Alapon

মানবতার মুক্তির আন্দোলন 'ইসলামী রেনেসাঁ'


বর্তমান চাকচিক্যময় এই রঙিন দুনিয়ার বাহ্যিক দিক যতই রঙিন হোক না কেন এর ভেতর যে সম্পূর্ণরূপে ফাপা হয়ে গিয়েছে সে বিষয়ে কেউই সন্দিহান নন। আজকের দুনিয়া যেই ফিলোসোফিকাল বেইসমেন্টের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে, সেই দর্শনের রাস্তাই এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এনলাইটেনমেন্ট যুগের ফিলোসোফিকাল ভিত্তিকে আকড়ে ধরেই আজকের দুনিয়া বর্তমান সময় পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। কিন্তু পূর্বের ইউরোপীয় রেনেসার ছিল এই ফিলোসোফির অনুপ্রেরণাদানকারী। ইউরোপের চার্চের একরোখা মনোভাবের বিপরীতে ইউরোপীয় রেনেসার মাধ্যমে পাশ্চাত্য সভ্যতার দর্শনের গোড়াপত্তন হয়েছিল।
"চার্চের কথা ছিল- দুনিয়ার সকল কিছুই হচ্ছে ঈশ্বর কেন্দ্রিক অন্যদিকে ফিলোসোফারদের কথা ছিল দুনিয়ার সকল কিছুই মানুষ কেন্দ্রিক।
চার্চের কথা ছিল জ্ঞান হচ্ছে বাইবেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাই জ্ঞান অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন নেই এবং ক্যাথলিক চার্চ সদা সর্বদা সঠিক। সোজা কথায় চার্চ সকল মানদন্ডের মাপকাঠি। এর বিপরীতে পাশ্চাত্য ফিলোসোফারদের কথা ছিল জ্ঞান অর্জিত হবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে এবং সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে বাধ্য"।
অল্প কথায় এই চিন্তাই পরবর্তীতে ইউরোপকে এক ভিন্ন গঠন প্রদান করে।


‘মানুষই সত্য, মানুষের দ্বারা সকল কিছু সম্ভব। এখানে মূল শক্তি হচ্ছে বিজ্ঞান’। এর উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব, এরকম উদ্ভট একটি যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মানব সভ্যতার সামনে এমন এক চিন্তার উদ্ভব ঘটাতে সক্ষম হয়েছে পাশ্চাত্যের ফিলোসোফররা যেখানের মূল কথাই হচ্ছে নৈতিকতাকে কখনো প্রশ্রয় দেয় যাবে না।
ফলে সৃষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে ইউরোপের পরবর্তী শিল্প বিপ্লবের দরূণ যে শ্রেণী বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছিল তা বর্ণনাতীত। একই সাথে নিজের দেশের ও নিজ জাতির মানুষের উপরই যে অকথ্য নির্যাতন চালানো সম্ভব এবং চুরি-ডাকাতি, প্রতারণা, অত্যাচার ও নিষ্পেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল সম্পদ লুট করা যে নিজেদের অধিকার এরকম চিন্তা পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রের দ্বারা সম্ভব হয়েছিল মানুষ স্বর্বস্ব নৈতিকতাবিহীন এই ফিলোসোফির কারণেই।


বুর্জোয়া শ্রেণীয় এবং সর্বহারা শ্রেণী নামে যে দুই শ্রেণীর উৎপত্তি হয়েছিল তা বলা যায় মানবতাকে হত্যা করেছিল। মহিলা এবং শিশুদের দ্বারা অমানুষিক পরিশ্রম মনুষত্যকে হার মানিয়েছিল। শিল্প বিপ্লব যেখানে মানব সভ্যতার জন্য আশীর্বাদ হওয়ার কথা ছিল এর পরিবর্তে তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিষ্পেষনের এক অস্বাভাবিক যন্ত্র।
ফলশ্রুতিতে মার্ক্সের চিন্তা সর্বহারা শ্রেনীকে উজ্জীবিত করে তোলে। কিন্তু কমিউনিজমও তার সর্বোচ্চ চূড়ায় থাকার সময় মনুষত্যকে খুইয়ে বসেছিল।


