Alapon

রিপাবলিক অফ জংলা ওয়াদিয়ায় যেভাবে এক মাসে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লো...


এক.
সময়টা তখন বেশ খারাপ যাচ্ছিল। যাকে বলে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি। চারিদিকে প্রচণ্ড ভয়ের আবহাওয়া। যেখানে সেখানে মানুষ মরছে করোনাভাইরাসে। ছেলে-বুড়ো, বউ-ঝি-শ্বাশুড়ী কেউই রেহাই পাচ্ছে না। ইতালি, গীতালি, স্পেন-ফ্রান্স-জার্মানি সবারই একেবারে উষ্টুম ধুষ্টুম অবস্থা।

রোগী হাসপাতালে ঢুকছে, শুচ্ছে, ওষুধ নিচ্ছে, খাচ্ছে, মরছে। মাঝে দিয়ে ডাক্তার-নার্স-ওয়ার্ড বয়রা ইনফেক্টেড হচ্ছে।
ব্যাংকার স্লিপ লিখছে, চেক হাতাচ্ছে, ক্যাশ লেনদেন করছে, ইনফেক্টেড হচ্ছে।
ঘুষ খেতে গিয়ে অফিসার, ঘুষ দিতে গিয়ে ক্লায়েন্ট ইনফেক্টেড হচ্ছে। চা খেতে গিয়ে চা-খোর, বিড়ি খেতে গিয়ে বিড়িখোর ইনফেক্টেড হচ্ছে, ওয়াজ করতে গিয়ে হুজুর ইনফেক্টেড হচ্ছে, নামায পড়তে গিয়ে মুসল্লি ইনফেক্টেড হচ্ছে, সে এক কেলেঙ্কারি অবস্থা।

এভাবে চলতে চলতে কিছুদিনের মাথায় দেখা গেল বড় বড় রাষ্ট্রের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে তথ্যমন্ত্রী, মেথর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, রাজরানী থেকে চাকরানী সবাইকে করোনায় ধরে বসলো। কেউ সুস্থ হলো, কেউ হল না। সাত বছর বয়সের বাচ্চার আমাশয় হলে যেভাবে মলের সাথে আম পড়ে, সেভাবে ঝরে যেতে লাগলো বহু প্রাণ!!

কিন্তু একটা রাষ্ট্রে করোনা সুবিধা করতে পারলো না। নাম তার রিপাবলিক অফ জংলা ওয়াদিয়া।

দুই.
জংলা ওয়াদিয়ার প্রথম ও প্রধান সমস্যা ছিল, দেশের মন্ত্রীদের বিচিহীনতা। বিচিহীনতা সেখানে এত বেশি ছিল যে প্রধানমন্ত্রীর নিজেরই বিচি ছিল না। কি ভয়ংকর একটা ব্যাপার!!!
বিচিহীনতার কারনে প্রায়শই তারা বিভিন্ন জরুরী ব্যাপারে সাহস করে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারতেন না, লেজেগোবর পাকিয়ে ফেলতেন। অনেকক্ষেত্রে যেকোন ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার সময় বিচি হাতড়ে আর দশটা দেশের মন্ত্রীরা যে আত্মবিশ্বাসটা খুজে নেন, জংলা ওয়াদিয়ার অধিকাংশ মন্ত্রীরা তা পেতেন না। তাই তাদের বারবার দ্বারস্থ হতে হত গুটিকয়েক এমন মন্ত্রীদের কাছে, যাদের বিচি ছিল। তাদের সবার যে একজোড়া আস্ত বিচি ছিল তাও নয়। তবে একজনের ছিল, তিনি ছিলেন ওয়াদিয়ার হরেক দণ্ডমুন্ডের হর্তাকর্তা, উপপ্রধানমন্ত্রী ছোদায়ভুল পাদের চৌধুরী।
আস্ত একজোড়া বিচি থাকায় তার চোটপাটও ছিল অন্যরকম। হার্টের রোগী হবার পরেও নানান উত্তেজক কাজ কামে তার কোন খামতি ছিল না। প্রায়ই বিভিন্ন সুন্দরীদের সাথে খাটের ওপর মিছিল মিটিং করার ব্যাপারে পাদের সাহেবের পাদনাম থুক্কু বদনাম ছিল।

দুঃখজনকভাবে এত এত মন্ত্রী থাকতে শেষে এই বিচিওয়ালা উপপ্রধানমন্ত্রী পাদের চৌধুরীকেই কিনা শেষে করোনা ভাইরাসে ধরে বসলো।

