইরাসে কাঁপছে, তখন আচমকা বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হলো কেন?

খুব স্বাভাবিকভাবেই যে কারও মনেই উপরোক্ত প্রশ্ন জাগবে। কারণ, আমরা দেখেছি বিগত দুই বছর ধরে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য তার আইনজীবিরা বারবার উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। তার অসুস্থতার কাগজ জমা দিয়ে মানবিক কারণে হলেও তার জামিনের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছিল। কিন্তু বিগত দুই বছরে বারবার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আর আজ কিনা কোনো আইন আদালত ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে জামিন দেওয়া হল! বিষয়টা সত্যিই অবাক করার মত।

করোনা ভাইরাসের মরণ কামড় যখন বাংলাদেশের আঘাত হানতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।

প্রথমত, মানুষের মনোযোগ ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া। গোটা দেশবাসী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে। মানুষজন নির্ঘুম রাত পার করছে। দেশে লাখ লাখ প্রবাসী কোনো ধরণের টেষ্ট ছাড়াই দেশে ঢুকে পড়েছে। এখন তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তারপরও পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট এর অভাবে সবাইকে টেষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। আর টেষ্ট না করার কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীও সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মাত্র ৩৩! অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বাস্তবসম্মত সংখ্যা নয়। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমপক্ষে কয়েকহাজার ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু টেষ্ট করার কিট এবং ল্যাব না থাকায় রোগী সনাক্তকরণ সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষের মনোযোগ করোনা ভাইরাস থেকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই বরাবরেই মতই রাজনৈতিক চাল চেলেছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে তাদের সফলও বলা যায়। কারণ, খালেদা জিয়ার জামিনের সংবাদে মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধান আলোচনার বিষয় এখন খালেদা জিয়া। করোনা ভাইরাস এখন অনেকটাই গৌণ আলোচনায় পরিণত হয়েছে। ফলে সরকার সফল!

দ্বিতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিতেই হতো। আজ অথবা কাল তাকে জামিন দিতেই হতো। আর এ নিয়ে সরকার দির্ঘদিন ধরে অস্বস্তি ও প্রেশারে ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার জামিনের খবরে যদি সাধারণ জনতা বিজয় মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসে- সেই ভয়েই হয়তো সরকার তাকে মুক্তি দিতে পারছিল না।

যেহেতু করোনা ভাইরাসের কারণে জনসমাগত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ মানুষই ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে অবস্থান করছে- তাই এসময় খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেওয়া সরকারের জন্য অনেক বেশি সহজ। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারকে জনসমাগম নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা অথবা ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে না।

তৃতীয়ত, শেখ হাসিনা ঠিক এই সুযোগে নিজেকে মানবতাবাদি প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। এবং ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ বলছেও- তার বয়স এবং করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে মানবিক বিচারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে ছয় মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে। ফলে, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা নিজেকে মানবতাবাদি দাবি করার সুবোর্ণ সুযোগ পেয়ে গেল। এবং এই সুযোগের শতভাগ ফল যে শেখ হাসিনা ঘরে তুলবেন তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়।

তবে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন কিন্তু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল- বিচারবিভাগ কতটা স্বাধীন! আমাদের বিচার বিভাগ এতোটাই স্বাধীন যে, কারও জামিনের জন্য আইন আদালতের প্রয়োজন নেই; প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিলেই জামিন হয়ে যায়। তার মানে এতোদিন যে খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয়নি, তার কারণও সেই প্রধানমন্ত্রী! প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তি আক্রোশের কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাননি। যার কারণে এতোদিন জামিনের শত যৌক্তিকতা থাকা স্বত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয়নি।

বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আমাদের বিচারব্যবস্থার একটি কালো অধ্যায় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে বলে মনে হয় না।

পঠিত : ৪৯৯ বার

মন্তব্য: ০