ইউরোপের এই দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে জার্মান দার্শনিকগণ খ্রিষ্টবাদের মারাত্মক প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলাফল স্বরূপ jena romanticism এর আবির্ভাব হয়। পরবর্তীতে তা শুধুমাত্র german romanticism এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের মূল কথা ছিল- “বর্তমান সময়ে মানবতা এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর তা থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে খ্রিস্টান রেনেসাঁ। অর্থাৎ পুনরায় মানুষকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা, এক নতুন খ্রিস্টীয় পুনর্জাগরণের সূচনা করা”।

এই প্রভাব এখনো বিদ্যমান। আমরা বর্তমান সময়ে ভাবি যে, ইউরোপ হচ্ছে সেক্যুলার চিন্তায় লালিত। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই কি সেক্যুলার কিনা তা আমরা খোজ নেয়ার চেষ্টা করি না। আমরা ইউরোপের সেই চিন্তায় লালিত হয়ে মুসলিম বিশ্বে সেগুলো প্রয়োগ করার চিন্তায় ব্যস্ত।
যে জার্মানী হচ্ছে পাশ্চাত্য সভ্যতার ফিলোসোফির সূতিকাগার সেই জার্মানীই jena romanticism এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আছে প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময়।
সেক্যুলার জার্মান সরকার প্রতি বছর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক চার্চে কেন প্রায় বিলিয়ন ডলারের মতো অনুদান দেয় তা কেউ আলোচনা করে না। কেন ফ্রান্স তার সকল চার্চকে আজও পেট্রোনাইজ করে সেসম্পর্কে কেউ চিন্তা করতে আগ্রহী নয়। প্রত্যেকটি ইউরোপীয় দেশে খোজ নেন একই চিত্র পাবেন। ফ্রান্সের একটি চার্চ আগুনে পুড়ে গেলে পুরো পাশ্চাত্য এর শোকে আক্রান্ত হয়। এসবের কারণ কী একবারও ভাবায় না??


এতো গেল ইউরোপের ইতিহাস। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইউরোপে যে বিজ্ঞান ও চার্চের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, ইসলামী সভ্যতায় কী কখনো বিজ্ঞানকে সেভাবে দেখা হয়েছে??
ইসলামী সভ্যতায় কখনোই এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নি। মুসলিম বিজ্ঞানীদের কর্মসমূহ তখন প্রস্ফুটিত হয়েছিল যখন ইসলামী সভ্যতা একদম উচ্চ শিখরে অবস্থান করছিল। ঠিক তখনই ইবনে সিনা, আল বাত্তানি ইসমাঈলী, গিয়াসউদ্দিন জামশেদ তাদের উত্থান হয়েছিল।


ইসলামী সভ্যতায় কখনো বুর্জোয়া শ্রেণীর উদ্ভব হয় নি, কখনো সর্বহারা শ্রেনীর আবির্ভাব হয় নি যেটি ইউরোপে হয়েছে। কেননা ওদের ফিলোসোফিকাল ভিত্তিই হচ্ছে নৈতিকতা বিহীন স্বার্থকেন্দ্রিক একটি চিন্তাধারা যেখানে ইসলামের ফিলোসোফি হচ্ছে ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা।।
ইসলামী সভ্যতা সকল কিছু উপরে আখলাককে অগ্রাধিকার দেয়, মানুষের হক্বকে অগ্রাধিকার দেয়, মানুষের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়।
আমাদের ফিলোসোফি আমাদেরকে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, বিশ্বে ন্যায়ভিত্তিক একটি ব্যবস্থা তৈরির জন্য সর্বাত্মক জিহাদ তথা সংগ্রামের নির্দেশনা দেয়। এখানে প্রত্যেকে অপরের জন্য বাঁচে, স্বার্থ নয় বরং অন্যের অধিকার প্রদানে উদ্গ্রীব থাকে।

