Alapon

শিল্প-সাহিত্যে জনরুচিকে প্রাধান্য দেয়া রুচিহীনতারই পরিচয়!


প্রকৃত শিল্পী তিনিই যিনি জনরুচিকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসেন। জনরুচিকে নিজের মহত্তর রুচির আদলে গড়ে তোলেন।

তিনি খুবই নিম্নমানের শিল্পী যিনি জনরুচির দিকে নেমে যান। প্রকৃত অর্থে তিনি আর শিল্পীই থাকেন না। বাজারের দালাল হয়ে যান।

শুধুমাত্র জনরুচিকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই জনপ্রিয়ধারার ফিল্মগুলো নেংটা হয়ে গেছে। নায়িকারা যখন হাটুর উপরে কাপড় তুলেছে জনগণ লাফিয়ে পড়েছে, তারপর জনরুচিকে আরো তাতাতে গিয়ে নায়িকারা নেংটা পর্যন্ত হয়ে গেছে। ফিল্মের এই ছায়া পড়েছে অনেক সাহিত্যে, সংবাদপত্রে। পোশাকে না হলেও বিষয়ে অনেকে নেংটা হয়েছে।

জনরুচিকে যারা প্রাধান্য দিতে চান তাদের প্রথম প্রশ্ন, এটা মানুষ খাবে? আমি এক সময় টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতাম। আমাকে বহুবার এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কোনো একটা গল্প শোনালেই ডিরেক্টরা বলতো, এটা মানুষ খাবে?

মানুষ খাবে কিনা এটা আমি বলবো কী করে! আর মানুষ খাবে কিনা সেটা নিয়ে আমি কেন ভাববো! তবে, নাটক করতে গেলে এ প্রশ্নের উত্তরটা দিতেই হয়। নাটক চালায় মার্কেটিংয়ের লোকজন। নাটক তাদের কাছে একটা পণ্যমাত্র। এই পুঁজিবাদের যুগে সমস্ত শিল্প-সাহিত্যই অবশ্য পণ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু, পুঁজি যদি শিল্পকেও নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সেটা আর শিল্প থাকে না, পণ্যই হয়।

পণ্য বস্তুগত প্রয়োজন মেটায়। শিল্পের প্রয়োজন লোকোত্তর প্রয়োজন মেটানোর জন্য। এই নিরর্থক জীবনকে যে সার্থক করে তোলে তার নাম শিল্প। বস্তুগত প্রয়োজনের বাহারি আয়োজন দেখে বুঝতে পারি মানুষ আর আজকাল জীবনকে তেমন নিরর্থক মনে করে না। নিরর্থক মনে করে না কারণ মৃুত্যু নিয়ে সে তেমন ভাবে না। পুঁজিবাদের কী দারুণ ম্যাজিক, সে আমাদের মৃত্যুভাবনাও ভুলিয়ে দিয়েছে। মৃত্যুভাবনা থেকে দূরে সরে আসার কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা হয়েছে তা হচ্ছে আমরা প্রেম থেকে দূরে সরে গেছি। যার ভিতর মৃত্যুবোধ নাই তার ভিতরে শিল্পবোধও থাকবে না। প্রেম-মৃত্যু-শিল্প বড় সমার্থক।

যে দেশে মৃত্যু আছে, প্রায় পোকামাকড়ের মতো, কিন্তু, মৃত্যুবোধ নেই দার্শনিক বোধের; সে দেশে প্রেম থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। যে দেশে প্রেম থাকবে না সে দেশে শিল্প আসবে কোত্থেকে! শিল্প কি আর গাছে ধরে!

@Ahsan

পঠিত : ৩৩০ বার

মন্তব্য: ০