Alapon

আমরা যেন মুহাম্মদ সা. থেকে বেশি মুমিন না হয়ে পড়ি



খন্দকের যুদ্ধের সময়ের কথা। মুশরিকদের সম্মিলিত বাহিনী ধেয়ে আসছে। এদিকে মুনাফিকরা মদিনায় ঝামেলা সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় রাসূল সা. এবং তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগীদের অবস্থা বেগতিক। সালমান ফারসির পরামর্শে রাসূল সা. পারস্যের অগ্নিপূজকদের একটি যুদ্ধকৌশল গ্রহণ করলেন। সিদ্ধান্ত হলো পরিখা খনন করে মদিনা রক্ষা করার চেষ্টা করা হবে। সবাই কাজে নেমে পড়লো।

এর মধ্যে রাসূল সা. সবাইকে দিনের বেলা সব কাজ বাদ দিয়ে শুধু পরিখা খননের কাজে নিয়োজিত থাকতে বললেন। সাহাবারা খাবার-দাবার বাদ দিয়ে সারাদিন কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে যোহরের সময় ফুরিয়ে যাওয়ার সময় হলো। কয়েকজন সাহাবা রাসূল সা.-কে নামাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আল্লাহর রাসূল সা. তাদের বললেন নামাজ পরে হবে সূর্যের আলো যতক্ষণ আছে ততক্ষণ কাজে লাগাতে হবে। শত্রুরা পরিখা খননের আগেই চলে আসলে মদিনা রক্ষা করা যাবে না।

এভাবে আসর ও মাগরিবের সময়ও পার হয়ে গেল। যখন আর কাজ করা যাচ্ছিল না তখন রাসূল সা. কাজ বন্ধ করে নামাজ ও খাবার খেলেন। এর মধ্যে কিছু সাহাবা রাসূল সা. কে জানালেন তারা সূর্য অস্ত যাওয়ার একটু আগে কোনমতে যোহর-আসর পড়েছেন। রাসূল বিরক্ত হলেন এবং বললেন আল্লাহর শপথ আমি আদায় করতে পারিনি। তোমরা কী করে তা করলে?

অতঃপর ঐ সাহাবারা পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারলেন এবং পরবর্তীতে খনন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা চার ওয়াক্ত নামাজ একসাথে পড়েছেন।

একবার এক লোক রাসূল সা.-এর কাছে এসে জানালেন তিনি মাসের প্রতিটি দিন রোজা রাখেন এবং সারা রাত নামাজ পড়েন। রাসূল তাঁর প্রতি খুশি হননি। রাসূল সা. বলেন, আমি রোজা রাখি এবং রোজা ছেড়ে দিই। আমি রাতে ঘুমাই এবং নামাজ পড়ি।
আরেকটি ঘটনা, এক অভিযানে রাসূল সা. কাফেলার সবাই রোজা ভাঙতে বললেন। কেউ কেউ রোজা ভাঙলেন না। আল্লাহর রাসূল সা. তাদের তিরস্কার করলেন।

আমি এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, আমরা যেন নবী মুহাম্মদ সা.-এর চাইতেও বেশি ঈমানদার না হয়ে পড়ি। যারা রাসূলের চাইতেও বেশি ঈমানদারি দেখাবে তাদের পরিণাম ভালো হয় না। একসময় তারা মনে করতে থাকবে, রাসূল সা. নিজেই কমজোর ঈমানদার, বেইনসাফি। আউযুবিল্লাহ। এ টাইপের লোকের উদাহরণও রাসূলের সময়ে আছে।

একবার রাসূল সা. কিছু গনিমতের মাল বন্টন করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে বললো, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন। ইনসাফ করুন। রাসূল সা. খুবই বিরক্ত হলেন এবং বললেন, আমিই যদি নাফারমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রাসূলের নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। কিন্তু নবী‎ সা. তাকে নিষেধ করলেন। অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নবী‎ সা. বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন হতে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক হতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে (মুসলিমদেরকে) হত্যা করবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা হতে বাদ দেবে। আমি যদি তাদের পেতাম তাহলে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম।