ইসলামী সভ্যতায় আখলাকের স্থান সকলের উর্ধ্বে। আজকে ইউরোপ সেই আখলাকে দিকে ঝুকতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তারপরও সে সক্ষম হচ্ছে না। অথচ মুসলিমরা সাইকোলোজিকাল দিক থেকে এবং আখলাকী দিক থেকে তাদের থেকে অনেক এগিয়ে।।

এখন প্রশ্ন উঠে যে মুসলিমরা আখলাকী দিক থেকে এগিয়ে কীভাবে???
উত্তর হচ্ছে- মুসলিমরা তাত্ত্বিকভাবে পাশ্চাত্য থেকে আলোকবর্ষ এগিয়ে আছে। কিন্তু প্রায়োগিকভাবে আমরা আলোকবর্ষ পিছিয়ে আছি।
যদি কোন জাতি কিংবা গোষ্ঠী যদি মানব সভ্যতায় অবদান রাখতে চায় কিংবা উপমা সৃষ্টিকারী কোন সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে সেই জাতিকে আখলাকের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হতে হবে।
এক কথায় বড় কোন রাষ্ট্র কিংবা সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করার পূর্ব শর্ত হল আখলাক।।

উসমানী সালতানাতের বিখ্যাত ঐতিহাসিক দুরসুন বেয় তার লিখিত বই Târîh-i Ebü’l-Feth (তারিখ- ই- আবুল ফাতহ) নামক গ্রন্থে বলেন- “আমরা রাষ্ট্র হিসেবে ও জাতি হিসেবে এমন এক সময়ে বসবাস করছি। যেই সময়ে আমরা আখলাকী দিক থেকে অনেক উচ্চে অবস্থান করছি। আমাদের সমাজের মানুষ আজ উচ্চ আখলাকের অধিকারী। ............... আল্লাহ মানুষের ভাগ্যকে এমন একটি জাতির হাতে তুলে দিবেন না তো কাদের হাতে তুলে দিবেন”??

এসব হচ্ছে ইতিহাস!!! ইতিহাস প্রেরণার উৎস, ইতিহাস উজ্জীবণের সুঘ্রাণ দেয়, সঞ্জীবনী শক্তি প্রদান করে। কিন্তু ভবিষ্যৎ হচ্ছে বর্তমানের কর্মফলস্বরূপ।

বর্তমানে পাশ্চাত্যের তথাকথিত শ্রেষ্ঠ জাতিসমূহের যে পরাজয় চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করছি আমরা এতে মুসলিমদের খুশী হওয়াটা নিতান্তই হতাশাজনক। কারণ তখন প্রশ্ন উঠে, দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ সভ্যতা উপহার দেয়া একটি জাতি হিসেবে আমরা কেন এই পৃথিবীর দায়িত্ব নিতে সক্ষম হচ্ছি না??

কারণ একটাই, আমাদের মুসলিমদের অবহেলা। আজকে নতুন এক রেনেসাঁর প্রয়োজন। বিশ্ব আজ ইসলামী রেনেসাঁর জন্য অপেক্ষমান।
ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা তার the end of the history বইয়ে আইডিওলজিকাল দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর ইতিহাসের শেষ দেখে ফেলেছেন। তার দৃষ্টিতে লিবারেলিজম হচ্ছে বর্তমান দুনিয়ার সর্বশেষ আদর্শ এরপরে নতুন কোন চিন্তার উদ্ভব হবে না।
একই সাথে অধিকাংশ পাশ্চাত্য ফিলোসোফার ইসলামকে তাদের চিন্তাধারার প্রধান শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে সকল ধর্মের মানুষই পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়েছে কিন্তু মুসলিমরা হচ্ছে একমাত্র জাতি যারা কিনা পাশ্চাত্য চিন্তাধারাকে এখনো পর্যন্ত মেনে নেয় নি। এই ক্রান্তিকালে এসেও পাশ্চাত্যের তুলনায় তারা নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ দাবী করে। তাই তাদের সকল শক্তি ছিল ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার।
আমাদের বাংলার ইতিহাসই দেখুন।। পাশ্চাত্য সভ্যতার গোড়াপত্তনকারী কান্ডারী ইংরেজদেরকে পুরো ভারতবর্ষ মেনে নিয়েছিল কিন্তু মুসলিমরা রক্ত দিয়েছে তারপরও ওদেরকে মেনে নেয় নি। চিন্তাগত দিক বলেন অথবা সরাসরি যুদ্ধ বলেন সকল ক্ষেত্রে পুরোদমে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, টিপু সুলতান, আল্লামা ইকবাল উনারা হচ্ছেন জ্বলন্ত উদাহরণ। পুরো ২০০ বছরের শাসনামলে অধিকাংশ সময়ই ইংরেজরা কাটিয়েছে মুসলিমদের বিদ্রোহ দমন করতে।