ওয়াদিয়ার সরকার আগে থেকেই ডিসিশানে ছিল, আর যাই হোক, করোনা যদি ঢুকেও পড়ে, ব্যাপারটা স্বীকার করা যাবে না। পাদের সাহেবের করোনা আক্রান্ত হবার পরেও তাই ব্যাপারটা চেপে যাওয়া হল, মূলত তিনি নিজেই চেপে গেলেন।

রাজনীতিবিদদের স্বভাব হল, যে ফল তারা নিজে খেতে পারেন না, তা অন্যদেরও খেতে দেন না। ছোদায়ভুল পাদের ভাবলেন, করোনা যেহেতু হয়েছে, তার ওপর হার্টের রোগী, এমনিও মরবো ওমনিও মরবো, তাহলে সবাইকে নিয়েই মরি। আমি মরে গেলে এই বিচিহীন মন্ত্রীসভাটা ক্ষমতার গুড় একাই চাটবে, ওসব হতে দেয়া যাবে না মাইরি!!

তিন.

ছোদায়ভুল পাদের চৌধুরী নিজের করোনা আক্রান্ত হবার কথা কাউকে না জানতে দিয়ে খাটের ওপর মিটিং মিছিল চালিয়ে গেলেন। তিনি এটার নাম ঠিক করলেন, শোয়ারেন্টাইন। শোয়ারেন্টাইন বেশ সিরিয়াস ব্যাপার। শোয়ার সময় সাথে বিশেষ অতিথি না নিলে শোয়ারেন্টাইন হয় না। কোয়ারেন্টাইনের চেয়ে শোয়ারেন্টাইন অনেকটাই সফিস্টিকেটেড ব্যাপারস্যাপার।
তার এসব শোয়ারেন্টাইন মিটিং মিছিলের প্রধান অতিথি হিসেবে হাজিরা দিতে আসতেন বিভিন্ন হটকেক সুন্দরীরা।

কোয়ারেনটাইনে না গিয়ে শোয়ারেন্টাইনে যাওয়াটা ছোদায়ভুল পাদেরের কাছে কোন ভুলই মনে হল না। তিনি মনের আনন্দে প্রায় দু সপ্তাহ শোয়ারেন্টাইনে থাকার পর তার মধ্যে করোনার বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করলো। ততদিনে যা ক্ষতি করার তিনি করে ফেলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী জেনে ফেলায় জনাব পাদের এবার আর কিছু লুকোতেও পারলেন না। শোয়ারেন্টাইন থেকে তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হল। রিপাবলিক অফ জংলা ওয়াদিয়ায় পাদের চৌধুরীর খোশনসীবী হালত ফুরিয়ে এল।

প্রধানমন্ত্রী ভাবলেন, বাহ, কমের মধ্যেই আটকানো গেল!! প্রথম রোগী ধরা পড়ার সাথে সাথে আইসোলেট করা মানে বিরাট ব্যাপার।

তবে এখানেই তিনি থেমে গেলেন না। মন্ত্রীসভার সব মন্ত্রী সহ পুরো পার্লামেন্টকে তিনি কোয়ারেন্টাইনে পাঠালেন। দু সপ্তাহ শেষে দেখা গেল, কারোই করোনা হয় নি।
এরমধ্যে সারা ওয়াদিয়া লকডাউন করা হল। কারফিউ টারফিউ দিয়ে একেবারে সারা দেশের লোকের বিচি লক করে দেয়া হল।
১৪ দিন পর দেখা গেল দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

চার.

শোয়ারেন্টাইনে থেকে ছোদায়ভুল পাদেরের সাথে খাটের ওপরের মিটিং মিছিলে অংশগ্রহন করা সুন্দরীদের অনেকে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার পাদেরিয়া কোরামের নেত্রী। পাদের সাহেবের মাধ্যমে প্রথমে তারা আক্রান্ত হলেন, তারপর তাদের দ্বারা আক্রান্ত হলেন পাদেরিয়া কোরামের নেতারা। সেই নেতাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হলেন রিপাবলিক অফ জংলা ওয়াদিয়ার গার্মেন্টস কর্মীরা।
তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হলেন রিকশাওয়ালা, সিএনজি ও বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা। তাদের অনেকের মাধ্যমে আক্রান্ত হলেন কাজের বুয়ারা।
তারপর আর কি লাগে??

এক মাসের মধ্যে মহামারী আকারে রিপাবলিক অফ জংলা ওয়াদিয়ায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লো।

পঠিত : ৮৭৪ বার

মন্তব্য: ০