Alapon

আমার বিশ্বাসে বাংলাদেশের নোভেল করোনা-১৯ পরিস্থিতি...


কাঠফাটা রোদে লাঙ্গল ঠেলছে, মাটি কাটছে, ফসল তুলছে, কাঠ ফাঁড়ছে, ইট ভাঙছে, রিকশা চালাচ্ছে, ঠেলা ঠেলছে, জলে নামছে, হকার ছুটছে ইত্যাদি এমন হলো জীবিকার পিছনে ছুটে চলা বাংলাদেশের প্রায় আঠারো কোটি মানুষের ছয় কোটির উপরে অতিসাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র। উপরন্তু এই বহুল জনাংশের বেসিক শিক্ষার হার গ্রাফের মধ্য ভাগ থেকে ক্রমান্বয়ে নিম্নগামী। আর সাধারণ মানুষ যাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি তাদের অবস্থা এমন, তারা এক মাসের বেতন না পেলে পরের মাসে ঘরভাড়াটাও দিতে পারবে না।

এই ‘দিন আনি দিন খাই (Hand to mouth)’ অর্থনীতির সাধের ৪৯’র বাংলাদেশ আমার। এখানে উন্নয়নের জোয়ার এমন ভাবে বইছে যে, বর্তমান বিশ্বের চলমান সংকট (নোভেল করোনা-১৯) কথার তুবড়ি ছুটিয়ে দমন করা সম্ভব হচ্ছে!... আসলেই কী তাই? সামান্য বিবেকবোধ সম্পন্ন যে কেউ বলবেন, বিষয়টি গড়ের মাঠের গল্পের মতো মনে হয়। সত্য বলতে বিষয়টি গড়ের মাঠের মতোই ফাঁকা, শূন্য। যার বাস্তব প্রমান আমরা চর্মচোখেই দেখতে পাচ্ছি।

এমন পরিস্থিতিতে মনের কোণে একটি প্রশ্ন, ভয়াবহ আশংকার সাথে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে! যখন উন্নত বিশ্ব তাদের উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে উল্লিখিত ব্যাধি নিরাময়, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ তখন তৃতীয় বিশ্বের এই অবোধ-অসহায় জনগোষ্ঠীর কি হবে? লাশের মিছিল কি সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এখানে হিরোশিমা, নাগাসাকির মতো ইতিহাস রচনা করবে? জাপান তাদের পরিশ্রম, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সততা, দক্ষতা আর নেতৃত্ব দিয়ে ঘুরে দাড়াতে পারলেও বাংলাদেশের মতো ক্ষয়িষ্ণু জনবোধ, নেতৃত্বের দেশে এমন আশা করা সত্যিই বোকামী বৈ আর কিছু নয়।

তথাপি, ভুক্তভোগী দেশগুলো থেকে নেয়া অভিজ্ঞতার আলোকে নিয়ন্ত্রণের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং প্রাকৃতিক উপায়কে (লক ডাউন, কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি) কাজে লাগিয়ে কর্তৃপক্ষ সহজেই সমূহ বিপদের সম্ভাবনার লাগাম টেনে ধরতে পারতেন বলে সকলে একমত হবেন। অথচ; সকল প্রকার শঙ্কার মধ্য দিয়ে তারা জনগণের আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে; অসময়ে তাদেরকে বল্গাহরিণের মতো ছেড়ে দিয়েছে। এ যেন স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে মৃত্যুপুরীর যথাযোগ্য আয়োজনের ব্যবস্থা করা।

কর্তৃপক্ষ তো সেই শুরু থেকেই এ জনপদের মান সম্মান ইজ্জত রক্ত সম্পদ নিয়ে 'টরে টক্কা ট' করছে! দীর্ঘদিনের নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাই অসহায় জনগোষ্ঠীর বাঁচার ভাবনাও যেন উবে গেছে। মানুষের চিন্তা চেতনা ধ্যান ধারণা ভাবনা অবস্থা হয়েছে পঙ্গপালের মতো বিক্ষিপ্ত। ফলে পরিস্থিতির নাজুকতায় উল্লিখিত শঙ্কার প্রশ্ন চোখের সামনে জ্বলন্ত সূর্যের মতো ঘুরঘুর করছে।

অতএব, সকলের উদ্বেগের আলোকে অতিশীঘ্রই আমরা যত্রতত্র পড়ে থাকা লাশ আর অসুস্থ্যতার মিছিলে হাবুডুবু খাচ্ছি? ঠিক এই প্রশ্নের মুখোমুখি এসে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি (আল্লাহ কবুল করুন)— এদেশের বাস্তব চিত্রের সহজ-সরল, ভুঁকা-নাঙ্গা, অসহায় জনগোষ্ঠীর দিকে তাকিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর তাঁর পরীক্ষাকে (নোভেল করোনা-১৯ পরিস্থিতি) সীমিত করবেন। অবশ্য সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা, কোনো জাতি নিজেরা নিজেদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করতে না চাইলে আল্লাহও তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করেন না।

শেষ কথায় বলবো, যারা এই জনপদের সাধারণ মানুষগুলোকে দিনদিন প্রতিদিন একটু একটু করে সবদিক দিয়ে আশঙ্কা এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, স্রষ্টার দরবারে তাদের ব্যাপারে আমার দুটি আহবানঃ
০১. হে আরশে আজীমের একচ্ছত্র অধিপতি, তুমি তাদেরকে হেদায়েত দান করো।
০২. হে আজীজুল হাকীম, তাদের কপালে হেদায়েত লেখা না থাকলে তোমার পাকড়াও দিয়ে তাদের কৃত অপরাধের পার্থিব পরিণতি পূর্ণ করো এবং তোমার সুন্দর সাজানো এ জনপদকে রক্ষা করো।

তাসনীম মাহমুদ

পঠিত : ৩৬৮ বার

মন্তব্য: ০