Alapon

আল্লাহ কি আসলেই প্রচন্ড রাগী...?


ছোটবেলা থেকেই ‘আল্লাহ’ নামটি শুনলেই একটা ভয় কাজ করতো। কারণ, এই নামটি দ্বারা জীবনে যতটা ভয় দেখানো হয়েছে, অন্য কোনো নাম দিয়ে দেখানো হয়নি।

ছোটবেলায় যখন বিদ্যুৎ চলে গেলে, আব্বা চুলার পাড়ে বসিয়ে নামাজের সুরা মুখস্ত করাতেন তখন বলতেন, ‘এগুলো শিখতে হবে, নামাজও পড়তে হবে। তা না হলে আল্লাহ পাপ দিবেন এবং আগুনে নিক্ষেপ করবেন।’

তারপর খেলতে গিয়ে কারও সাথে ঝগড়া হলে আম্মা বলতেন, ‘ঝগড়া করা খুব খারাপ। আল্লাহ খুবই অপছন্দ করেন। এ কারণে আল্লাহ কিন্তু তোমাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।’

ছোটবেলায় সমস্ত অপরাধের শাস্তি স্বরূপ আল্লাহর ভয় দেখানো হতো। আর এভাবেই ‘আল্লাহ’ নামটি শুনলেই আমার মনে ভীতি কাজ করতো। মনে হতো আল্লাহ যেন খুবই রাগী কেউ! যিনি সারাক্ষণ রাগে গজগজ করেন। কেউ অপরাধ করলে বা অন্যায় করলে আল্লাহ রাগে আগুন হয়ে যান। তারপর মানুষ মরে গেলে আল্লাহ সেই আগুনে মানুষকে নিক্ষেপ করেন। কেউ তাঁর হাত থেকে নিস্তার পাবে না।

কিন্তু আল্লাহ কি আসলেই প্রচন্ড রাগী?

এই প্রশ্নে উত্তর বলার আগে একটা ঘটনা বলি। একবার যুদ্ধের ময়দানে একটি বাচ্চা শিশু হারিয়ে যায়। আর সেই শিশুর মা যুদ্ধের ময়দানে পাগলের মত সন্তানকে খুঁজতে থাকে। সে হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় নিজের সন্তানকে পেয়েও যায়। সন্তানকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্তনের সাথে চেপে ধরে দুধ খাওয়াতে থাকে।

আর এই দৃশ্যটি আল্লাহর রাসূল তাঁর সাহাবাদের নিয়ে অবলোকন করছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আচ্ছা বলতো দেখি, এই মা কি তার নিজের সন্তানকে কখনো আগুনে নিক্ষেপ করতে পারবে? উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন, কক্ষনো পারবে না।
তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘এই মা তার সন্তানকে যতটা ভালোবাসে ও মহব্বত করে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভালোবাসেন এবং মহব্বত করেন।’

আর আল্লাহ নিজের ব্যাপারে নবী সা. কে দিয়ে বলিয়েছেন, ‘আমার রহমত, করুণা ও দয়া সব সময় আমার রাগ বা ক্রোধের তুলনায় বেশি।’ ( মুসলিম- ৬৭১৬)

এবার প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম সুফিয়ান আস সাওরী রহ.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। তিনি মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তে সকলকে ডেকে বললেন, ‘আজ আমি ভীষণ খুশি। কারণ, রোজ হাশরের দিন আমার জন্মদাত্রী মা বা বাবা আমার বিচার করবেন না। বিচার করবেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আর আমি আমার মা-বাবার মমতার তুলনায় মহান আল্লাহপাকের রহমতের প্রতি অনেক বেশি আস্থাশীল।’

রাসূল সা. আল্লাহর করুনা ও দয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ মহান আল্লাহ তাঁর করুণাধারাকে শতভাগে বিভক্ত করেছেন। সেই রহমতের মাত্র একভাগ তিনি পৃথিবীতে দিয়েছেন।’ (বুখারী ৬০০০)

আল্লাহর রাসূল আরও বলেছেন, ‘যদি কাফেরও আল্লাহর রহমতের পরিমাণ জানত, তাহলে সেও জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠত।’ (মুসলিম ৬৭২৬)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রচন্ড রাগী নয়, বরঞ্জ মমতাপূর্ণ মহান মালিক। আর মানুষের একান্ত আপন বলতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নেই। আসুন, ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহপাক আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমিন।

পঠিত : ৪৯৯ বার

মন্তব্য: ০