Alapon

নিজের বিশ্বাসের উপর ভরসা রাখতে গিয়ে, ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন না তো?


১৯৯৬ সালের ঘটনা। তখন হজ্জ চলছিল। হজ্জ চলার সময় মিনা এলাকায় হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। ধীরে ধীরে আগুনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশ হাজীদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার অনুরোধ করতে থাকে।

কিন্তু একজন হাজী পুলিশের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে। তিনি হাজীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার বলতে থাকেন, ‘ভাইসকল, আমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে মিনায় উপস্থিত হয়েছি। আপনারা আল্লাহর মেহমান। আপনারা সূরা ইউনুস পড়ুন। দেখবেন, আগুন আপনাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না।’

কিন্তু এরপর আগুনের তিব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মানুষ তাঁবু ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু সেই হাজী পুনরায় বলতে শুরু করেন, ‘আপনারা কেউ স্থান ত্যাগ করবেন না। আপনারা আল্লাহর মেহমান। আগুন আপনাদের কিছুই করতে পারবে না।’

পরের দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেই আগুনে প্রায় সব তাঁবু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই হাজীর কথা শুনে সেখানে অবস্থান করলে- কী ঘটতো অনুমান করতে পারছেন?

(ঘটনাসূত্র: মুফতি ইসমাইল মেনক- এর লেকচার থেকে সংগৃহিত)

দ্বিতীয় আর একটা ঘটনা বলি। নাসা যখন ঘোষণা দেয়, তারা চাঁদে মানুষ পাঠাবে, তখন একদল মানুষ নাসাকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। তারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নিজেদের মত ব্যাখ্যা করে বলে, ‘কুরআনের ভ্যাষ্যনুসারে মানুষের পক্ষে চাঁদে যাওয়া সম্ভব নয়। আর যদি মানুষ চাঁদে পৌঁছাতে সক্ষম হয় তাহলে কুরআন মিথ্যা হয়ে যাবে।’

অনেক আলেম উপরোক্ত বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলেও, আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিই চাঁদে মানুষ যেতে পারে, তখন কী হবে? কেউ নিজের মত করে কুরআন ব্যাখ্যা করে, কুরআন সত্য না মিথ্যা এই চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রাখে না। আর কুরআনে এমন কোনোও কথা বলা হয়নি যে, মানুষ চাঁদে যেতে পারবে না।’

তবে তৎক্ষনাত বেশ কিছু আলেম আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী সাহেবের সমালোচনা করেন। কেউ কেউ তাঁকে ব্যক্তিগতভাবেও আক্রমন করেন। কিন্তু কিছুদিন পর যখন মানুষ সত্যিই সত্যিই চাঁদে গেল, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভীই ইসলামের প্রতি সুবিচার করেছেন। আর বাদ বাকিরা অতি আবেগ দেখাতে গিয়ে ইসলামেরই সর্বনাশ ঘটাতে যাচ্ছিলেন।

(ঘটনাসূত্র: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)

করোনা ভাইরাসের এই সময়ে যখন জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে, তখন আশ্চর্যজনকভাবে মসজিদগুলোতে নামাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতি ওয়াক্ত নামাজেই এমনকি ফজরের নামাজেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নামাজির উপস্থিতি পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে। অথচ আলেমদের মতানসুারে এই সময়টা ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম। এমনকি আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী সাহেবও মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্তু কতিপয় নামাজি বলছেন, ‘আল্লাহ ভরসা। আল্লাহর ঘর মসজিদে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাবে না। আর আল্লাহ যদি চান তবে আক্রান্ত হবো। এসব নিয়ে এতো ভাবনার কিছু নেই। তাকদিরে থাকলে আর কী করা যাবে!’

সেই তাকদিরের উপর ভরসা করেই ভারতে তাবলীগের মারকাজে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে। ইতোমধ্যে তাবলীগের প্রায় ৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও অনেক।

তাকদিরে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে। সাথে উটের দড়িটাও কোমরে বেঁধে রাখতে হবে। আর এটা আল্লাহর রাসূল নিজেই বলেছেন।

তাকদিরে যখন এতোই বিশ্বাস, তখন নিজের বাচ্চাকে খেলার জন্য হাতে ধারালো ছুরি দেন না কেন? বাচ্চারা আগুন নিয়ে খেলতে চাইলে, নিষেধ করেন কেন? তাকদিরে থাকলে দূর্ঘটনা ঘটবে! অতএব এটা নিয়া চিন্তার কিছু নেই। তাই না?

পঠিত : ৪৫৮ বার

মন্তব্য: ০