ইসলাম ও মুসলিমদের এই একক সত্ত্বা তারা অনুধাবন করতে পেরেছিল বিধায় বিংশ শতাব্দীতে এসে একাডেমিক ভাষা পরিবর্তন করে দিয়েছে।
আমরাও তাদের শেখানো বুলি আওড়িয়ে সেক্যুলার, লিবারেল ও কমিউনিস্ট চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি।
আমাদের সভ্যতা কখনো যে সমস্যা প্রত্যক্ষ করেনি আমরা আজ সেটা নিয়ে উদ্বেলিত হচ্ছি। ইউরোপে যেখানে চার্চ মানুষের স্বর্বস্ব নিয়ন্ত্রণ করতো তার বিপরীতে সেখান থেকে যেসকল চিন্তার উদ্ভব হয়েছে আমরা সেসকল চিন্তাকে মুসলিম সমাজে প্রয়োগের চিন্তা করছি। অথচ ইসলামী সভ্যতার দিকে চোখ বুলালে দেখবে মুসলিম সমাজ মানুষের অধিকারকে সর্বোচ্চে স্থান দিয়েছে।

ইমামে আযম আবু হানিফার যেকারণে সকলের কাছে সমাদৃত এবং তার চিন্তাধারা আজও যেকারণে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য তার কারণ হচ্ছে তার বিখ্যাত সেই দার্শনিক উক্তি।
তিনি বলেছিলেন- ইসলামের দৃষ্টিতে “প্রত্যেক মানুষ মর্যাদাশীল, কারণ সে মানুষ”। তাই তাকে সকল অধিকার দিতে রাষ্ট্র বাধ্য।
ইমাম গাজ্জালী শরিয়তের সংজ্ঞায় বলেছিলেন- মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা, বংশ রক্ষার স্বাধীনতা, মাল রক্ষার স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষার স্বাধীনতাই হচ্ছে শরীয়ত।

এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে আমাদের ভারত উপমহাদেশ। দীর্ঘ ৫ শত বছর শাসন করেছিল যে ইসলামী সভ্যতা তাদের মূলনীতি ছিল উপরোক্ত বিষয়সমূহ। সেকারণেই ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলিম একত্রে বাস করেছিল। এখানে যদি ইউরোপের চিন্তায় লালিত কোন মানবতা বিবর্জিত ফিলোসোফিকাল চিন্তা থাকতো থাকতো তাহলে ভিন্ন ধর্মের রক্তে ভারতবর্ষ ভেসে যেত।
কিন্তু মুসলিম চিন্তা এখানে অল্প পরিমাণে প্রস্ফুটিত ছিল বলেই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ইমাম আযম ও ইমাম গাজ্জালীর কথা সেক্যুলার কোন চিন্তাভাবনা নয় বরং এটি হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের মূলনীতি। মুসলিমরা জিহাদ করে এসকল বিষয় বিশ্বে প্রতিষ্ঠার জন্যই।
আল্লাহর সার্বভৌমত্বে কেন দাবী করে ইসলামী রাষ্ট্র?? কারণ আল্লাহর সার্বভৌমত্বে সকলের অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে বাধ্য ইসলামী রাষ্ট্র। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা তো আবশ্য কর্তব্য বরঞ্চ সামান্য কুকুরও যেন তৃষ্ণায় মারা না যায় অর্থাৎ পশুও যেন তার অধিকারটুকু পায় সেটিও নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আজ লিবারেল ও সেক্যুলার চিন্তায় ভাসমান কচুরিপানার মতো কিছু বুদ্ধিজীবীগণ পাশ্চাত্যের কিছু চমকপ্রদ বয়ানে মোহিত হয়ে আছেন, অথচ নিজেদের ইতিহাস, নিজেদের মূলনীতি সম্পর্কে বেখবর এই কচুরিপানার দল যদি একটু চোখ বুলাতো নিজেদের ইতিহাসের দিকে তাহলে ওদেরকে এই বুদ্ধিবৃত্তিক দৈনতায় ভুগতে হতো না।