যাই হোক, মহামারী চলছে। একে ঠেকানোর জন্য যেভাবে চেষ্টা করা উচিত সেভাবে হচ্ছে না। বেশ কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জালিম সরকার যেমন সমস্যা সমাধানে আগে উদ্যোগ গ্রহণ করে নি, এখন সব লেজেগোবরে এক করে ফেলছে। তেমনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরাও (আমি তাদের আলেম বলতে চাই না) সমস্যা সৃষ্টি করছে।

এসব ব্যক্তিত্বরা নিজেদের মনে হয় আল্লাহর রাসূলের চাইতেও বেশি ঈমানদার মনে করেন। রাসূল সা. মহামারী থেকে সেভাবে বাঁচার জন্য বলেছেন যেভাবে নেকড়ে থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করা হয়। অথচ তারা এখনো মাহফিল, সমাবেশ, জামায়াতে নামাজ চালু রেখেছেন। যদিও আমি মুহাম্মদ বিন সালমানের জুলুমের কট্টর সমালোচক। তবে আমি তাঁর প্রশংসা করি তিনি মহামারী ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছেন। শুধু মক্কায় ওমরা চালু রাখলে সারা মুসলিম বিশ্বে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তো ব্যাপকহারে। তিনি সেটা যথাসময়ে বন্ধ করেছেন। এদিকে ওমরা বন্ধ থাকলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইজতেমা ও দাওয়াত চালু রেখে মহামারির বিস্তার চালিয়ে যাচ্ছে তাবলীগ জামায়াত।

আবার আমাদের দেশে এখনো জামায়াতে নামাজ চালু আছে। অথচ চালু থাকার কথা হাসপাতাল। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা আজব কথা বলছে মসজিদে নামাজ পড়লে নাকি করোনা ছড়াবে না। ইমানদার লোকদের নাকি ভাইরাস আক্রান্ত করবে না। অথচ আমাদের দেশেই টোলারবাগ মসজিদে নামাজ পড়া তিন ব্যক্তি সংক্রমিত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। মসজিদে সিজদাহ করতে হয় এবং এই ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বিধায় মসজিদে সংক্রমণের হার বেশি। অথচ তারা আজব আজব জাহেলি বাকওয়াজ করে চলেছেন।

যদি মুমিনদের মহামারী নাই ধরবে তবে কেন মহানবী সা. আক্রান্ত এরিয়াকে লকডাউন করতে বলেছেন? কেন বলেছেন আক্রান্ত এরিয়া থেকে দূরে থাকতে। কেন বলেছেন মহামারিতে মৃত ঈমানদার ব্যক্তি শহীদরূপে গণ্য হবেন? যারা বলে মুমিন মুসলিমদের মহামারী আক্রান্ত করবে না তারা আলেম হওয়ার সামান্য যোগ্যতাও রাখেন না। হযরত ওমরের শাসনামলে ইসলামী রাষ্ট্রে মহামারী দেখা দিয়েছিলো। অনেক সাহাবী মৃত্যবরণও করেছিলেন।

অতএব মহামারি শুরু হলে রাসূল সা.-এর নির্দেশনা অনুসারে মহামারি ঠেকানোর কাজ করতে হবে। মহামারি ছড়িয়ে দেওয়া হত্যার মতো জঘণ্য অপরাধের শামিল। অতএব যেসব কাজে মহামারি ছড়াতে পারে এমন কোনো কাজ কোনো মুসলিম করতে পারে না। যদি করে তবে সে নিজেকে রাসূল সা.-এর চাইতেও বেশি তাকওয়াবান, বেশি তাওয়াককুলকারী, বেশি ঈমানদার মনে করেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন। মহামারি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যেন রাসূল সা.-এর চাইতে বেশি মুমিন না হয়ে পড়ি।

পঠিত : ৪৯৫ বার

মন্তব্য: ০