Alapon

তাবলীগের বিরুদ্ধে বলে, মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন না তো?


আমাদের অনেকেই বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া দিল্লীর নিযামুদ্দিনের তাবলীগের ইজতেমা নিয়ে লিখে যাচ্ছি। কোন চিন্তা-বিবেচনা ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছি। মন্তব্য করছি, পোষ্ট বানিয়ে শেয়ার করছি, নানা প্রশ্নবাণে তাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছি। কখনও কি ভেবে দেখেছি যে, এটার মাধ্যমে ভারতীয় মুসলমানদের বিপদকে ঘনীভূত করে দিচ্ছি। মূল ঘটনা বিবেচনায় নেবার জন নিচের কথা গুলো একটু বিবেচনায় নিন

- ১৩ ই ই মার্চ, ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য, করোনা ভাইরাস তেমন ভয়ানক কিছু নয়

- ১৩ ই মার্চ, নিযামুদ্দীন মারকাজে ৪ হাজার মুসল্লি নিয়ে তাবলীগ ইজতেমা শুরু হয়

- ১৫ ই মার্চ, নিযামুদ্দীন মারকাজ সফল ভাবে সম্পন্ন হয়।

- ১৬ ই মার্চ, গো-মূত্র খেলে করোনা কমবে, এটা প্রচারে হিন্দু মহাসভার বিশাল সমাবেশ

- ১৬ ই মার্চ, দিল্লী সরকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়। কেজরীওয়ালে এই নির্দেশ লিখিত ভাবে সর্বত্র পৌছায় নি। কেননা কেন্দ্রীয় সরকার তার নিয়ন্ত্রণে নয়।

- ১৭ ই মার্চ, তিরুপতি মন্দিরে চল্লিশ হাজার তীর্থ যাত্রী অংশ নেয়

- ১৮ ই মার্চ, আটাশ হাজারের অধিক তীর্থ যাত্রী নতুন করে যোগ দেয়

- ১৯ ই মার্চ, বিকাল পর্যন্ত বিয়াল্লিশ হাজারের অধিক তীর্থ যাত্রী আরো যোগ দেয়। তাই

- ১৯ শে মার্চ, প্রধানমন্ত্রী মোদী জনতা কারফিউ জারি করেন এবং এই মন্দির সহ অন্যান্য মন্দির বন্ধ হয়

- ২২ শে মার্চ, জনতা কারফিউ জারী ও করোনা বিদায়ের লক্ষ্যে ঢোল, তবলা, কাসা নিয়ে মোদী ভক্তদের দলে দলে রাস্তায় র‌্যালী

- ২৩ শে মার্চ, মুম্বাইতে হাজার হাজার শ্রমিকের বাড়ী ফিরার লক্ষ্যে মহা জনজটের সৃষ্টি

- ২৫ শে মার্চ, সারা দেশে লক ডাউন জারি, লক ডাউন ভাঙ্গলের ইউপির মুখ্য মন্ত্রী

- ২৫ শে মার্চ, মূখ্য মন্ত্রী যোগী আদিত্য-নাথ রাম লালার মূর্তি নিয়ে সারা শহর প্রদক্ষিণ করলেন

- ৩০ শে মার্চ, বড় শহর গুলো হতে সতের থেকে আটার লক্ষ মানুষের বাড়ী ফিরার মহা যজ্ঞের সূচনা হয়

- ৩০ শে মার্চ, এসব রোধে সরকারের কোন প্রস্তুতি ছিলনা, ফলে পঁচিশ জন শ্রমিক মারা গেলেন

- ৩০ শে মার্চ, পাঁচ শত তীর্থ যাত্রী পথে আটা পড়ে

- ৩০ শে মার্চ, দিল্লীর রাস্তায় পঞ্চাশ হাজার শ্রমিক তখনও আটকে থাকে

- ৩০ শে মার্চ, তাবলীগ করে এমন পাঁচ সদস্যের করোনায় মৃত্যু

- এর পর থেকে মোদী মিডিয়ার সাংবাদিকেরা তাবলীগের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায় যে, ভারতে করোনা বিস্তার তাবলীগের কারণেই শুরু হয়েছে।

উপরের চিত্রটি হুবহু কলকাতা টিভির সংবাদ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

সুপ্রিয় পাঠক আপনারাই বিবেচনা করুন ভারতের ঘটনায় তাবলীগ জামায়াত কতটুকু দায়ী ছিল। সরকারের দুর্বলতা গুলো কারসাজি করে অন্যের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশেও প্রবাসীদের মাথার উপর ব্যাপারটি তুলে দিয়েছে। যাই হোক, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের সবার কর্তব্য হল এই সমস্যা মোকাবেলা করা, সরকারের হাতকে সক্রিয় রেখে সহযোগিতা করা এবং বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগানো। ব্যক্তি জীবনে আমাদের অনেকের কাছে হয়ত তাবলীগের কর্মকাণ্ড পছন্দ নয়। সেটা ভিন্ন ব্যাপার, ওরা সবাই মুসলমান। তাছাড়া পছন্দ অপছন্দের সময় এটা নয়। আমাদের একটি ভুল স্বীকৃতি ভারতের মুসলমানদের জন্য সমস্যাকে আরো গুরুতর করে তুলবে।

তাছাড়া কোন কথা শোনা মাত্র যাচাই বাছাই না করে প্রকাশ-প্রচার করা বড় গুনাহের কাজ। আল্লাহ এমন কাজকে ঘৃণা করে। শুধু তাবলীগের ক্ষেত্রে কেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। সরকারকে ফাঁদে ফেলার জন্য কিংবা কিছু লাইক পাবার লোভে ভুল তথ্য দিয়ে, মানুষকে আতঙ্কিত করা, বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত করে তোলা হারাম, ভয়ানক গুনাহ, সামাজিক অপরাধ ও রাষ্ট্রীয় বিধির লঙ্ঘন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন।

@Tipu

পঠিত : ৪৭১ বার

মন্তব্য: ০