বর্তমান সময়ে মানবতা আখলাকী দিক থেকে অন্তঃসার শূন্য হয়ে পড়েছে। মানুষ নিজেকে স্বাধীন ভাবছে কিন্তু স্বাধীনতা নামক সপ্নীল এক তারের বেড়াজালে সে পরাধীন হয়ে আছে। মানুষকে আজ বিশ্বাস করানো হয়েছে সে স্বাধীন কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সে সিস্টেমের হাতে বন্দী এবং সামান্য একজন ক্রীড়নক। সিস্টেমের কাছে তার কোন মুল্যই নেই। স্বাধীনতার মেকি আশ্বাসে পরাধীন জিন্দেগী কাটাচ্ছে। আখলাকের চূড়ান্ত অধঃপতনে নিপতিত হয়ে আছে।

এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামী রেনেসাঁ।
কেননা ইসলাম চিন্তাগত দিক দিয়ে মানুষকে স্বাধীনতা দেয়। ইতিহাস এর সাক্ষী। ইমামে আযমের সাথে নাস্তিকের তর্ক সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। সেই সমাজের চিন্তাগত স্বাধীনতার ঈংগিত এই সামান্য ঘটনা থেকেই পাওয়া যায়।
ইসলামী রাষ্ট্র তথা শরীয়তের মূলনীতির প্রথম শর্ত হচ্ছে- আখলাক ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়ে একটি সমাজ সৃষ্টি করা।
রাষ্ট্রের পরবর্তী শর্ত হচ্ছে আদালত। এরপর সে মানুষের হক্ব প্রদান করতে বাধ্য। হক্ব বলতে সকল ধরণের অধিকার(মানুষ হিসেবে একজন মানুষ বস্তুগত ও চিন্তাগত দিক দিয়ে যেসকল অধিকার ভোগ করে সকল অধিকার, যেমন ধর্ম, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি)। এরপরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে।

ইসলাম আখলাকী জিনিসকে সবার প্রথমে কেন জোর দেয়?? কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে ইনসাফ তথা আদালত প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে এই রাষ্ট্রই যখন আখলাককে প্রাধান্য দেয় তখন ইহসান এসে যুক্ত হয়।
যা একটি সমাজকে সুন্দর করে তুলে, মানুষের মানবিকতাকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গে নিয়ে যায়।

বর্তমান দুনিয়ার মানুষ মুক্তির জন্য আজ হাপিত্যেশ করছে এবং ইসলামী সভ্যতার পুনর্জাগরণই পারে মানুষকে তার স্বকীয় অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে। আখলাক ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়ে তৈরী ইসলামী রাষ্ট্রই পারে মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে। এর জন্য প্রয়োজন বুদ্ধিবৃত্তিক, আখলাকী ও আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং সেই জাগরণের পুর্ণরূপ ইসলামী রাষ্ট্র তথা ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।

পঠিত : ৮০৫ বার

মন্তব্য: ০