Alapon

করোনার দিনে মুমিন...


এক নজিরবিহীন সময় পার করছি আমরা। পৃথিবী ভয়ে জুবুথুবু। আর এবারে পুরো পৃথিবী এই অবস্থায় একসাথে। আজ, প্রাচ্য যেমন সশঙ্ক, পশ্চিমও। ধনীরা গরিবের চে কোনো দিক দিয়ে কম আক্রান্ত-ঝুঁকিতে না। এই ত্রাস কাউকে ফারাক করে না। বড় লোক এবং খ্যাতিমানদেরও ছাড়ে না।

কিন্তু এই বাধ্যতামূলক নিসঙ্গতা আর যে-অনিশ্চয়তা আমাদের ঘিরে আছে, যা ঘটছে তা কীভাবে সামলাব? এ-নিয়ে বেশুমার উপায় বলা আছে। এর সবই আমাদের নিতে হবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। কিন্তু তারপরও আমাদের অনেকে আতঙ্কিত। কারণ, প্রশ্ন একটা থেকেই যায়—মন কীভাবে সামাল দেবে?

আল্লাহর কথাটি কি মনে আছে? ﴾ভয়ের কিছু, দুর্ভিক্ষ, জানমাল আর ফসলের ক্ষতি দিয়ে আমি অবশ্যই বাজিয়ে দেখব তোমাদের। তবে যারা সবুর করে তাদের খোশখবরি দাও। বিপদে পড়লে তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই। একদিন তো তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ এদের ওপরই আছে তাদের প্রভুর আশির্বাদ ও দয়া। এরাই দিশাপ্রাপ্ত।﴿ [২:১৫৫–১৫৭]

এই মুহূর্তে সবুর করা মানে কী? এর ধরন কেমন?
এখন সবুর করা মানে ধৈর্য ধরা, অটল থাকা আর আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। জীবনের টালমাটাল সময়ে ধৈর্য ধরা। ভয় আর আতঙ্কে পাহাড়ের মতো অনড় অটল। আর জনআতঙ্কে হাল ছেড়ে দেয়া থেকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। মনের ভেতর ‘নাফসি, নাফসি! আমি! আমি!’ বলে যে-চিৎকার সেটা দমিয়ে রাখা। অন্যের উপকারের জন্য মজুদ করার খায়েশে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ।
এরপর তাওয়াক্কুল। আস্থা। আল-মু‘মিন: নিরাপত্তার উৎস, একমাত্র যিনি আমাদের এবং আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলোকে রক্ষা করতে পারেন, তাঁর প্রতি ভরসা। একমাত্র তিনি আমাদের অন্তরগুলোতে বইয়ে দিতে পারেন নিরাপত্তা-বায়ু। আমাদের ‘উট বাধার’ কাজটি করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাতমুখ ধুতে হবে। কিন্তু এগুলোর ধোঁকায় পড়বেন না যেন। আমাদের চেষ্টা বা কাজগুলো কিন্তু আমাদের নিরাপদ রাখে না।
এটা কোনো ইনজেকশান না। এর কোনো টীকা নেই।

এই মুহূর্তে চাই আশ-শাফি: সুস্থতাদানকারীর ওপর ভরসা। একমাত্র তিনিই রোগমুক্ত করেন। খেয়াল রাখবেন, করোনাভাইরাস-সংক্রমিত বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু সেরে উঠবেন। এতগুলো মানুষকে কে সারিয়ে তোলেন? কে তাদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করেন?
এটা কোনো ওষুধ না, এর কোনো প্রতিষেধক নেই।

সবচে বড় কথা, এই পরীক্ষাটা আমাদের গা ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে। আমাদের অন্তরকে নিয়ে গেছে বিশুদ্ধ তাওহিদের দিকে। এমন এক অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলা করছি আমরা যার কোনো টীকা নেই আমাদের রক্ষা করবে, সারিয়ে তুলবে। এটা তা হলে আমাদের কোথায় নিয়ে যায়?

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’-র দিকে। তাওহিদের কালেমা তো স্রেফ কোনো যান্ত্রিক বুলি আওড়ানোর মতো বিষয় না। তাওহিদ মানে আমাদের আতঙ্কের কুয়াশা ভেদ করে চোখ মেলা, কেবল আল্লাহকে দেখা। এর মানে ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। সেই নিশ্চল নিথর বিশ্বাস: আল্লাহ ছাড়া পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় না; নেই কোনো ক্ষমতা।
স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। বাড়িতে থাকুন। নিজে ও নিজের পরিবার সাবধান থাকুন। কিন্তু মেহেরবানি করে আসল কথাটা ভুলে যাবেন না। আমাদের যে স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক জীবনের ঘোর, আল্লাহ আমাদের সেখান থেকে জাগিয়ে তুলেছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে কাজ, তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘুরে আবার ঘর থেকে কাজে—এই যে এক চক্রের ঘোর, সেখান থেকে টেনে তুলেছেন তিনি আমাদের। মানুষ হিসেবে আমাদের নশ্বরতা অক্ষমতা, তাঁকে যে আমাদের কী পরিমাণ প্রয়োজন তা মনে করিয়ে দিয়েছেন আবার।
শুধু ছোট্ট একটা আণুবীক্ষণিক সৃষ্টি দিয়ে পরাশক্তিদের মাটিতে টেনে নামিয়েছেন—আল্লাহু আকবার।

এটাই আসল কথা। আল্লাহু আকবার—আল্লাহ সবচে মহান। আমাদের যাবতীয় চেষ্টা ‘সতর্কতার’ চে অনেক বড়। আমাদের ভয় থেকে, পরিকল্পনা থেকে বড়। অদৃশ্য শত্রু থেকে বাঁচতে আমাদের যে-মরিয়া চেষ্টা তা থেকেও।

কেবল আল্লাহ আমাদের বাঁচাতে পারেন যেকোনো দৃশ্য অদৃশ্য ক্ষতি থেকে—এর চে বড় ঘুমভাঙানি গান আর কী আছে! সম্ভবত ঠিক এ-কারণে আল্লাহ কোনো কোনো ক্ষতিকে অদৃশ্য রাখেন যাতে আমরা ধোঁকা না খাই। যাতে আমাদের খেয়াল আসে সত্যিকার আশ্রয়স্থল কোথায়।

সেই সাথে আরও একটি জিনিস মনে করিয়ে দিতে: বিপরীত কিছু থেকে একটা জিনিসের আসল প্রকৃতি বোঝা যায়। এতদিন যাবত আমাদের সব নিয়ামাকে আমরা যে কোনো কদরই করিনি।

যাক, আসুন আমরা এই ভেবে শান্ত হই: সব কিছুর দায়িত্বে আছেন সবচে দয়াময়। আপনি আমি বা আমাদের অসহায় সরকার না; আল্লাহর হাতে সব কলকাঠি। নিজের মা’র চেও যিনি আমাদের প্রতি অনেক অনেক মমতাবান।

@ইয়াসমিন মোগাহেদ

পঠিত : ৪৭৫ বার

মন্তব্য: ০