Alapon

মানুষের কল্যাণাকাংখা নিয়ে এ লেখা.

ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা মুছে দেয়ার যে নিয়ম অধুনা চালু হয়েছে তা কি সঠিক?। জ্বর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেও ছিল। তিনি কি করতেন? মুসলিম চিকিৎসকগনকে একটু জেনে নিলে ভালো নয়কি?

ইতিহাস এবং হাদিসগুলো (যাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে জ্বরের চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো রয়েছে) অধ্যয়ন করলে দেখা যায় – সাহাবীগন জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতেন অথবা ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে রোগীর কপালে তা ধরে রাখতেন। কিন্তু ভেজা কাপড় দিয়ে তারা শরীর মাসেহ করতেন এমন কোনো প্রমাণ ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায়না।

চিকিৎসা শাস্ত্রও এমনটাই সাপোর্ট করার কথা। কারন, জ্বর মানেই শরীর তথা জীবনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন দুবল, রোগীর Resistance power কম ।
এসময়ে ঐ পদ্ধতি বা ব্যবস্থাপত্রই সবাধিক উপযোগী যা রোগীকে শারীরিক, মানসিক আরাম দেবে এবং রোগীর Immune System কে কর্মক্ষম করবে।

এসময়ে যদি রোগীর শরীর বিশেষ করে পৃষ্ঠদেশ পানির স্পর্শে আসে তাহলে সে শীতে কাপতে থাকে, প্রচন্ড রকম কষ্টও অনুভব করে, জীবনীশক্তিও দুবল হয়ে আসে। আমি নিজে এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। একবার জ্বরে আক্রান্ত আমার এক ৯ বছরের আত্বীয়কে নিয়ে ঢাকার একটি ক্লিনিকে গেলাম। ডাক্তার প্রথমেই তার শরীর থেকে জামা খুলে ঠান্ডা পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তার সমস্ত শরীর মুছে দিলেন। রোগীর কষ্টের চিত্রটি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা। সে চিৎকার করে কাদছিলো। তার চিৎকারে আশ পাশের কেবিন থেকে লোকজন ছুটে এলো।

আমি এ পদ্ধতির বিরোধী ছিলাম, কিন্তু কিছু করার ছিলনা। ডাক্তারের কাছে এসেছি, তিনি যা করেন তা রোগীর কল্যাণার্থেই করেন, সুতরাং মুখ বুজে সহ্য করতেই হবে।

পরে এ বিষয়টি নিয়ে আমি আরও কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে মত বিনিময় করেছি। তারা বলেছেন, গা মুছে দেয়ার এ ব্যবস্থাপত্রটি রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি এমন হয় – রোগী অনেক দিন যাবত গোসল না করার কারনে অস্বস্থি বোধ করছে, ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার গা মুছে দিলে ভাল লাগবে, আরাম পাবে, কেবল তখনই তার গা মুছে দেয়া যেতে পারে।

কয়েকজন সৌদি এবং মিসরী আলেমকেও এ পদ্ধতিটির ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, তারা রাসুলুল্লাহর (সা) এ নির্দেশনার প্রয়োগ কিভাবে করতেন। তারা একবাক্যে উত্তর দিয়েছেন: জ্বর হলেই তাদের পিতৃপুরুষকে তারা মাথায় পানি ঢালতে দেখতেন, যতক্ষণনা জ্বরের প্রকোপ কমে আসে। কিন্ত প্রথমেই ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দেয়ার বিধান কিভাবে চালু হলো তা বোধগম্য নয়।

পরিশেষ:
‘ডাক্তার’ – এর পজিসনে পৌছতে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে কতটা পড়াশোনা করতে হয়, তা কারোরই অজানা নয়। জ্ঞান ও গবেষণা, চিকিৎসা ও মানব সেবার একটা দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন যে, এ শিক্ষার্থীর হাতে এখন চিকিৎসা সেবার দায়ীত্বটি অর্পন করা নিরাপদ, তখনই তাকে এ সার্টিফিকেটটি প্রদান করা হয়। দায়ীত্বের পরিধি এবং গুরুত্বের কারনে ডাক্তারগন সমাজের প্রথম শ্রেণীরও নাগরিক। বলা হয়: রোগীদের জীবন তরীর বৈঠা অনেক সময় ডাক্তারগন বেয়ে থাকেন। (যতক্ষণ না আল্লাহর ফয়সালা এসে পৌছে)।
তাই বলছিলাম, মানবজাতীর এমনিতরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জ্ঞান বিদ্যার সাথে যদি অহীর আলোও যুক্ত হতো তাহলে কতইনা উত্তম হয়।

পঠিত : ৯০২ বার

মন্তব্য: ০