Alapon

মহামারি নিয়ে রাসূল সা.-এর বক্তব্য কী?



মহামারি, সংক্রামক রোগ নিয়ে প্রচুর কনফিউশন তৈরি হচ্ছে। আমরা যদি শুধু বুখারিতে বর্ণিত হাদিসগুলো দেখে নিই তাহলে কনফিউশন দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। একইসাথে আমরা জানতে পারবো এই রাসূল সা.-এর বক্তব্য কী?

//সংক্রামক রোগ কী নেই?//
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রোগের মধ্যে কোন সংক্রমণ নেই, সফর মাসের মধ্যে অকল্যাণের কিছু নেই এবং পেঁচার মধ্যে কোন অশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাহলে যে উট পাল মরুভূমিতে থাকে, হরিণের মত তা সুস্থ ও সবল থাকে। উটের পালে একটি চর্মরোগওয়ালা উট মিশে সবগুলোকে চর্মরোগগ্রস্ত করে দেয়? রসূলুল্লাহ বললেনঃ তবে প্রথম উটটির মধ্যে কীভাবে এ রোগ সংক্রামিত হল? (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৫)

এই হাদীস প্রসঙ্গে অনেক আলেম বলতে চান, আল্লাহর রাসূল সা. মুশরিকদের পরিবেশে জন্ম নেন। এখানের মানুষরা কাউকে শক্তি মনে করলেই তার পূজা শুরু করে। আপনারা খেয়াল করেছেন মুশরিকদের কেন্দ্রস্থল ভারতে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে গণ্য করে পূজা করেছেন কেউ কেউ। মক্কায় জাহেলি যুগে মানুষ মনে করতো কিছু কিছু রোগ বিশেষত মহামারি ঘটায় এমন রোগের তার নিজস্ব ক্ষমতা আছে। তারা যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেয়, যেই জনপদকে ধ্বংস করতে চায় সেই জনপদে গমন করে ও ধ্বংস করে। তারা মনে করতো রোগ নিজেই সংক্রামিত হয়। তাই তারা রোগের পূজা করতো। সে সময় বিজ্ঞানের অগ্রগতি এখনকার মতো না হওয়ায় রোগের বাহক সম্পর্কে ধারণা ছিল না। আল্লাহর রাসূল সা. সংক্রামক রোগ বিষয়ে জাহেলী এই ভুল ধারণার অপনোদন করেন। তিনি বুঝাতে চান রোগের নিজস্ব সংক্রামন ক্ষমতা নেই।

তবে এই হাদীস নিয়ে বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা নিজেই কনফিউজড। এই হাদীসকে খণ্ডন করে আরেকটি হাদীস পাওয়া যায় বুখারিতেই।

আবূ সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ হুরাইরাহ -কে বলতে শুনেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যেন কখনও রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সাথে না রাখে। আর আবূ হুরাইরাহ প্রথম হাদীস অস্বীকার করেন। আমরা বললামঃ আপনি কি لاَ عَدْو‘ىহাদীস বর্ণনা করেননি? তখন তিনি হাবশী ভাষায় কী যেন বললেন। আবূ সালামাহ (রহ.) বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরাহ -কে এ হাদীস ছাড়া আর কোন হাদীস ভুলে যেতে দেখিনি। [৫৭৭৪; মুসলিম ৩৯/৩৩, হাঃ ২২২১, আহমাদ ৯২৭৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৫)

//লকডাউন জরুরি//
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘উমার (রাঃ) সিরিয়া যাবার জন্য বের হলেন। এরপর তিনি ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌছলে তাঁর কাছে খবর এল যে সিরিয়া এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন স্থানে এর বিস্তারের কথা শোন, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করো না; আর যখন এর বিস্তার ঘটে, আর তোমরা সেখানে অবস্থান কর, তাহলে তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার নিয়তে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৬)

//মহামারি শুধু কাফেরদের জন্য নয়, এতে মুমিনরাও আক্রান্ত হতে পারে//
হাফসাহ বিনত সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়াহ্ইয়া কী রোগে মারা গেছে? আমি বললামঃ প্লেগ রোগে। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ রোগে মারা গেলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তা শাহাদাত হিসেবে গণ্য।
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৮)

//সোশ্যাল ডিসট্যান্স জরুরি//
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।
( ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৭)

//মহামারি গজব ও রহমত একইসাথে//
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম ‘আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ ‘আযাব পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারীকবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শহীদের সাওয়াব।
( ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৪৭৪)

পঠিত : ৫৯৮ বার

মন্তব্য: ০