Alapon

বাঙালি মানুষ হবে কবে; মরার পর?


আব্বাকে বললাম, আপাতত মসজিদে যাইয়েন না। বাড়িতেই নামাজ পড়েন। ইনশা আল্লাহ, শরীয়তের দিক থেকে কোনো সমস্যা হবে না।

আব্বা বললেন, মসজিদে যে হারে মুসল্লি বাড়ছে তা বলার মত না। আগে আসরের নামাজে দুই কাতার মানুষ হইতো। এখন মসজিদ ভরে যায়। এতো মুসল্লির ভিড়ে আমি একা বাড়িতে নামাজ পড়ি কীভাবে!

তখন বললাম, ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস। আর তাছাড়া আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী সাহেব এই সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী সাহেবের নাম শোনাতে আব্বা কিছুটা শান্ত হলেন মনে হয়। তখন বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তবে ফজরের সময় তো নামাজি কম হয়, তখন মসজিদে যাবো। মসজিদে না গেলে ঠিক শান্তি পাই না।

ঢাকা শহর আপাতত ভূতের শহরে পরিণত হলেও, গ্রাম বা মফস্বল এলাকাগুলোতে সব স্বাভাবিক গতিতে চলছে। নামাজ তো চলছেই সাথে সাথে বাজার, ঘাট সবই জমজমাট। এমনকি ছুটি পেয়ে বাড়িতে গিয়ে লোকজন আত্মিয়দের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বেড়াচ্ছে।

যে ছেলেটা ঢাকায় থাকতে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এবং এর প্রতিকার স্বরূপ জনসমাগমের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিল, সেই ছেলেটা বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ নাকি পিকনিকও করবে!

একজনকে বললাম, ‘তোদের কি মাথা ঠিক আছে?’
সে বলল, ‘আরে ভাই, সব বন্ধুরা বহুদিন পর একসাথে হইছি। এই সুযোগে একটু চিল করে নেই!’ সেইসাথে আমাকেও দাওয়াত দিল।

আমি এবং আমার বড় ভাই আপাতত ঢাকাতেই আছি। ইতিমধ্যে পুরো বিল্ডিং ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। ৎ বলা যায় পুরোটাই ভুতুড়ে পরিবেশ। কারণ, মাস দুয়েক আগে পাশের বিল্ডিং-এ একজন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। যার কারণে পূর্ণ ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

আমরা চাইলেই বাইক নিয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে যেকোনো সময় যাত্রা করতে পারি। কিন্তু আমরা নিজেদের নিয়ে নয়, পরিবারকে নিয়ে চিন্তিত। আমরা জানি না, আমরা নিজেরাই করোনা আক্রান্ত কিনা। হয়তো বাড়িতে আব্বা, আম্মারা ঠিকই আছেন। আমরা বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়তো অতিথি হিসেবে করোনা ভাইরাসকেও নিয়ে যেতে পারি। সে কারণেই যাচ্ছি না।

করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারকে বহু গালি দিছি! সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকা স্বত্ত্বেও গলাবাজি দেখে ‘শুয়রের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের জনগণকে কী বলে গালি দিবো? বাঙালি মানুষ হবে কবে; মরার পর?

পঠিত : ৫৫৮ বার

মন্তব্য: ০