Alapon

কিয়ামতের দিনে বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম কিসের হিসাব নেওয়া হবে?


কিয়ামতের দিনে বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম কিসের হিসাব নেওয়া হবে?

- সলাতের।

হ্যাঁ, কিয়ামতের দিনে বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে সলাতের। যা সমগ্র মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে।

এজন্যই পবিত্র কুরআনে সলাতের কথা এসেছে ৮২ বারের মতো। যা অন্য কোন ইবাদতের ব্যাপারে এতটা আসেনি। এতেই বোঝা যায় সলাতের কত বেশি গুরুত্ব, সলাতের কত বেশি মর্যাদা!

সলাত এর আভিধানিক অর্থ রহমত বা অনুগ্রহ, ক্ষমা প্রার্থনা, দু‘আ, আল্লাহর তাসবীহ করা, আল্লাহর গুণগান করা ইত্যাদি। সলাতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের কে উনার কাছে দয়া, ক্ষমা, সাহায্য চাইতে বলেছেন। বলে দিয়েছেন বিপদে ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে দুআ করতে, উনার যিকির করতে।

পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সূরা আল-বাক্বারাতেই সলাত সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বারবার কথা বলেছেন।

মহান আল্লাহ বলেছেন, "মুত্তাকী ; তারা যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস করে, সলাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে (সৎপথে) ব্যয় করে।" [আয়াত নং-৩]

"আর সলাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং সলাতে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়।" [আয়াত নং-৪৩]

আল্লাহ্ বিপদে ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে উনারর বান্দাদের বলেছেন,

"তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। অবশ্যই তা কঠিন। কিন্তু বিনয়ীদের পক্ষেই তা সম্ভব।" [আয়াত নং-৪৫]

"হে মুমিনেরা তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" [আয়াত নং-১৫৩]

"তোমরা সলাত প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।" [আয়াত নং-১১০]

এছাড়াও আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সলাতে যত্নবান হতে ও মনোযোগের ব্যাপারে অন্য সূরাগুলো তে বলেছেন,

"মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,
যারা নিজেদের সলাতে বিনয়-নম্র। "
[সূরা আল-মু'মিনুন:১-২]

"এবং যারা তাদের সলাতে যত্নবান
তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে।"
[সূরা আল-মা'আরিজ:৩৪-৩৫]

"অতএব দুর্ভোগ সেসব সলাত আদায়কারীদের,
যারা তাদের সলাত সম্বন্ধে বে-খবর;"
[সূরা মাঊন:৪-৫]

কুরআনে সলাত সম্পর্কে আর ও অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। উপরোক্ত কয়েকটি আয়াত ভালভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বান্দার জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সলাতকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তারাই প্রকৃত সফলকাম হবে, আর তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা সঠিক ভাবে সলাত আদায় করেছে এবং সলাত আদায়ের ক্ষেত্রে যথাযথ যত্নবান ছিল। তবে সেইসব সলাত আদায়কারীদের সম্পর্কে ও মহান আল্লাহ্ সতর্ক করে বলেছেন তাদের জন্য দূর্ভোগ রয়েছে ; যারা নিজেদের সলাত সম্পর্কে যথাযথ যত্নবান নয়, মনোযোগী নয়।

আমাদের প্রধান কাজ সলাতকে তাই অতি অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে পড়তে হবে। এ সম্পর্কে ও আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন "...নিশ্চয় সলাত মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।" [সূরা আন-নিসা:১০৩]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার (হক্বুক্বুল্লাহর মধ্যে) যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে তার সলাত। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (সলাত) পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।" [সহিহ, ইবনু মাযাহ হাঃ ১৪২৫]

অন্যান্য কাজ ফেলে রেখে আগে ফরয সলাত সঠিক সময়ে আদায় করার অভ্যাস করা তাই জরুরী। প্রায়ই দেখা যায় অফিসিয়াল কাজ, বিভিন্ন ধরনের স্টাডি, দাওয়াহ এর কাজ, সাংসারিক দায়িত্ব পালন, অনলাইনে অহেতুক সময় কাটানো ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সলাত সঠিক সময়ে পড়তে অলসতা করেন।সলাতের সঠিক সময় চলে গেলে অনেকে সলাত আদায় করেন। হয়তো কখনও যোহরের সময় পেরিয়ে গেলে আসর, আসরের সময় পেরিয়ে গেলে মাগরিব পড়া হয়। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

আবার অনেকে পড়ি, পড়বো এই রকম অলসতা করে সলাত পড়া শুরুই করেন না। আবার অনেককে এমন ও দেখেছি বলেন ফযর পড়তে পারেননি বলে বাকী চার ওয়াক্ত ও পড়েন না। অথচ এটা তো কবীরা গুনাহের কাজ। তাছাড়া কারো জানা নেই কার মৃত্যু কখন হবে।

আমাদের তাই মনে রাখতে হবে সব কাজ পরে আগে আমাদের সলাত। সলাত আদায় করা ও মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এক বিশেষ নিয়ামত, রহমত। যারা সলাত আদায় করতে পারে না তারা বড়-ই দূর্ভাগা, তারা শয়তানের প্ররোচনায় ভ্রান্তির জগতে, অকল্যাণের জগতে বসবাস করছে।

ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটিই তো এই সলাত। তাই সলাত আদায় না করলে কারো ইসলাম কি সঠিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে? বরং সলাত আদায় না করলে আল্লাহর রাগের সম্মুখীন হতে হবে। সৃষ্টি কর্তার আদেশ যদি তাঁর সৃষ্ট জীব না পালন করে তবে তো তিনি রাগ হওয়ার- ই কথা।

আর যার উপর দয়ালু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা রেগে যাবেন তার পরিণতি কি হবে সেটা ভাবতে ও গা শিউরে উঠে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সবাইকে দয়া করুন, ক্ষমা করুন। আমরা যেন তাঁর একান্ত বাধ্য বান্দা হয়ে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সলাত আদায় করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আল্লাহ্ আমাদের সবার জন্য সহজ করুন।

যারা এখন ও সলাত শুরু করেননি অথবা শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারেন না তারা দয়া করে আজ থেকে শুরু করুন ইনশাআল্লাহ্। এই রমাদানে আপনি সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে সলাত আদায় করবেন সেই নিয়্যাত ও করে ফেলুন ইনশাআল্লাহ্। জানেন তো নিয়্যাত বিশুদ্ধ হলে এর ফলাফল ও বিশুদ্ধ হয়।

cltd

পঠিত : ৪১২ বার

মন্তব্য: ০