Alapon

সময়ের সংজ্ঞা

আপনার জীবন সায়াহ্নে আপনি মালাকুল মাওতকে একশো ট্রিলিয়ন ডলার (যদিও এসুযোগও আপনাকে দেয়া হবেনা) দিতে চাইলেও সে আপনাকে এক সেকেন্ড সময় দেবেনা।
একথাগুলোই কুরআন কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বার বার মানুষকে বুঝিয়েছেন। বান্দার চেতনা উদয়ের জন্য তার অন্তিম সময়ের চিত্র মিছাল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে,
(মৃত্যুর সময়টি উপস্থিত হলে বান্দা কাকুতি মিনতি করে বলবে):

‘হে আমার রব, যদি তুমি আমাকে অনুগ্রহ করে আর কিছু সময় অবকাশ দিতে তাহলে আমি অবশ্যই তোমার পথে দান সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম’। (সুরা আল মুনাফিকুন ১০)

ইমাম রাযি (রাহিমাহুল্লাহ) মানুষের আয়ু তথা সময়ের এই বিষয়টি বোঝাবার জন্য একজন মনীষীর উক্তি উল্লেখ করতেন: “একজন বরফ বিক্রেতার কাছ থেকে আমি ‘সময়’ এর মুল্য অনুধাবন করতে পেরেছি। সে বাজারে দাড়িয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে উচ্চস্বরে বলছিল: দয়া কর ঐ ব্যক্তির প্রতি যার মূলধন গলে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনুগ্রহ কর ঐ ব্যক্তির প্রতি যার পুজি ফুরিয়ে যাচ্ছে”।
অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চাইতেন: মানুষের আয়ু হচ্ছে ঠিক বরফের মতো। যা প্রতিনিয়ত গলে গলে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটাকে যদি অপচয় করা বা ভুল পথে ব্যয় করা হয় তাহলে এর চেয়ে বড়ো ক্ষতি আর কিছু হতে পারেনা।

প্রখ্যাত মুফাসসির আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন জারির আত তাবারীর এক ছাত্র লিখেছেন: ‘আমি জারির আত তাবারীর ইন্ততেকালের সময় তার নিকট ছিলাম। তিনি অসুস্থতায় কাতরাচ্ছিলেন, এরই মধ্যে তিনি কাগজ কলম চাইলেন। একজন বললো: জনাব ! আপনার এই কঠিন মুহুর্তেও আপনি লিখতে বসলেন? তাবারী জওয়াব দিলেন: বৎস, প্রতিটি মানুষের কর্তব্য হলো: মৃত্যুর অন্তিম মুহুর্তেও মানবজাতীকে জ্ঞানের কথাগুলো জানিয়ে যাওয়া”।
হাসান আল বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন: ‘হে আদম সন্তান, তোমার জীবনের সবটাই হচ্ছে হাতে গোণা কয়েকটি দিন মাত্র। অতএব একটি দিন চলে যাওয়ার অর্থ কি তা বুঝে নাও’।

শাইখ আলী ইবনু আকিল আল হাম্বলী আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন: ‘রান্না ঘরে রুটির কাই বানানোর সময়ও আমি জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকি। খাবার মুখে রেখে চিবানোর সময়ও আমি কিছু না কিছু সামনে রেখে পড়তাম’।

ইবনুল কাইয়েম (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন: ‘মানুষের জীবনের আসল সম্পদ হলো সময়। তার আখিরাত নির্ভর করে এর ব্যবহারের উপর’।

সময়ের সদ্ববহারের ব্যাপারে হাদিসের ভান্ডারগুলোতে যে সমস্ত কথা রয়েছে তা উপলব্ধি করলেও একজন মানুষের চেতনা উদ্রেকের জন্য তা যথেষ্ট হওয়ার কথা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “দু’টি নিয়ামাতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ গাফেল। তার একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য এবং অপরটি অবসর সময়” (বুখারী ১১/১৯৬)

অতএব সময়ের মানে হচ্ছে আপনার জীবন। জীবন শেষ তো সময়ও সমাপ্ত। সুতরাং সময়কে ভাল কাজে লাগান। ভুলে যাবেন না:

যে ব্যক্তি বা দল কোন পথভ্রষ্টকারী চিন্তা বা কর্মনীতির ভিত রচনা করে সে কেবল নিজের পথভ্রষ্টতার জন্য দায়ী হয়না বরং দুনিয়ায় যতগুলো মানুষ তার দ্বারা প্রভাবিত হয় তাদের সকলের গুনাহের একটি অংশও তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকে। যতদিন তার এ গুনাহের প্রভাব বিস্তৃত হয় ততদিন তার আমলনামায় গুনাহ লিখিত হতে থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির নেকী বা গুনাহের দায় দায়িত্ব কেবল তার নিজের উপরই বর্তায়না বরং অন্যান্য লোকদের জীবনে তার নেকী ও গুনাহের কি প্রভাব পড়ে সেজন্যও তাকে জওয়াবদিহী করতে হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন ভাল ও কল্যাণকর কর্মের ভিত রচনা করে সে এর উত্তম প্রতিদান পাবে। অত:পর এ কর্ম যারাই করবে বা তার অনুসরণকারী হবে তাদের আমলনামা থেকেও সে পুণ্য পাবে এবং এজন্য অনুসরণকারীদের আমলনামায় কোন ঘাটতি হবেনা। অনুরুপভাবে যে ব্যক্তি কোন পথভ্রষ্টকারী বা অনিষ্টকর কাজের সুচনা করবে সে এর প্রতিফল পাবে। অত:পর যারা তার দেখানো পথে চলবে তাদের আমলনামা থেকেও পাপের একটি অংশ সে পাবে কিন্তু অনুসরণকারীদের শাস্তির কোন কমতি হবেনা। (মুসলিম। বর্ণনাকারী: জারির ইবনু আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু)।

বুদ্ধি বিবেক বলছে, এ যুগে ফেইসবুকও হতে পারে অনেকের নাজাতের উসিলা বা নেকী অর্জনের মাধ্যম, যদি এর ভালো কথাগুলো অন্যদেরকে শেয়ার করা হয়।

পঠিত : ৫৭৭ বার

মন্তব্য: ০